অতঃপর ছাত্রলীগ নেতার পদত্যাগ (ভিডিও)
সংবাদ বাংলা: চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ের একটি কোচিং সেন্টারের পরিচালক রাশেদ মিয়াকে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিমের চড় মেরেই যাচ্ছেন। চাঁদার দাবিতে ওই কোচিং সেন্টারের পরিচালককে মারধরের ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জিইসি মোড়ের ইউনিএইড নামের ওই কোচিং সেন্টারের পরিচালক রাশেদ মিয়াকে তার কার্যালয়ে মারধরের একটি ভিডিও ঘুরছে ফেইসবুকে। এনিয়ে নানান টালবাহনা শেষে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি।
রাশেদ মিয়া বলছেন, ওই ঘটনার পর গত ১৩ এপ্রিল রনি ও তার সহযোগীরা ফের তাকে মারধর করেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার পাঁচলাইশ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। ভিডিও চিত্রটি গত ১৭ ফেব্রুয়ারির বিকেলের। ওই দিন বিকেল ৫টা ২৬ মিনিট থেকে ৩২ মিনিট পর্যন্ত ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, রাশেদ মিয়া কোচিং সেন্টারে তাঁর কার্যালয়ে বসে আছেন। সেখানে ঢুকে নুরুল আজিম উত্তেজিত হয়ে যান। একপর্যায়ে রাশেদ মিয়ার চুল ধরে টানাহ্যাঁচড়া করতে থাকেন। এরপর চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। ছয় মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, রাশেদ মিয়াকে ১৩টি চড় মারেন নুরুল আজিম। এ সময় হাত জোড় করে ছিলেন রাশেদ মিয়া। নুরুল আজিমের বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার নগরের পাঁচলাইশ থানায় নুরুল আজিমসহ ছাত্রলীগের আরেক কর্মীর নাম উল্লেখ করে অভিযোগটি করেন কোচিং সেন্টারের পরিচালক রাশেদ মিয়া। অভিযোগে অজ্ঞাতপরিচয় আরও সাত থেকে আটজন জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়।
বৃহস্পতিবার পাঁচলাইশ থানায় দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, নুরুল আজিম ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিশন কোচিং সেন্টারে প্রায়ই আসা-যাওয়া করতেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি জিইসি মোড়ে ওই কোচিং সেন্টারে গিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তিনি। না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এরপর ১৩ এপ্রিল নগরের মুরাদপুরের মোহাম্মদপুর এলাকায় রাশেদকে একা পেয়ে মারধর করেন নুরুল আজিম ও ছাত্রলীগ কর্মী নোমান চৌধুরী। এ সময় তাঁরা ২০ লাখ টাকা চাঁদা চান। টাকা নেই জানানো হলে নুরুল আজিমের নির্দেশে নোমান চৌধুরী সুগন্ধা আবাসিক এলাকার বাসায় গিয়ে রাশেদের স্ত্রীর পাসপোর্টসহ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে যান। বাকি টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নুরুল আজিম বলেন, অভিযোগকারী রাশেদ তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার। তাঁকে ব্যবসা করার জন্য সাড়ে নয় লাখ টাকা দিয়েছেন। এই পাওনা টাকা চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে রাশেদ কাহিনি সাজিয়েছেন। পাওনা টাকার জন্য সেদিন গিয়েছিলেন। তবে মামলার বাদী রাশেদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, নুরুল আজিম তাঁর কোনো ব্যবসায়িক অংশীদার নন। চাঁদার জন্যই তাঁকে নুরুল আজিম মারধর করেছেন। প্রমাণ হিসেবে তাঁর কাছে এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আছে।
এর আগে ৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহেদ খান বাদী হয়ে নুরুল আজিমসহ ছাত্রলীগের সাত নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নগরের চকবাজার থানায় ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা করেছিলেন। প্রবেশপত্রের সঙ্গে উন্নয়ন ফি বাবদ পাঁচ হাজার টাকা নেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ২৯ মার্চ বিজ্ঞান কলেজে নুরুল আজিমের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। সেদিন কলেজ কর্তৃপক্ষ ৩১ মার্চ বাড়তি ফি ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেয়। এরপর কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করায় ৩১ মার্চ দুপুরে নুরুল আজিম আবারও ওই কলেজে যান। তখন টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে নুরুল আজিম ও তাঁর কর্মীরা অধ্যক্ষকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের প্যাডে পাঠানো এক বিবৃতিতে ছাত্রলীগনেতা রনি পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, রাশেদের সঙ্গে মিলে তিনি ইউনিএইড নামের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারটি পরিচালনা করতেন। রনির দাবি, চকবাজার থানার সাবেক ওসি আজিজ আহমেদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন নিয়ে রাশেদের বিরোধ হলে দু’টি চেকের মাধ্যমে তিনি রাশেদকে সাড়ে নয় লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন। টাকার জন্য রাশেদের সঙ্গে তার বিরোধ না হলেও গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ইউনিএইড কার্যালয়ে গিয়ে সেখানে এক শিক্ষককে কোচিং ক্লাস করাতে দেখেন। বিষয়টি তিনি রাশেদকে জানান।
পরিদন ১৭ ফেব্রুয়ারি রাশেদ ইউনিএইড কার্যালয়ে গিয়ে আমাকে ‘সেঙ্গুইন প্লাস’ নামে একটি কোচিং সেন্টারের এক শিক্ষককে ভাড়া দেওয়ার কথা জানায়। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে ‘অপ্রীতিকর’ কিছু ঘটনা ঘটলেও নিজেরা আবার মীমাংসা করে ফেলেন বলেও রনি বিবৃতিতে দাবি করেন।
১৩ এপ্রিল রাশেদকে ধরে নিয়ে মারধর করার বিষয়ে রনির ভাষ্য, তার কাছ থেকে নেওয়া ধারের টাকা গত ১০ এপ্রিল রাশেদের ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। ১৩ এপ্রিল রাশেদ তার কাছে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা পরদিন দেওয়ার আশ্বাস দেন। রনির অভিযোগ, কয়েকদিন ধরে রাশেদ নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে বৃহস্পতিবার চকবাজার এলাকার যুবলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া নুরুল মোস্তফা টিনুকে নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন। পরে সেখান থেকে পাঁচলাইশ থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। নিজেদের প্রতিষ্ঠানের বিরোধের বিষয় নিয়ে কিছু রাজনীতিবিদ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বলে রনির অভিযোগ।
ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যে সন্ধ্যায় সংগঠন থেকে পদত্যাগ করার বিষয়টি নিজের ফেইসবুক পেইজে জানান নুরুল আজিম রনি। মহানগর ছাত্রলীগের প্যাডে লেখা অব্যাহতিপত্রটি রনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখেছেন। অব্যাহতিপত্রে রনি উল্লেখ বলেছেন, “পিতা মুজিবুরের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সজ্ঞানে অব্যাহতি নিলাম। একান্ত ব্যক্তিগত কারণে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
“এমতাবস্থায় সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন এবং এ প্রেক্ষিতে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রতি আবেদন করছি।” চিঠির শেষে রনি বলেন, “প্রাণের ছাত্রলীগ ভালো থেকো, স্বকীয়তা নিয়ে লড়াই করার সৎ সাহস রেখো। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।”
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment