অনলাইনে খুচরা বিক্রেতা পৃথিবীর শীর্ষ ধনী!
মোহাম্মদ রেদওয়ান আতিক: এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তিটি হচ্ছেন জেফ বেজোস। তাঁর নীট সম্পদের পরিমান ১১৬ বিলিয়ন ডলার। যা প্রায় ৮৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন ট্ররে আউন্স স্বর্ণের(১ আউন্স= ৩১ দশমিক ২১ গ্রাম ) অথবা ১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ব্যারেল (১ ব্যারেল=১৫৯ লিটার) অপরিশোধিত তেলের সমান। যুক্তরাষ্ট্রের মোট জিডিপির ০ দশমিক ৬২৫ শতাংশ সম্পদ এখন তাঁর। তিনি ধনী হওয়ার দৌড়ে পিছনে ফেলেছেন বিল গেটস (৯০.০০ বিলিয়ন ডলার), ওয়ারেন বাফেটকে (৮৫.০০ বিলিয়ন ডলার)। এই সম্পদের পরিমান শেয়ার স্টকের উপর ভিত্তি করে বাড়ে কমে।
কে এই বেজোস? বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন খুচরা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। একইসঙ্গে অ্যামাজানের বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার। বেজোস আমাজনের ১৬ শতাংশ শেয়ারের মালিক। ১৯৯৪ সালে একটি ওয়াল স্ট্রিট র্ফামের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে থাকা বেজোস চাকরি ছেড়ে দিয়ে ওয়াশিংটনের সিয়াটলে চলে যান। এসময় তিনি একটি ব্যবসা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে তা-ই অ্যামাজন.কম হয়ে ওঠে। আজকের অনলাইন শপিং পদ্ধতির জনক তাকেই বলা যেতে পারে।
অ্যামাজনের সদর দফতর সিয়াটলে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পুজগট সাউন্ডের একটি শহর, জল, পাহাড় এবং চিরহরিৎ বন দ্বারা বেষ্টিত। এছাড়া পার্কল্যান্ডের এক হাজার একর জায়গা রয়েছে। বিশ্বে ওয়াশিংটন স্টেটের বৃহত্তম এই শহরটি পরিচিত অ্যামাজন এবং মাইক্রোসফটের নগরী হিসেবে। এছাড়া সিয়াটেলকে বড় প্রযুক্তি শিল্পের আঁতুড়ঘর বলা হয়। অ্যামাজন একটি আমেরিকান ইলেকট্রনিক কমার্স এবং ক্লাউড কম্পিউটিং কোম্পানি। প্রায় ২৪ বছর আগে ১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই আমাজন প্রতিষ্ঠিত হয়। বেজোস প্রাথমিক ভাবে কোম্পনির নামকরণ করেন কাদ্রাব্রা ইনকর্পোরেশন। পরে নামটি পরিবর্তন করে অ্যামাজন ইনকর্পোরেশন করেন। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, অনেকেই কাদ্রাব্রা উচ্চারণকে কাদাভার বলে ভাবছিলো। কাদ্রাব্রা ডোমেইন এখনো বেজোসের নামেই রয়েছে। কোম্পানিটি ১৯৯৫ সালে অ্যামাজন.কম নামে আত্মপ্রকাশ করে। বেজোস আমাজন নামটি বেছে নেয়ার কারণ হলো- তাঁর স্বপ্ন ও পরিকল্পনা ছিল অনলাইনে বইয়ের সবচেয়ে বড় দোকান হবে পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী অ্যামাজনের মতো।
অ্যামাজন.কম নামে একটি ওয়েবসাইটে অনলাইনে বই বিক্রির মাধ্যমে অ্যামাজন প্রথম ব্যবসা করে। অ্যামাজন তার প্রথম বই বিক্রি করে ডগলাস হফস্টেডারের ফ্লুইড কনসেপ্ট (তরল ধারণা) এবং ক্রিয়েটিভ অ্যানালজিস: কম্পিউটার মডিউল অফ দ্যা ফান্ডামেন্টাল মেক্যানিজম অফ থট, ১৯৯৫ সালের অক্টোবর মাসে।
অ্যামাজন ১৯৯৭ সালের ১৫ মে, তার প্রাথমিক পাবলিক শেয়ার বা স্টক বিক্রি করে নাসডাক স্টক এক্সচেঞ্জে। প্রতি শোয়ারের মূল্য ছিল ১৮ ডলার। অ্যামাজন স্টক প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার আয় করে। ওই সময় বেজোসের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমান দাড়ায় প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার। ২০০১ সালে প্রযুক্তি ব্যবসায় ধসের পরেই তার শেয়ার মূল্য ২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল। পরে একে একে ভিডিও ডাউনলোড/স্ট্রিমিং, এমপি 3 ডাউনলোড/স্ট্রিমিং, অডিওবক্স ডাউনলোড/স্ট্রিমিং, সফটওয়্যার, ভিডিও গেমস, ইলেকট্রনিক্স, পোশাক, আসবাবপত্র, খাদ্য, খেলনা এবং জুয়েলারি বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসার সম্প্রসারণ করে।
কোম্পানিটি ২০০৭ সালে কিন্ডল ইলেকট্রনিক বুক রিডার চালু করে। এটি এখন অ্যামাজনের সবচেয়ে বড় বিক্রয় আইটেম। চার বছর পর, অ্যামাজনের বুক রিডার ‘কিন্ডল ফায়ার’ বাজারে আনে। যেটি অ্যাপল-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। এই আইপ্যাডটি বই প্রেমীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এতে লেখা পরিস্কার ভাবে বুঝা যায়। আলোর প্রতিবন্ধকতা দূর করে অনলাইনে বই পড়তে সাহায্যে করে। জেফ এর ছোটবেলার ইচ্ছা ছিল এ্যরোস্পেস নিয়ে।তিনি ২০১০ সালে ব্লু অরিজিন নামের একটা স্পেস কোম্পানি তৈরী করেন । এটা মানুষকে কম খরচে মহাকাশ ভ্রমণের একটা সুযোগ করে দিচ্ছে। জেফ বেজোস ২০১৩ সালে ওয়াশিংটন পোষ্ট কিনে নেন ২৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে। এটার মাধ্যমে তিনি অনেক পত্রিকার ও নিউজের হেডলাইনে পরিণত হন। আমাজন ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বৃহত্তম খুচরা বিক্রেতা হিসেবে ওয়ালমার্টকে টেক্কা দেয়। অনলাইনে খুচরা বিক্রয় করে অ্যামাজন ২০১৬ সালে ১৩৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল। জেফ এর নতুন প্রজেক্ট হল ‘অ্যামাজন প্রাইম এয়ার’। এর মাধ্যমে তিনি তার পণ্য বিভিন্ন দেশে পাঠাতে ড্রোন ব্যবহার করবেন। যদিও ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিষ্টেশন (এফএএ) তার এ বিষয়টা অনুমোদন করেনি। যদিও জেফ আশাবাদী, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তার এই প্রজেক্টও সফল হবে।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment