আইসিইউর জন্য কান্না
ডিসেম্বর ১৩
১২:০৫
২০২০
সংবাদ বাংলা: গর্ভবতী অবস্থায় করোনা পজিটিভ ছিলেন এক গৃহবধূ। নবজাতক শিশু জন্মের পর নানা সমস্যা দেখা দেয় তার। চিকিৎসক জানান, রক্তে ইনফেকশন শিশুটিকে আইসিইউতে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। স্বজনরা একটি শয্যার জন্য হাসপাতালে হাসপাতালে ছুটতে থাকেন। নিরুপায় হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিন দিনে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ঢাকার শিশু হাসপাতালে শয্যা খালি নেই। সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড ফাঁকা না থাকায় রোগীর জীবন বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ছুটছেন স্বজনরা। ছোটাছুটি করে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা গেলেও গুনতে হচ্ছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। হাসপাতালভেদে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। খবর (সময়ের আলো)
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) একটি শয্যার জন্য রোগীর স্বজনদের কান্নায় আবারও ভারী হয়ে উঠছে হাসপাতালের বারান্দা। মুমূর্ষু রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটছেন স্বজনরা। কোনো হাসপাতালের আইসিইউর একটা শয্যা মিলছে না। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত কম খরচে চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ বেডের জন্য স্বজনরা ছুটছেন। এদিকে রাজধানী ঢাকার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে থাকা আইসিইউ শয্যাও খালি পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েক সপ্তাহ আগেও চিত্র এমন ছিল না। রোগীর তুলনায় ফাঁকা শয্যা সংখ্যা বেশি ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে করোনা ডেডিকেটেড সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট আইসিইউ বেড সংখ্যা ৩২৬টি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকায় থাকা রাজধানী ঢাকার ১৯টি হাসপাতালে বর্তমানে করোনা রোগীদের জন্য ফাঁকা আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র ৫০টি।
করোনা রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে সারা দেশে রয়েছে ৫৬৭টি বেড। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় রয়েছে ২৮৫টি। তার মধ্যে আবার সরকারি হাসপাতালে রয়েছে ১১৩টি এবং বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছে ১৭২টি।
রাজধানী ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ১৬টি বেডের মধ্যে রোগী রয়েছেন ১৫ জন, ফাঁকা আছে মাত্র একটি বেড। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ১৬টি বেডের মধ্যে রোগী আছেন ১৫ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪টি বেডের মধ্যে রোগী আছেন ২০ জন। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে থাকা ১৫টি বেডের মধ্যে রোগী আছেন ১২ জন।
এদিকে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা সংখ্যা শূন্য দেখানো হয়েছে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে থাকা যথাক্রমে ১০, ১০, ৬ ও ১৬ বেডের মধ্যে একটিও ফাঁকা নেই। সব বেডেই রোগী ভর্তি রয়েছেন। অর্থাৎ সরকারি হাসপাতালের ১১৩টি বেডের মধ্যে রোগী আছেন ১০৪ জন, বেড ফাঁকা রয়েছে ৯টি।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থাকা ১০ বেডের সবগুলোতে রোগী রয়েছেন। পুরান ঢাকার আসগর আলী হাসপাতালের ৩১টি বেডের মধ্যে রোগী আছেন ২৪টিতে। স্কয়ার হাসপাতালে থাকা ২৫ বেডের মধ্যে রোগী আছেন ১৫ জন। ইবনে সিনা হাসপাতালের ছয়টি বেডের মধ্যে সবগুলোতে রোগী রয়েছে। ইউনাইটেড হাসপাতালে থাকা ২২টি বেডের মধ্যে রোগী আছে ১৪টিতে। এভার কেয়ার হাসপাতালে থাকা ২০টি বেডের সবগুলোতে রোগী রয়েছে। ইম্পালস হাসপাতালে থাকা ২৫টি বেডের মধ্যে রোগী আছেন ১৪ জন। এএমজেড হাসপাতালের ২১টি বেডে রোগী আছেন ১৬ জন। বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে থাকা ১২ বেডের সবগুলোতে রোগী রয়েছে। অর্থাৎ বেসরকারিভাবে থাকা ১৭২টি বেডের মধ্যে রোগী আছেন ১৩১ জন, বেড ফাঁকা রয়েছে ৪১টি।
অর্থাৎ রাজধানী ঢাকার ১৯টি সরকারি বেসরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে করোনায় আক্রান্ত জটিল রোগীদের জন্য ২৮৫টি বেডের মধ্যে রোগী রয়েছে বর্তমানে ২৩৫ জন, বেড ফাঁকা রয়েছে মাত্র ৫০টি। অথচ গত ২০ নভেম্বরেও শূন্য থাকা বেডের সংখ্যা ছিল ৯৮টি।
অপরদিকে চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ বেড রয়েছে ৪৫টি, তার মধ্যে রোগী ভর্তি আছেন ২৩ জন, বেড শূন্য রয়েছে ২২টি। এ ছাড়া আর সারা দেশে মোট আইসিইউ বেড রয়েছে ৫৬৭টি। তার মধ্যে রোগী ভর্তি আছেন ৩৩৫ জন আর বেড শূন্য রয়েছে ২৩২টি।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment