আপনার শিশুকে বাঁচান
সংবাদ বাংলা: ঢাকার অভিজাত ঘরের একটি মেয়ে, বয়স কতই বা হবে? ১১-১২। যুগের চাহিদা অনুযায়ী তার ও একটা মোবাইল আছে। একদিন মোবাইলে অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা ছেলে কল করলো। দুজন দুজনকে না চিনলেও কথা বাড়তে থাকলো। কয়েকদিন কথার পরেই ছেলেটি আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিল যৌনতার দিকে। দুনিয়ার বেশীরভাগ কিছুই না জানা, বয়ঃসন্ধিকাল ছুঁই ছুঁই মেয়েটি খুব সহজেই পা দিল সেই ফাঁদে। ফোন থেকে সেক্স রিলেটেড ব্যাপারগুলো চলে গেল পিসির স্কাইপে। একটা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে মানসিকভাবে পরিপক্ক হওয়ার অনেক আগেই শিখিয়ে দেয়া হল যৌনতার গোপন ব্যাপারগুলো। এক সময়ে বাচ্চা মেয়েটির অপরিণত মন এগুলো নিতে পারলো না। নার্ভাস ব্রেক ডাউন হয়ে গেল। মেয়েটি কখন ও দিনের পর দিন ঘরে একা বসে থাকে, কখনো বা পাগলের মত চিৎকার করে। কোনদিন এমন হয় পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে দেখে ভয় পায়, আবার অন্যদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপরিচিত লোকদের আহবান জানায় তার সাথে সেক্স করার জন্য। একদিন তার বাবাকেও বলল, তার নগ্ন দেহের নাচ দেখার জন্য, স্কাইপে সে এভাবেই একদিন নেচেছিল।
কি ভাবছেন যে আপনার মেয়ে বা বোনের বয়স মাত্র ৩-৪, আরেকটু বড় হোক তখন সাবধান হবেন? তাহলে দ্বিতীয় গল্পটি পড়ুন। ঢাকারই একটি হাসপাতালের গাইনী বিভাগে এক দম্পতি আসলেন তাদের দেড় বছরের কণ্যা সন্তান নিয়ে। মেয়েটি সন্ধ্যা থেকেই খুব কাঁদছিল, কান্নার বেগ বেড়ে যাচ্ছিল প্রস্রাব করার সময়ে আরো বেশী। মেয়েটির মা খেয়াল করলেন মেয়েটির গোপনাংগ থেকে অল্প রক্ত ঝরছে। ভাবলেন হয়ত কোন পোকা কামড়েছে, তাই হাসপাতালে নিয়ে আসা। ডাক্তাররা পরীক্ষা করেই বুঝলো এটা কোন পোকার কামড়ে হয়নি, its traumatic. যৌনাঙ্গ দিয়ে কিছু প্রবেশ না করালে এরকম হওয়া সম্ভব না। দম্পতিকে জিজ্ঞেস করা হল বাসায় ড্রাইভার বা ছেলে কোন কাজের মানুষ আছে কি না? জানা গেল তেমন কেউ বাসায় থাকে না, বাসায় শুধু মেয়েটির চাচা থাকে। আজ বিকেলে তার কাছে রেখেই তারা একটু বেড়িয়েছিলেন। ফিরেই দেখেন এ অবস্থা। ডাক্তাররা দম্পতিকে আর কিছু না বলে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলেন। এক হিসেবে উপরের মেয়েটির থেকে এই মেয়েটিকে ভাগ্যবান ই বলা যায়, কেননা এই বীভৎস স্মৃতি তার মনে থাকবেনা।
ছেলে বাবুদের বাবা মা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলছেন, তাই না? ভাবছেন ছেলে বাবুদের আবার কিসের যৌন হয়রানির ভয়। Then you are living in a wrong planet. আপনার দ্বিতীয় পৃথিবীতে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। আসলে ছেলে বাবুদের নিয়ে এই নিরাপদ বোধ টাই আসল ভয়। আমাদের সমাজে আমরা মেয়ে বাবুকে যতটা আগলে রাখি এসব ঘটনা হওয়া থেকে, ছেলে বাবুর ক্ষেত্রে ততটাই উদাসীন। একটা ১০ বছরের মেয়েকে বেশীরভাগ বাবা-মাই তাদের কোন পুরুষ আত্মীয় বা ড্রাইভার-কাজের লোকের কাছে একা রেখে যান না বা কোথাও পাঠান না। কিন্তু এই বয়সের একটি ছেলেকে অহরহই এদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। আর এই সুযোগটিই গ্রহন করে পারভার্টেড নরপশুরা। কোন তথ্য-উপাত্ত নেই (এসব ক্ষেত্রে পাওয়াও সম্ভব না), কিন্তু আমার কাছে মনে হয় অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক ছেলেরা, মেয়েদের চেয়ে বেশী যৌন হয়রানির শিকার হয়। ছেলেদের যৌন হয়রানির অনেকগুলো ঘটনা থেকে একটা বলি।
বছর পাঁচেক আগের ঘটনা। ১৫-১৬ বছরের একটা ছেলে আসল আমার কাছে। ছেলে কিন্তু গলার স্বর মেয়েদের মত। কথা বলার ভঙ্গি, হাসি, হাঁটা সবই মেয়েদের মত। কিন্তু শারীরিক গঠন হিজড়াদের মতন নয়, মেলাতে পারছিলাম না। কথা বলে জানা গেল তার বয়স যখন ৮ তখন থেকেই সে ছেলেদের সংগ পছন্দ করে এবং নিজেকে মেয়ে ভাবতেই তার ভাল লাগে। তার এই ভাবনাটা এতটাই বেশী ছিল যে তার মানসিকতা তার শরীরকেও অনেকটা নিয়ন্ত্রন করেছিল। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের যেসকল পরিবর্তন আসে তার কোন কোনটি তার মধ্যে আসে নি, যেমন গলার স্বর। কিন্তু তার এই মেয়েলী মানসিকতা আর ছেলেদের শরীর – এই দ্বৈততা, পারিবারিক-সামাজিকভাবে হেনস্থা এসব কারণে সে বিষণ্ণতায় ভোগা শুরু করে। এ কারনেই সেদিন সে এসেছিল। দীর্ঘক্ষণ কথা বলার পরে সে একসময় বলল, ৮ বছর বয়সে পাশের বাসার এক ভদ্রলোক(!?) তাকে যৌন হয়রানি করে। ব্যাপারটা জোরপূর্বক হলেও পরবর্তীতে সে স্মৃতিটি তার কাছে ভালো স্মৃতি হিসেবেই থাকে এবং সেই থেকে ই তার আজকের সমস্যা শুরু।
তাই যাদের বাসায় ছোট্ট ছেলে মেয়ে আছে তাদেরকে বলি, খেলতে গিয়ে কেটে যাবে বা অন্যদের সাথে মারামারি করে ব্যথা পাবে এর বাইরেও অনেক ভয়ের ব্যাপার আছে এদের জন্য । যৌন হয়রানিকারীরা কোন বয়স, ছেলে বা মেয়ে বোঝে না, তারা শুধু সুযোগ খোঁজে তার পশুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করার। বাচ্চাদেরকে আদর দিন, স্বাধীনতা দিন, কিন্তু সবসময় একটা চোখ এদের দিকে রাখুন। মোবাইলে কার সাথে কথা বলছে মাঝে মাঝে চেক করুন-অন্তত ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত (গুল্লি মারেন প্রাইভেসী, তার নিজস্ব জগত এসব সুশীল কথা-বার্তার), আপনার বাইরে থাকার সময়টাতে মুরুব্বী স্থানীয় বিশেষভাবে মহিলা (ছেলে যেই বয়সেরই হোক না কেন এই ব্যাপারে এদের বিশ্বাস না করাই ভাল, একেবারে নিরুপায় না হলে) কেউ যেন সাথে থাকে সেটা নিশ্চিত করুন। ড্রাইভারদের বা কাজের লোকের কাছে বাচ্চাকে একা কখনো ছাড়বেন না, সে যতই বিশ্বস্ত বা পরিচিত বা পুরোনো হোক না কেন। (সংগৃহীত)
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment