ইফফাতের বহিষ্কারাদেশ তুলে নিল ছাত্রলীগ
সংবাদ বাংলা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ থেকে ইফফাত জাহানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁকে স্বপদে পুনর্বহাল করা হয়েছে। আজ শুক্রবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগে গত মঙ্গলবার গভীর রাতে সুফিয়া কামাল হলের বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা ইফফাতকে অবরুদ্ধ করেন। এ ঘটনায় তাঁকে প্রথমে হল থেকে, পরে ছাত্রলীগ থেকে এবং সবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বহিষ্কারাদেশ দেশের মৌলিক অধিকার ও সংবিধানের পরিপন্থী এবং তাঁকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করাও ঠিক হয়নি বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলা হয়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি নুসরাত জাহান ও নিশীতা ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন। কমিটিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আজ ইফফাতের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করল ছাত্রলীগ। আজ সাইফুর রহমান ও জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ইফফাত সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাই সংগঠন থেকে তাঁর ওপর আরোপিত বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে স্বপদে পুনর্বহাল করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন গণমাধ্যমে বলেন, তদন্ত কমিটিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। তাদের প্রতিবেদনে ইফফাত সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ঘটনার দিন (মঙ্গলবার গভীর রাত) সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীরা অভিযোগ করেন, ইফফাত প্রায়ই ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন চালাতেন। তবে এত দিন ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি। আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় এদিন রাতে বেশ কয়েকজনকে কক্ষে ডেকে চড়-থাপ্পড় দেন ইফফাত। রাতে ছাত্রীদের চিৎকার শুনে সেখানে যান উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী মোর্শেদা খানম। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে মোর্শেদা কক্ষের জানালার কাচে লাথি মারেন। এতে তাঁর পা কেটে যায়। খবর পেয়ে অন্য ছাত্রীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ইফফাতকে মারধর করে তাঁকে আটকে রাখেন। তাঁকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন অনেকে। কেউ কেউ মোর্শেদার কেটে যাওয়া পায়ের ছবি তুলে ও ছাত্রী নির্যাতনের কথা লিখে ফেসবুকে শেয়ার করেন। মোর্শেদা ছাত্রলীগের সুফিয়া কামাল হল শাখার সহসভাপতি। তাঁকে প্রথমে সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল ও পরে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। ছাত্রী নির্যাতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে হলের সামনে বিভিন্ন হলের ছাত্ররা জড়ো হয়ে ইফফাতের বহিষ্কারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। ইফফাতকে বহিষ্কারের দাবিতে হলের ভেতরে ছাত্রীরা ও বাইরে কয়েক হাজার ছাত্র বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী হলে প্রবেশ করলে ছাত্রদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। পরে ইফফাতকে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কথা জানালে ছাত্ররা ফিরে যান।
ঢাবি থেকে বহিষ্কার সংবিধানপরিপন্থী দাবি আওয়ামী লীগের: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগের সভানেত্রী ইফফাত জাহানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বহিষ্কারাদেশ দেশের মৌলিক অধিকার ও সংবিধানের পরিপন্থী। তাঁকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করাও ঠিক হয়নি বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হাছান মাহমুদ। আজ শুক্রবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে হাছান মাহমুদ এ কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগের সভানেত্রীকে যে প্রক্রিয়ায় ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, সেটি সঠিক ছিল না। ছাত্রলীগ তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে আমি মনে করি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’
তদন্ত ছাড়া ইফফাতকে বহিষ্কার করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘একটি ছাত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়া মৌখিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে দেওয়ার মতো ঘোষণা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান দিতে পারে—এটি আমার কল্পনারও বাইরে। এটি দেশের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী, সংবিধানপরিপন্থী, যেটি সমীচীন হয়নি। যে কেউ অপরাধ করলে সেটির তদন্ত হতে হবে। তদন্তের পর শাস্তি হবে। এখানে কোনো তদন্তই করা হয়নি।’
ব্রিফিংয়ে বিএনপির সমালোচনা করে হাছান মাহমুদ বলেন, ৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও টেলিফোনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নির্দেশনা একই সূত্রে গাঁথা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে টেলিফোন করে নির্দেশনা দিয়েছেন কীভাবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে রাজনৈতিকীকরণ করা যায়। একটি অডিও বার্তায় এ কথা শোনা গেছে। আরও বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে, তাদের পেট্রল বাহিনী ঢুকিয়ে দিয়ে এই আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা ছিল।
বিএনপি পরগাছা দলে রূপান্তরিত হয়েছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, অন্যরা যখন আন্দোলন করে, তখন সেটিকে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরে তারা টিকে থাকা চেষ্টা করে। তেল-গ্যাস রক্ষার আন্দোলনে আশ্রয় নিয়ে তারা টিকে থাকার চেষ্টা করেছিল। সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আশ্রয় নিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করে বিএনপি।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment