ঈদ যাত্রা শুরু: এবার ছড়াবে দেশজুড়ে ডেঙ্গু
সংবাদ বাংলা: এ বছর সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, বছরের শুরু থেকে বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত ৩২ হাজার ৩৪০ জন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে আট হাজার ৭০৭ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৩ হাজার ৬১০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন একদিনে এই বছরের সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪২৮ জন। এরমধ্যে ঢাকায় এক হাজার ২৭৫ এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার ১৫৩ জন মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে দুই হাজার ৩৪৮ জন ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা স্বাস্থ্য অধিদফতর ২৩ জন বলে জানালেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ৯০ এর বেশি মৃত্যুর খবর ইতোমধ্যে এসেছে। ডেঙ্গুর বিস্তারের মধ্যে মশাবাহিত এই রোগে গতকালও প্রাণ হারিয়েছেন ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের এক ছাত্রসহ আরও ৩ জন।
বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে রেলের ঈদ যাত্রা। এই যাত্রায় মশার কামড়ে যাতে কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত না হয় এজন্য সব ট্রেনেই মশার ওষুধ ও স্প্রে ব্যবহার করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। জানা গেছে, বুধবার কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে তিনটি আন্তঃনগর, মেইল, ঈদ স্পেশালসহ মোট ৫২টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। যেগুলোতে মোট আসন সংখ্যা ছিলো ২৭ হাজার ৮৮৫টি। কমলাপুর রেল স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আমিনুল হক জানান, কেউ যাতে নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত না হয় সেজন্য সব ট্রেনে রেলের নিজস্ব ফগার মেশিন দিয়ে মশার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও ঈদে বাড়িমুখি মানুষের চাপ দেখা গেছে। আবহাওয়া কিছুটা খারাপ থাকলেও বেশিরভাগ লঞ্চ ছেড়ে গেছে সদরঘাট থেকে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি জানিয়েছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সায়েদাবাদ, মহাখালী, ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল ও গুলিস্তান-টিসিবি রোড এলাকার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাসহ ফগার মেশিন দিয়ে প্রতিবার তিন বার মশা নিধনের ওষুধ স্প্রে করা হয়েছে। একই সাথে প্রতিটি দূরপাল্লা রুটের বাসগুলোতে যাত্রী উঠার আগেই ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গ্রামের বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে রাজধানীর মানুষ। তাই বলা যায়, দেশজুড়ে আরও বাড়লো ডেঙ্গু ঝুঁকি।
এদিকে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়া ডেঙ্গু রোগীদের ঈদের ছুটিতে গ্রামে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়–য়া। পাশাপাশি হালকা জ্বর হলেও অবহেলা না করে, রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গু আক্রান্ত কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অধ্যাপক উত্তম বলেন, এখন মানুষ ঘরমুখো। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছুটি পেলেও এই অবস্থায় গ্রামে ফেরা উচিত হবে না। কারণ, যারা আক্রান্ত রোগী তাদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের দরকার। যার কারণে ঢাকায় থাকায় শ্রেয়। তাছাড়া তাদের মাধ্যমে গ্রামেও ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। তিনি আরও বলেন, সাধারণত এডিস মশা কামড়ানোর তিন থেকে চারদিন পর জ্বর হয়। যারা ঢাকা থেকে বাড়ি যাচ্ছেন, তারা আক্রান্ত কি না, তা না জেনেই যাচ্ছেন। তারা গ্রামে গিয়ে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এরকম অবস্থায় গ্রামে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব নয় বলে সেটা ভাবার বিষয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ডেঙ্গুর বিস্তারের মধ্যে মশাবাহিত এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। গতকালও প্রাণ হারিয়েছেন ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের এক ছাত্রসহ আরও ৩ জন। ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সরকারি তিতুমীর কলেজের অর্থনীতির স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের মৃত্যু হয়। ওই হাসপাতালের আইসিইউতে দায়িত্বরত স্টাফ নার্স কাজী শ্যামলী বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভর্তি হন মেহেদী। তার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ৩টা ৩৮ মিনিটে তিনি মারা যান।
কুমিল্লার মুরাদনগরের ছেলে মেহেদী ঢাকায় থাকতেন কলেজের পাশের শহীদ আক্কাসুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাসের ২০১ নম্বর কক্ষে। তার বন্ধু তিতুমীর কলেজের আরেক ছাত্র ওয়াহিদ জানান, প্রচণ্ড জ্বর হলে সপ্তাহ খানেক আগে মেহেদীকে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সোমবার তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তার ডেঙ্গু হয়েছে। প্লাটিলেট কমে ১৭ হাজারের নিচে চলে এসেছিল বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও দুই জন ডেঙ্গু রোগী মারা যান। গার্মেন্ট ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন বুধবার ভোর সোয়া ৪টার পর মারা যান। তিনি গত ৫দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে তাকে হাসপাতালের ৬০১ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জ সদরে। বিকালে আরও একজন নারী মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment