উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা: প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কী রয়েছে?
সংবাদ বাংলা: গত জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আইনটির ব্যাপারে বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, আইসিটি অ্যাক্টের অপরিচ্ছন্ন যে ৫৭ ধারা ছিলো, সেটিকে বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ৫৭ ধারার যে অপরাধ, সেগুলো বিস্তারিতভাবে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছিলেন, যে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা বাতিল করে তার পরিবর্তে এসব ধারার অপরাধের প্রকৃতি অনুযায়ী শাস্তির বিধান রাখা হবে। অনেকে আশংকা করছেন, ৫৭ ধারার মতো ধারা ১৯শের অপব্যবহার হতে পারে অর্থাৎ এখানে হ্যাকিং-এর শাস্তি ১৪ বছর কারাদণ্ড বা কমপক্ষে এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড।
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী-
• ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জন শৃঙ্খলা ক্ষুণ্ণ করলে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টি করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তা ব্লক বা অপসারণের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে।
•কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত যদি কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে তা গুপ্তচরবৃত্তি বলে গণ্য হবে এবং এজন্য ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।
•খসড়া আইনে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের জন্য জাতীয় কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে।
•আইনের ২১ ধারার প্রস্তাব অনুযায়ী ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার নামে প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণা চালালে বা মদদ দিলে অনধিক ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
•আর ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার জন্য ওয়েবসাইট বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক বিন্যাসে কিছু প্রচার বা প্রকাশ করলে অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
•ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দ্বিতীয় খসড়ায় দেখা যাচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় আলোচিত ‘মানহানি’, ‘মিথ্যা-অশ্লীল’, ‘আইন শৃঙ্খলার অবনতি’ ও ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ এই বিষয়গুলো আইনের ১৯ ও ২০ ধারায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, এটা ফ্রিডব অব প্রেস বা ফ্রিডম অব স্পিচ বন্ধ করার জন্য নয়
•৫৭ ধারায় সাজা ছিল ৭-১৪ বছর ১৯ ধারায় সেটি ২ মাস থেকে দুই বছর ও ২০ ধারায় ১ থেকে ৭ বছর। জরিমানার ক্ষেত্রেও ৫৭ ধারায় সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২ থেকে ৭ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। আর ৫৭ ধারায় মামলা জামিন অযোগ্য থাকলেও ১৯ ও ২০ ধারায় মামলা জামিনযোগ্য করা হচ্ছে।
•আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় যেখানে ‘নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ’ এবং ‘রাষ্ট্র ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ’ এই শব্দগুলি ছিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সেটি ‘মনকে বিকৃত ও দূষিত করা’ এবং ‘মর্যাদাহানি ও হেয় প্রতিপন্ন’- এভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
•কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের বিষয়েও বিধান রয়েছে এই আইনে। সেখানে ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, কম্পিউটার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম. কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ডিভাইস, ডিজিটাল সিস্টেম বা ডিজিটাল নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার ব্যাহত করে, এমন ডিজিটাল সন্ত্রাসী কাজের জন্য অপরাধী হবেন এবং এজন্য অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড অথবা এনধিক এক কোটি অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
•ছবি বিকৃতি বা অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছেকৃতভাবে বা অজ্ঞাতসারে কারো ব্যক্তিগত ছবি তোলা, প্রকাশ করা বা বিকৃত করা বা ধারণ করার মতো অপরাধ করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ইন্টারনেটে পর্নগ্রাফি ও শিশু পর্নগ্রাফির অপরাধে সাত বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
•কোন ব্যাংক, বীমা বা আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া অনলাইন লেনদেন করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। আগে ৫৭ ধারায় মামলা হলেই যে গ্রেফতার করার বিধান ছিল, সে বিষয়ে এখন অপরাধ বিবেচনা করে কোনটি জামিনযোগ্য আর কোনটি অজামিনযোগ্য, তা ভাগ করে দেয়া হয়েছে।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment