‘একনায়কতান্ত্রিক’ দেশ বাংলাদেশ
সংবাদ বাংলা: বাংলাদেশ বিশ্বের নতুন একনায়কতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেরটেলসমান স্টিফটুং এক প্রতিবেদনে এ দাবি করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ওই তালিকায় নতুন করে পাঁচটি দেশ একনায়কতান্ত্রিক দেশের তালিকা টুকেছে। তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশসহ ওই পাঁচটি দেশ গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণ করছে না। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যালোচনা চলাকালীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মৌলবাদীদের হামলা সংঘটিত হতে দেখা গেছে। সারা দেশে সহিংসতা চালানোর জন্য প্রতিবেদনে দায়ী করা হয়েছে বিরোধী দল বিএনপিকেও। এতে আরও বলা হয়েছে, ‘দুই প্রধান নেত্রীর মধ্যকার বিরোধ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয়।’
বেরটেলসমান স্টিফটুং নিজেদের ওয়েবসাইটে ‘ট্রান্সফরমেশন ইনডেক্স বিটিআই’ নামের এই সূচক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ২০০৬ সাল থেকে নিয়মিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশ্লেষণ করে আসছে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান। চলতি বছর ১২৯টি উন্নয়নশীল ও রূপান্তরিত দেশের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪০টি দেশের সরকার গত দুই বছর ধরে আইনের শাসনকে ‘বন্দী’ করে রেখেছে। অন্যদিকে ৫০টি দেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতার ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে। সারা বিশ্বেই গণতন্ত্র এখন চাপের মুখে রয়েছে।
চলতি বছরের সূচক অনুযায়ী, ১২৯টি দেশের মধ্যে ৫৮টি দেশে একনায়কতন্ত্র জারি রয়েছে। ২০১৬ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৫৫। অন্যদিকে এ বছর গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা ৭১টি। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৭৪।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর মোট ১৩টি দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। এই তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও আছে মোজাম্বিক. তুরস্ক ও ইয়েমেনের মতো দেশ। আর এই ১৩টি দেশের মধ্যে ৫টি দেশে গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদণ্ডও পূরণ হচ্ছে না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, লেবানন, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া ও উগান্ডা। এই দেশগুলোতে বছর–পরিক্রমায় গণতন্ত্রের ভিত ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রতিবেদনে এই দেশগুলোকে ‘একনায়কতান্ত্রিক শাসনে’ থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বেশির ভাগ সময় এসব দেশে নির্বাচনের মান দুর্বল থাকায় ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। তবে এই সূচক অনুযায়ী, বুরকিনা ফাসো ও শ্রীলঙ্কা লক্ষণীয় উন্নতি সাধন করেছে। এ দুটি দেশকে নতুন গণতন্ত্রের দেশ বলা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশকে নতুন একনায়কতন্ত্রিক দেশ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, খারাপ মানের নির্বাচনের কারণে বাংলাদেশকে এই তালিকায় ঢোকানো হয়েছে।
জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি আরও বলেছে, অর্থনৈতিকভাবে ভালোই উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। বাণিজ্য–ঘাটতিও আগের তুলনায় কমে এসেছে। তবে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই দেশের স্নাতক পাস করা তরুণদের ৪৭ শতাংশ কর্মসংস্থানের সুযোগ পান না। যোগ্যতার চেয়ে নিম্নমানের চাকরিতে শিক্ষিত তরুণদের যোগদান বাংলাদেশের একটি অন্যতম সমস্যা বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বেরটেলসমান স্টিফটুংয়ের প্রতিবেদনে দেওয়া সূচকে গণতন্ত্রের মানের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে উরুগুয়ে। দুইয়ে আছে এস্তোনিয়া। আর তালিকার তিন নম্বরে আছে তাইওয়ান। বাংলাদেশ আছে ৮০ নম্বরে। রাশিয়া আছে ৮১ নম্বরে। তালিকার ২৪ নম্বরে আছে ভারত, ভুটান আছে ৪০ ও শ্রীলঙ্কা আছে ৪২ নম্বরে। তালিকার ১০৯ নম্বরে আছে চীন। আর এই সূচকের শেষ তিনটি স্থান যথাক্রমে ইয়েমেন, সিরিয়া ও সোমালিয়ার দখলে।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment