ওষুধ ভেদে দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ
সংবাদ বাংলা: বাজারে ওষুধের দাম বেড়েছে। অথচ এ বছর বাজেটের কোথাও ওষুধের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেনি। এদিকে ক্যান্সারসহ কয়েকটি রোগের প্রতিশোধকের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার কমানো হয়েছে। এরপরও বাজারে প্রতিটি কোম্পানির ওষুধের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। কোনো কোনো ওষুধের দাম গত এক বছরে ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। হঠাৎ ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। তাদের মতে, এভাবে কোনো কারণ ছাড়াই ওষুধের দাম বেড়ে গেলে দেশের মানুষ চিকিৎসা ব্যয়ের ভয়ে চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে।
পেটের ব্যথার ওষুধ এলিজনের দাম নিয়ে এক বিক্রেতা বলেন, গত বছর এই ওষুধের দাম ছিল ৫০ টাকা, এরপর ৬০ হয়ে পাঁচ থেকে ছয়দিন আগে দাম হয়েছে ৮০ টাকা। এক বছরে এই ওষুধের দামই বেড়েছে ৩০ টাকা। গ্যাস্ট্রিকের হেমোক্যাপ গত দুই মাসের ব্যবধানে ৮২০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।
টোফেন সিরাপ ৫৫ টাকা থেকে ১০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ টাকা শুধু পেটের ব্যথার ওষুধ এলিজন, টোফেন কিংবা হেমোক্যাপ নয়। গ্যাসের এসিফিক্স, ফিনিক্স, স্যাকলো কিংবা প্রেসারের ওলমেসান আর বাইজোরানসহ দাম বেড়েছে বেশকিছু ওষুধের।
ওষুধের দাম বাড়লেও বাজারে এখন মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কমেছে। গুঞ্জন রয়েছে, আদালতের নির্দেশনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তদারকিতে উৎপাদকরা মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় ৩৬ কোটি টাকার ওষুধ বাজার থেকে তুলে নিয়ে ধ্বংস করে।
এরপর থেকেই মূলত অস্বাভাবিকভাবে ওষুধের দাম বাড়তে শুরু করেছে। যদিও এসব অভিযোগ মানতে নারাজ ওষুধ শিল্প সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, ওষুধের দাম এখনো স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্ব বাজারে ওষুধের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে সামান্য কয়েকটি ওষুধের দাম বাড়তে পারে।
কিন্তু ঢালাওভাবে দাম বেড়েছে এটা বলা যাবে না। দু-একজন অসাধু বিক্রেতা হয়তো অতিরিক্ত মূল্যে ওষুধ বিক্রি করছে। তাই বলে সারা দেশে ওষুধের দাম বাড়ছে বলা যাবে না। উৎপাদক ও বিক্রেতাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে ক্ষতিতে পড়ছে দেশের সাধারণ মানুষ।
তারা চায় ওষুধের মূল্যের এই সমন্বয়হীনতা কাটিয়ে উঠুক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের মতো একটি প্রয়োজনীয় বিষয়ে অতিরিক্ত মুনাফার আশা ছেড়ে বের হতে হবে। ওষুধের দাম যাতে সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যেই থাকে সেজন্য সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। এজন্য ওষুধ নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই সাথে দেশে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনেও নজর দিতে হবে।
ফার্মাসিস্টদের তথ্য মতে, কোনো কোনো ওষুধের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। রাজধানীর শাহবাগে গতকাল মঙ্গলবার মায়ের জন্য হেমোক্যাপ নামে গ্যাসের ওষুধ কিনতে এসেছেন আজিমপুরের শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ওষুধটা বেশি পাওয়া যায় না।
তাই অনেক জায়গা ঘুরে শাহবাগ পেয়েছি কিন্তু এখন ৩০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। অনেক খুঁজে ওষুধ পেয়ে যে খুশি লাগছে। আবার অতিরিক্ত দাম শুনে ভয় হচ্ছে এভাবে বাড়তে থাকলে এক বছরে কোথায় গিয়ে ঠেকে। এদিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মিম ফার্মেসিতে প্রেসারের ওষুধ ক্যামলোসার্ট কিনতে গেলে প্রথমেই ৮০ টাকার ওষুধে বিক্রেতা ১২০ টাকা দাম চাচ্ছেন। ওষুধ চাইতেই বিক্রেতা বলে ১২০ টাকা দেন ওষুধ নেন। ৮০ টাকার ওষুধ ১২০ টাকা কেনো দেবো জানতে চাইলে বিক্রেতা বলেন, দেশের সব ওষুধের দাম বেড়েছে এবং প্রথমে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেন এই বিক্রেতা।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতি অনুসরণ করে ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে সরকারের উচিত ওষুধ কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। সেখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সবাই ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ওষুধ কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে একচেটিয়া দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাবেক ডেপুটি সেক্রেটারি এ এস এম মনির হোসেন বলেন, ওষুধের দাম বাড়ার পেছনে উৎপাদকরা দায়ী। কারণ মূল্যটা তারা নির্ধারণ করে। সেখানে খুচরা বিক্রেতাদের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের উচিত তাদের নিয়ে বসে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া। কারণ ওষুধ প্রস্তুতকারকরাই বাজারে তাদের ইচ্ছেমত দাম বাড়ান।
বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম সফিউজ্জামান বলেন, ওষুধের দাম বাড়েনি। কিছু অসাধু ওষুধ বিক্রেতা ওষুধের দাম বেড়েছে অজুহাত তুলে বেশি মুনাফা আদায়ের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, সারা বিশ্বেই ওষুধের কাঁচামালের দাম বেড়েছে। আগে যেই কাঁচামালের দাম ৩০ ডলার ছিল এখন তা ৭০ ডলার দিয়ে আনতে হয়।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment