করোনা মোকাবেলায় ভ্যাকসিনের বিকল্প নেই
সংবাদ বাংলা: মহামারি করোনা মোকাবেলায় ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্প নেই। হার্ড ইমিউনিটির জন্য দেশের মোট জনগোষ্ঠির অন্তত ৭০-৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে করোনা ঠেকানো সম্ভব নয়। লকডাউনের মাধ্যমে সাময়িকভাবে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমিয়ে আনা যায়। করোনা সামাল দিতে উপায় হচ্ছে গণটিকা নিশ্চিত করা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১২ মাসের মধ্যে মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ভ্যাকসিনে করোনার তীব্রতা থাকবে না। মৃত্যু ঝুঁকি কমে আসবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ৭০-৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে করোনা ঠেকানো সম্ভব নয়। ভ্যাকসিনে পিছিয়ে পড়া তৃতীয় বিশ্বের দেশ এবং আফ্রিকার দেশগুলো করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপের দেশগুলো করোনা পরিস্থিতি উন্নতির পেছনে কাজ করছে ভ্যাকসিন।
মহামারী করোনাভাইরাস সামাল দিতে বাংলাদেশে কোভিশিল্ড দিয়ে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হয়। এটি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন, যা তৈরি করেছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী ভ্যাকসিন না পাওয়ায় টিকাদান কর্মসূচিতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এরপর চীনের সিনোফার্ম ও ফাইজারের টিকা দিয়ে এ কার্যক্রম চলছে। তবে টিকার স্বল্পতায় সীমিতভাবে এই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। বর্তমানে দেশে সিনোফার্মের ৩৬ লাখ টিকা ও ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা রয়েছে। এছাড়া কোভ্যাক্স থেকে মর্ডানার ২৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন যুক্ত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস বা গ্যাভি এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের গড়া প্ল্যাটফর্ম হল কোভ্যাক্স। বিশ্বের সব মানুষের সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক পাওয়া নিশ্চিত করতে এটি গঠিত হয়। জুলাইয়ে চীনের সিনোফার্মের দেড় কোটি টিকা পাবে বাংলাদেশ। রাশিয়ার স্পুটনিক-ভির এক কোটি টিকা কিনতে সরকার আলোচনা শুরু করে। অন্যদিকে সৌদি আরব ও কুয়েতগামী প্রবাসী শ্রমিকরা ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা পাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, ৭০-৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে করোনা ঠেকানো সম্ভব নয়। ভ্যাকসিনে পিছিয়ে পড়া তৃতীয় বিশ্বের দেশ এবং আফ্রিকার দেশগুলো করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপের দেশগুলো করোনা পরিস্থিতি উন্নতির পেছনে কাজ করছে ভ্যাকসিন। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন করোনা সংক্রমণ থেকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারবে না। কিন্তু ভ্যাকসিনে করোনার তীব্রতা থাকবে না। মৃত্যু ঝুঁকি কমে আসবে। তিনি আরও বলেন, জনগণকে করোনার টিকা প্রদানের ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছার অভাব নেই। ভারতের সেরাম থেকে তিন কোটি ডোজ টিকার দাম অগ্রিম পরিশোধ করে বাংলাদেশ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারত নিজেও চিন্তা করে নাই তার দেশের এই মারাত্মক পরিস্থিতি হতে পারে। তাই টিকাদান কর্মসূচি কিছুটা বাধাগ্রস্থ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, টাকা কোনও বিষয় নয়, সবাইকে টিকার আওতায় আনা হবে। ডা. এহতেশামুল হক বলেন, আমাদের মত দেশগুলো যাদের ভ্যাকসিন উৎপাদনে সক্ষমতা আছে, তাদেরকে ভ্যাকসিন তৈরির সুযোগ দিতে হবে। এজন্য উন্নত বিশ্বের দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুজাহেরুল হক বলেন, হার্ড ইমিউনিটির জন্য অন্তত ৭০-৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। এজন্য টিকা জোগাড় করাই এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা যদি ধরে নেই যে ৭০ শতাংশ লোককে টিকা দিতে হলে ২৫ কোটি ডোজ টিকা জোগাড় করতে হবে। তিনি বলেন, তখনই সম্ভব যখন আমরা নিজে টিকা তৈরি করতে পারবো। একাধিক দেশ থেকে টিকা সংগ্রহ এবং উৎপাদন শুরু করাটাই এখন জরুরি বলে মনে করেন তিনি। অধ্যাপক মুজাহেরুল হক আরও বলেন, ভারতের মতো বৃহত্তম দেশ টিকা নিজে উৎপাদন করে আবার অন্য দেশের টিকাও তারা উৎপাদন করছে। পাকিস্তানও তাই করছে। সুতরাং বাংলাদেশেরও উচিৎ হবে বেশ কয়েকটা সোর্স থেকে টিকা আমদানি করা। পাশাপাশি টেকনোলজি ট্রান্সফারের মাধ্যমে কোন টিকা আমাদের দেশে তৈরি করা যায় কিনা- সে সম্ভাবনা দেখে তা বাস্তবে রূপ দেয়ার চিন্তা করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment