কোটা সংস্কার আন্দোলন চলবে
সংবাদ বাংলা: দ্বিধা বিভক্ত অবস্থান নেয়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকুরিপ্রত্যাশীরা চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এরআগে কোটার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে সরকারের এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন আন্দোলনকারীদের একাংশ। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নেমে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। তাদের আন্দোলনের কারণে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টার পর থেকে রামপুরা থেকে বসুন্ধরা পর্যন্ত বীর উত্তম রফিকুল ইসলাম এভিনিউ এবং প্রগতি সরণি হয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরুল বাড্ডা, হাতিরঝিলে তেজগাঁর কুনিপাড়া থেকে মেরুল এবং মালিবাগের আবুল হোটেল থেকে রামপুরা ব্রিজ ও আশেপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একমত পোষণ করে স্থগিত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন তারা। ঘোষনায় তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দাবি মানা বিষয়ে সুষ্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারা দেশের সকল সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করা হবে। বিকলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলনে করে এ কথা জানান বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহŸায়ক মো. রাশেদ খান। তিনি সাংবাদিকদের কাছে আরো তিনটি দাবির কথা তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও কোটা সংস্কারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা। সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা কোটা সংস্কার নিয়ে জাতীয় সংসদে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর দেয়া বক্তব্য ফের প্রত্যাহার করে নেয়ার জোরালো দাবি জানান। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখান করে সারা দেশে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার কথা উলেখ করে দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করার আহŸান জানান আন্দোলনকারীরা।
সংসদে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা সুযোগ পাবে না, রাজাকারের বাচ্চারা সুযোগ পাবে? তাদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংকুচিত হবে? কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, পরিষ্কার বলতে চাই। মুক্তিযুদ্ধ চলছে, চলবে। রাজাকারের বাচ্চাদের আমরা দেখে নেব। তবে ছাত্রদের প্রতি আমাদের কোনো রাগ নেই। মতলববাজ, জামায়াত-শিবির, তাদের এজেন্টদের বিরুদ্ধে সামান্য শৈথিল্য দেখানো হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলব এদের ক্ষমা নেই, ক্ষমা করা যাবে না। হয় তারা থাকবে, নতুবা আমরা থাকব।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, আগামী বাজেটের পরে কোটা সংস্কারে হাত দেয়া হবে। সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, কোটা এখন যা আছে, তা বোধহয় অনেক বেশি হয়ে গেছে। এটা সংস্কার করা উচিত। তবে কোটা থাকতেই হবে। সমাজে যারা পশ্চাৎপদ, তাদের জন্য কোটা থাকা উচিত। প্রশ্ন হচ্ছে কত শতাংশ থাকবে? আগামী বাজেটের পরে কোটা সংস্কারে হাত দেওয়া হবে। সবচেয়ে বেশি মুক্তিযোদ্ধা কোটা। কোটা অনুযায়ী যত পদ আছে, তত লোক পাওয়া যায় না বলেও মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।
সোমবার বিকালে সচিবালয়ে সরকারের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি দলের বৈঠকে আগামী ৭ মের মধ্যে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সিদ্ধাস্ত জানানোর প্রতিশ্র“তি এলে আন্দোলনরতদের মধ্যে তৈরি হয় বিভক্তি। বৈঠকে অংশ নেয়া অংশটি ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানে থাকা আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। বিপাশা চৌধুরী নামে এক শিক্ষার্থীকে আন্দোলনরতদের ‘নতুন মুখপাত্র’ ঘোষণা দেয়ার পর তিনি ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ডাক দেন। এনিয়ে গতকাল দিনভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী পালন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিভক্তরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয়। পরে সেখান থেকে তারা মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। অন্যদিকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয়া অংশের শিক্ষার্থীরা সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলন স্থগিত করা অংশটি দাবি করেছে, এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা ‘অনুপ্রবেশকারী’। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ ও ‘স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠী’ আখ্যায়িত করে ছাত্র অধিকার পরিষদের মোহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, উপাচার্যের বাসায় যারা হামলা চালিয়েছিল তারাই নতুন কমিটি করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment