কোটা সংস্কার আন্দোলনে এবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
সংবাদ বাংলা: রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নেমে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। তাদের আন্দোলনের কারণে মঙ্গলবার বেলা ১২টার পর থেকে রামপুরা থেকে বসুন্ধরা পর্যন্ত বীর উত্তম রফিকুল ইসলাম এভিনিউ এবং প্রগতি সরণি হয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরুল বাড্ডা, হাতিরঝিলে তেজগাঁর কুনিপাড়া থেকে মেরুল এবং মালিবাগের আবুল হোটেল থেকে রামপুরা ব্রিজ ও আশেপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
রামপুরা ব্রিজের কাছে ইস্ট ওয়েস্ট; বসুন্ধরা গেইটে নর্থসাউথ, ইনডিপেন্ডেন্ট ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এআইইউবি; নতুনবাজার এলাকায় ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস), তেজগাওয়ের আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এবং সোবহানবাগে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে রয়েছে। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ধানমন্ডির সোবহানবাগ এলাকায় মিরপুর রোডেও কয়েক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল করে এক পাশ দিয়ে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নর্দ্দা এলাকায় প্রগতি সরণিতে অবস্থান নেয় নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।
ইউআইটিএসের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিলে রামপুরা থেকে নতুন বাজার হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা ১২টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান গেটে অবস্থান নেয়। পরে ইনডিপেন্ডেন্ট, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ও এআইইউবির শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে যোগ দিলে প্রগতি সরণির দুই দিকেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নর্থ সাউথের এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী তাজিন মাহমুদ আশিক বলেন, কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে এবং সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত ভাই-বোনদের সাথে আমরা একাÍতা প্রকাশ করছি। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুরের পর সোবহানবাগে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। শুরুতে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তারা আন্দোলন চালিয়ে গেলেও বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সদকে অবস্থান নিলে মিরপুর রোডের এক পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা রাস্তার একদিকে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি।
বর্তমানে সরকারি চাকুরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা রয়েছে। এতে করে দেশের মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। বিদ্যমান কোটার সংস্কার চেয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ গত ২৭ ফেব্র“য়ারি থেকে আন্দোলন করেন। গত রোববার তাদের পদযাত্রা ও অবস্থা কর্মসূচি চলাকালে ঢাকায় পুলিশ বাধা দিলে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। সোমবার সকাল থেকে সারাদেশের বেশিরভাগ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবনের ভেতর তছনছ এবং ব্যাপক ভাঙচুর করেন।
বর্তমানে দেশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ও জেলা কোটা ১০ শতাংশ করে। সব মিলিয়ে কোটার জন্য বরাদ্দ ৫৬ শতাংশ। ফলে এর কোনো শ্রেণীতে যারা পড়েন না, তাদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে বাকি ৪৪ শতাংশের জন্য। এই পদ্ধতি সংস্কারের পাঁচ দফা দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন চালিয়ে আসছে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। তাদের দাবিগুলো হল- সরকারি নিয়োগে কোটার পরিমাণ ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, কোটার যোগ্য প্রার্থী না পেলে শূন্যপদে মেধায় নিয়োগ, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অভিন্ন বয়সসীমা, নিয়োগপরীক্ষায় একাধিকবার কোটার সুবিধা ব্যবহার না করা।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment