গণপরিবহণ, সড়ক নিরাপত্তা এবং আমরা
এম মামুন হোসেন, কোপেনহেগেন (ডেনমার্ক) থেকে: ডেনমার্কের কোপেনহেগেন এয়ারপোর্টে নেমে প্রথমেই যে কাজটি করলাম সেটি হলো গণপরিবহনের টিকেট কেনা। পাঁচদিনের জন্য মেট্রো রেল ও বাসে চড়তে টিকিটে খরচ পড়লো ৩০০ ড্যানিশ ক্রোনার (ডেনমার্কের মুদ্রার নাম)। এক সঙ্গে টিকিট কিনলে খরচ কিছু কম পড়ে। অন্যদিকে একবার মেট্রো বা বাসে চড়লে গুনতে হবে ২৮ ক্রোনার। এখানে বাংলাদেশের মতো ব্যক্তিগত বাহনের আধিক্য নেই। এয়ারপোর্টসহ বিভিন্ন স্থানে মেট্রো রেল, বাস কিংবা ইন্টারন্যাশনাল বাস, ট্রেনের টিকেট করার জন্য বুথ আছে। জনপ্রিয় কার শেয়ারিং অ্যাপ ‘উবার’ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ডেনমার্কে। অসংখ্যা মানুষ সাইকেলে চলাচল করে। প্রচুর সাইকেল স্ট্যান্ড আছে। বাসে কিংবা ট্রেনে সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করার ব্যবস্থা আছে।
অন্যদিকে গাড়ি রাখার স্থান আর গাড়ি কেনার মতো টাকা যোগাতে পারলেই গাড়ির মালিক হয় বাংলাদেশে। এমনও পরিবার আছে ছয় সদস্যের জন্য গাড়ি দশটি। গণপরিবহন বাসের তুলনায় ঢাকার রাস্তা দাপিয়ে বেড়ায় প্রাইভেট কার। বেইলি রোডে ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ কিংবা মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে শতাধিক প্রাইভেট কার রাস্তার দু’পাশ আটকে রাখে। এসব প্রতিষ্ঠানে পড়া একজন শিক্ষার্থী বেতনভুক্ত চালকের প্রাইভেট কারে চড়ে স্কুলে যায়। নিজে গাড়ি কেনার প্রতি এই প্রীতির পেছনের কারণ হলো- আমাদের গণপরিবহণ স্বল্পতা, ভোগান্তি এবং সেবার মান।
যা হোক এয়ারপোর্ট থেকে নেমে আমার গন্তব্য হোস্টপারসওয়েজ, ফ্রেডেরিক্সবার্গ। মেট্রো বা বাসে যাওয়া যাবে। দ্রুত যেতে চাইলে মেট্রো। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে টের পেলাম ঠাণ্ডার তেজ। ১০ মিনিট পর পর মেট্রো পাওয়া যায়। অপেক্ষা করতে হলো না, পেয়ে গেলাম। চালকবিহীন মেট্রোতে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছতে লাগলো ৪০ মিনিট।
দু’দিনে কোপেনহেগেনের এ-মাথা ও-মাথা ঘুরেছি মেট্রো বা বাসে। বিদেশে এসে দেশের ভুল ধরা নয়; তবে আফসোস হয়। আমরা কোথায় আছি? আর ডেনমার্কের মতো দেশগুলো কোথায় চলে গেছে। সবকিছু নিয়মে চলে (সিস্টেমেটিক ওয়ে)। সবাই নিয়ম মেনে চলে। গন্তব্যে পৌঁছতে বিভিন্ন মাধ্যমের ব্যবহার করা যায় খুব সহজে।
ফেসবুকে ডেনমার্কে তুষারপাতের ছবি দিতেই ফোন করলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু মনির হোসেন। পরিবার নিয়ে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে থাকে। ডিএইচএলের হেড অফিসে একাউন্টস সেকশনে আছে। বেশ ভালো আছে। ফোন করেই প্রথম আবদার হচ্ছে; ওর বাসায় বেড়াতে হবে। বললাম, ‘দোস্ত আমার সময় নেই। অন্য আরেকবার যাবো।’ মনির বলল, ‘দুই ঘণ্টা লাগবে, আমি টিকেট পাঠাচ্ছি।’
কোপেনহেগেন থেকে স্টকহোমে দুই ঘণ্টায় যাওয়া যাবে শুনে মনে পড়লো আমার ঢাকার বাসা ওয়ারি থেকে গুলশানে কী গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবো দুই ঘণ্টায় যাওয়া যাবে। এই গ্যারান্টি দেয়া সম্ভব না। গতবার কোপেনহেগেন থেকে সুইডেনের মালমো ঘুরতে গিয়েছিলাম ট্রেনে। সময় লেগেছিল মাত্র ৩৬ মিনিট।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাজধানীতে ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাস ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে বেপরোয়া চলাচল করে। ফলে এসব বাসে দুর্ঘটনায় কারো হাত, কারো পা, কারো মাথা বা কারো জীবন চলে যাচ্ছে। গত এক বছরে সড়ক ছয় হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, বেপরোয়া গাড়ি চলাচল, ট্রাফিক আইন অমান্য করাই বাংলাদেশে নিয়মে পরিণত হয়েছে। সড়কে যানবাহন চালক এবং পথচারী নিয়ম অমান্য করার প্রতিযোগিতা চলে। এখানে ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলেন সবাই। বাস চালকরা যত্রতত্র যাত্রী নামান-ওঠান। একই পথের ভিন্ন কোম্পানির বাসের মধ্যে যাত্রী তোলা নিয়ে রেষারেষি করে। বাসের পাদানিতেও থাকে অতিরিক্ত যাত্রী। আইন না মেনে উল্টো পথে গাড়ি চলাচল করে। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে পথচারীরা যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হয়। সড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, বাস, কাভার্ড ভ্যান ইচ্ছেমতো পার্কিং করে। এসবের পরিবর্তন হয়তো আসবে একদিন।
সৌজন্যে: দৈনিক সময়ের আলো
Thik Bolsen vi … Kobe je amader desh oi rakom hobe?????