ঘুম ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব
সংবাদ বাংলা: আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি, আমাদের মস্তিষ্ক তখন স্মৃতি ও তথ্য সংরক্ষণ করে।শরীর ক্ষতিকারক উপাদানগুলো সরিয়ে ফেলে সব ঠিকঠাক করে যাতে জাগার পরে শরীর আবার ঠিকমত কাজ করতে পারে। একটুখানি ঘুমের অভাবও আমাদের ভালো থাকা না থাকাকে অনেকখানি প্রভাবিত করে।অনেকেই আছেন যারা এক রাত না ঘুমালেই একদম ভেঙে পড়েন। তিন রাত না ঘুমালে আমাদের কর্মক্ষমতা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়। এক গবেষণা বলছে, কেউ টানা ১৭ থেকে ১৯ ঘণ্টা জেগে থাকলে যে ধরনের প্রভাব পড়ে, অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলেও মস্তিষ্কে একই ধরনের প্রভাব পড়ে।
সময়ের সাথে সাথে এ ক্ষতির মাত্রা বাড়তে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, টানা ১১ দিন না ঘুমানোর ফলে আচরণ ও কাজে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। মনোযোগ ও শর্ট টাইম মেমোরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, হেলুসিনেশন হয়, এমনকি মস্তিষ্ক বিকৃতিও হয়। বিজ্ঞানীরা বরাবরই যথেষ্ট ঘুমের ওপরে জোর দিয়ে আসছে। ঘুমের ক্ষেত্রে আলোর প্রভাব কতটা জরুরী তা হয়ত কিছুটা আড়ালেই রয়ে গেছে।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো
রাতে কাজ করার বেশ মারাত্মক দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আছে। সবচেয়ে ভয়ানক হল এর ফলে ছয় বছর পর্যন্ত আয়ু কমে যেতে পারে।
রাতের শিফটে কাজ করা; যারা রাতের বেলা কাজ করেন তাদের জন্য আলোর বিষয়টি আরো গুরুতর।
তাদেরকে এমন সময় কাজ করতে হয় যখন তাদের শরীর চায় ঘুমাতে। ওই সময় শরীর কোনো ধরনের মাথা খাটাতে বা সতর্ক থাকতে চায় না অথচ সেটাই করতে হয়। যারা রাতে কাজ করে তারা হয়ত দিনে একটু ঘুমিয়ে রাতের ঘুমের অভাব পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। কারণ সাধারণত তারা দিনের বেলা অল্প সময়ের জন্য ঘুমায় আর ঘুম তত গভীরও হয় না।
তাদের যখন জেগে থাকার কথা তারা তখন ঘুমায়, যখন ঘুমানোর কথা তখন জেগে থাকে আর এ কারণে তাদের স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাতে কাজ করার সাময়িক প্রভাব হল, তথ্য-উপাত্ত ঠিকভাবে বুঝতে না পারা, মনে রাখতে না পারা আর কিছু আচরণিক অস্বাভাবিকতা। রাতে কাজ করার বেশ মারাত্মক দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আছে। সবচেয়ে ভয়ানক হল এর ফলে ছয় বছর পর্যন্ত আয়ু কমে যেতে পারে। নাইট শিফটে কাজ করা ৯৭ শতাংশ লোক কর্মক্ষেত্রে তাদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়। যত বছর ধরেই তারা কাজ করুক না কেন।
তারা তাদের শারীরবৃত্ত পরিবর্তন করতে পারে না। অফিসে যত আলোই থাকুক না কেন তা কখনোই দিনের আলোর সমকক্ষ নয়।অফিসের কৃত্রিম আলোর চেয়ে দিনের স্বাভাবিক আলো ২৫০ গুণ প্রখর।
রাতের শিফট শেষ করে তারা যখন বাসায় যায় তখন তাদের শরীর সকালের আলোর সংস্পর্শে আসে। এই আলো তাদের শরীরে এই সংকেত পৌঁছায় যে এখন জাগার সময় হয়েছে।
হার্ভাডের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাতের শিফটে কাজ করা লোকজনের অনেকে নিশাচর হয়ে যান। তারা কিছুতেই দিনের আলোয় বের হতে চান না। তবে অধিকাংশ মানুষের জন্য এটি কোনো বাস্তব সমাধান নয়। ঘুম নিয়ে পর্যাপ্ত আলাপ আলোচনা হলে মানুষ এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে পারত। পর্যাপ্ত আলো পাওয়া, দিনের আলো ও সন্ধ্যার আলোর সংস্পর্শে আসার বিষয়ে সতর্ক হত। নীতিনির্ধারকরাও বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজের সময়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়ার সময় নির্ধারণ করতে পারতেন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে যতটা কম পারা যায় আলোর সংস্পর্শে আসা আর সকালের আলোতে যত বেশি থাকা যায় ততই আপনার ভালো ঘুম হবে। এবং একই সময়ে ঘুমাতে পারবেন।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment