চাঁদপুরে নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
সংবাদ বাংলা: উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রাখতে চাঁদপুরেও নৌকা প্রতীকে ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চাঁদপুর স্টেডিয়ামে রোববার বিকালে এক জনসভায় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকায় ভোট চেয়ে বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোট চাই। নৌকায় ভোট দিতে সমবেত জনতার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ভোট দেবেন কিনা দু’হাত তুলে ওয়াদা করেন। এসময় হাজারো জনতা দু’হাত তুলে ধরে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাঁদপুরের জন্য স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে যা যা প্রয়োজন, সব কিছুর উন্নয়নেই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আজ ৪৭ টি উন্নয়ন প্রকল্পে উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থপন করা হয়েছে। শেখ হাসিনা এ সময় তাঁর সরকারের উদ্যোগে সারাদেশে ২ কোটি ৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান এবং ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর বৃত্তির টাকা মায়েদের মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দেওয়া এবং এজন্য ২০ লাখ মা’কে মোবাইল ফোন কিনে দেওয়া, সারাদেশে ৫২৭৫ টি ডিজিটাল সেন্টার করে উদ্যোক্তা তৈরীর মাধ্যমে যুবসমাজের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গ্রহণ, আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনদের নিদেন পক্ষে একটি টিনের ঘর করে দেওয়ার উদ্যোগসহ পোষ্ট অফিসগুলো ডিজিটাইজেশনের তথ্য তুলে ধরেন।
বেকারদের ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য অর্থায়ন করতে কর্মসংস্থান ব্যাংক করা, শ্রমিকদেরকে যেন জমি বিক্রি করে বিদেশে যেতে না হয়, সেজন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করা, বর্গাচাষীদেরকে বিনা জামানতে ঋণ দেয়া, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রাম এলাকায় স্বাস্থ্য সেবা দেয়া, সব হাসপাতালে শয্যা বৃদ্ধি, বয়স্ক মহিলা, স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা এবং দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালুর তথ্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের খন্ড চিত্র তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, এই আওয়ামী লীগকে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন, আমরা আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আর নৌকায় ভোট দিলে কেউ খালি হাতে ফেরে না। এই নৌকায় ভোট দিয়েই এদেশের মানুষ মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। আর এই নৌকাই যখন ক্ষমতায় আসে তখনই উন্নয়ন হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ব, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ গড়ে তুলেছি। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সমগ্র বাংলাদেশে ইন্টারনেট সার্ভিস করেছি। এখন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করছি, জেলায় জেলায় আইটি পার্ক করে দিচ্ছি।’
মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনিদের চাকরির জন্য কোটার সুযোগ রাখার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এই মুক্তিযোদ্ধারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করে আমাদের জন্য স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। অনেকে জীবন দিয়েছে, অনেকে পঙ্গু হয়ে আছেন, তাদের সম্মান করা। তাদের পরিবারকে সম্মান করা-এটা আমাদের কর্তব্য বলে মনে করেছি, তাই সম্মান করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উন্নয়নে বিশ্বাস করি। আর সে উন্নয়ন গ্রাম পর্যায় থেকে, সে উন্নয়ন সাধারণ মানুষের উন্নয়ন। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য যে, এই দেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে। কিন্তুু আপনারা জানেন এই বিএনপি-জামাত যখনই ক্ষমতায় আসে দেশের মানুষের ওপর অকথ্য অত্যাচার করে, লুটপাট করে, দুর্নীতি করে, মানি লন্ডারিং করে, দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে, জনগণের ঘর-সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য সবই কেড়ে নেয়, লুটে খাওয়াটাই ওদের চরিত্র।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা- ওরা এগুলোতেই পারদর্শী। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা-এটাই তাদের আন্দোলন। আপনারা দেখেছেন ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে। প্রায় সাড়ে ৩ হাজারের মত মানুষকে আগুনে পুড়িয়েছে, ৫শ’ মানুষ মারা গেছে, প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার গাড়ি, বাস ট্রাক, লঞ্চ, রেল, সিএনজি-সব আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। আর আওয়ামী গড়ে তোলে, উন্নয়ন সাধন করে কারণ, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এই আওয়ামী লীগ সংগঠন গড়ে তুলে দেশের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সেবক। আমরা যা যা ওয়াদা দিয়েছিলাম প্রত্যেকটা ওয়াদা আমরা রক্ষা করেছি। পাশাপাশি তার থেকে বেশি কাজ করেছি। আজকে আমরা ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। এই চাঁদপুরে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়েছে এবং আরও নতুন একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্রও হচ্ছে। যেখানে বিদ্যুতের লাইন নাই সেখানে সোলার প্যানেল দিয়ে বিদ্যুতের লাইন দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।
ইনশাল্লাহ কোন ঘর অন্ধকারে থাকবে না, প্রতি ঘরে আমরা আলো জ্বালবো, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিলাম। ২০১৪ সালে খালেদা জিয়া আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করেছিল তারপরও জনগণ ভোট দিয়েছে, আপনারা ভোট দিয়েছেন, চাঁদপুরবাসী ভোট দিয়ে প্রত্যেকটা সিটে নৌকা মার্কাকে জয়যুক্ত করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলে গেছেন, ভিক্ষুকের জাতির কোন ইজ্জত থাকে না। আমরা সব জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করবো। বাংলাদেশ হবে ভিক্ষুকমুক্ত। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে চলবো, কারোর কাছে হাত পাতবো না।
জনসভায় খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা টাকা মেরে দিয়েছে। এতিমের হক মেরে না খাওয়ার জন্য যেখানে পবিত্র কোরআন শরীফে পর্যন্ত নিষেধ আছে। তার জন্য আবার কিসের আন্দোলন।’
তিনি বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে টাকা পাচারের অভিযোগে বিদেশে মামলা হয়েছে। আমরা সে টাকা সেখান থেকে ফেরত এনেছি।
প্রধানমন্ত্রী জনসভায় তাঁর সরকারের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী জিরো টলারেন্সনীতির পুনরুল্লেখ করে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদক থেকে পুত্র ও পোষ্যদের দূরে রাখতে অভিভাবক, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম এবং ধর্মগুরুদের প্রতি আহবান জানান।
তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের সন্তান কোথায় যায়, কেন যায় সে বিষয়ে আপনারা লক্ষ্য রাখবেন। তরুণ প্রজন্মকে মাদক ও জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখতে হবে। এজন্য অভিভাবকদের ভূমিকা রাখতে হবে। (সৌজন্য: বাসস)
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment