চামড়ার দরপতনের কারণ কী?
সংবাদ বাংলা: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে দুইশ টাকায়। যা গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। এক বছর আগেও এসব চামড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় হাতবদল হয়েছে। এবার যত বড় চামড়াই হোক কোনো কোরবানিদাতা কিংবা সংগ্রহকারী ৬০০ টাকার বেশি দাম পাননি। এবছর সরকার প্রতিবর্গফুট লবণযুক্ত চামড়া ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকায় নির্ধারণ করে দেয়। অর্থাৎ আড়ৎদাররা মাঝারি মানের (২২ ফুট আয়তন) একটি চামড়া ট্যানারিতে বিক্রি করবেন ৭৭০ টাকা থেকে ৮৮০ টাকায়। গত বছর এসব চামড়া বিক্রি হয়েছিল এক হাজার থেকে ১২০০ টাকায়। এই বছর একই মানের চামড়াই কোরবানিদাতাদের কাছে থেকে কেনা হয়েছে গড়ে ৩০০/৪০০ টাকা দরে।
গত বারের বিরূপ অভিজ্ঞতায় এবার মহামারীর মধ্যে চাহিদা কম থাকবে ধরে নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিল ফড়িয়ারা। এর পাশাপাশি ট্যানারি মালিকদের কাছে আড়ৎদারদের কয়েকশ কোটি টাকা পাওনা বকেয়া পড়ে থাকা এবং মহামারীকালে বিশ্ব বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া চামড়ার দরপতনে ভূমিকা রেখেছে বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। সরকার কোরবানির পশুর চামড়ার নির্ধারিত দাম বেঁধে দিলেও বাস্তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর চেয়ে অনেক কম দামেই বিকিকিনি হয়েছে। শনিবার ঈদের দিন ও রোববার ঈদের দ্বিতীয় দিনে দরপতনের সুযোগে দালাল, ফড়িয়া, ব্যাপারী, আড়ৎদার এমনকি এই খাতের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ট্যানারিগুলোর মুনাফা বাড়ার পথ উন্মুক্ত হলেও কেউ দায় নিতে রাজি নয়। দেশে চামড়ার চাহিদার বেশিরভাগ অংশই পূরণ হয় কোরবানির ঈদে জবাই হওয়া পশু থেকে। এবার ৭০ লাখ গরু জবাই হবে বলে ধারণা করা হলেও হয়েছে ৫০ লাখের মতো বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। ছাগল ২০ লাখ জবাই হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কোরবানির চামড়া তিন হাত হয়ে ট্যানারিতে পৌঁছে। কোরবানিদাতার কাছ থেকে তা কিনে নেন মৌসুমী ব্যবসায়ীর, যাদের ফড়িয়া বলা হয়। তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কেনেন আড়তদাররা। সেই চামড়া লবণ মাখিয়ে প্রক্রিয়াজাত করার পর বিক্রি করা হয় ট্যানারিতে, যেখানে তৈরি হয় চামড়াজাত নানা পণ্য।
গত বছর ফড়িয়ারা যে দরে চামড়া কিনেছিলেন, বিক্রি করতে গিয়ে লাভ তো দূরের কথা কেনা দামও পাননি। তখন অনেকে চামড়া রাস্তায় ফেলে গিয়েছিলেন কিংবা মাটিতে পুঁতে ফেলেছিলেন। এবার করোনাভাইরাস মহামারীতে চামড়া সরকারি দরও কমে যাওয়ায় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের চামড়া কিনতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ হারান। ফলে অনেক স্থানে কোরবানির চামড়ার ক্রেতাই পাওয়া যাচ্ছিল না। ফড়িয়াদের পাশাপাশি বিভিন্ন মাদ্রাসাও চামড়া সংগ্রহ করে থাকে। তারা সেগুলো পরে আড়ৎতারদের কাছে বিক্রি করে দেয়। ফড়িয়ারা উধাও হওয়ায় আড়ৎদারদের নিজেদের লোক পাঠিয়ে এবার বিভিন্ন স্থানে চামড়া কিনতে দেখা গেছে। ফড়িয়ারা উধাও হয়ে যাওয়ায় চামড়ার হাতবদলের একটি ধাপ কমে যাওয়ায় আড়ৎদারদের বেশি মুনাফা লাভের সুযোগ তৈরি করেছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সদর ট্যানারির মাসুদ বলেন, “বহু ট্যানারির কাছে গত বছরের চামড়া জমে রয়েছে। ইউরোপে মন্দার কারণে রপ্তানি আদেশ চার ভাগের একভাগে নেমে এসেছে। ইউরোপে তিন ডলারের পণ্যের দাম নেমে গেছে দেড় ডলারে। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারণে ফিনিশড লেদারের সবচেয়ে বড় বাজার চীনেও ব্যবসা থমকে গেছে।
হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব বলেন, ২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতিবর্গফুট কাঁচা চামড়া ১৩০ টাকায়ও বেচাকেনা হয়েছে। এখন সেটা মাত্র ৩০ টাকায় নেমে এসেছে বিশ্ববাজারের দরপতনের কারণে। বিষয়টি মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় কী?
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment