চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ: যুক্তরাষ্ট্রে জুতার দাম যেভাবে বাড়বে
সংবাদ বাংলা: আপনি যদি আমেরিকায় থাকেন, শীঘ্রই আপনার জুতার দাম বেড়ে যেতে পারে। ধরা যাক আপনি দৌড়াতে পছন্দ করেন। তাহলে আপনার জন্য দুঃসংবাদ। জগিং বা দৌড়ানোর জন্য দরকার হয় যে ধরনের জুতা, তার দাম ১৫০ ডলার থেকে বেড়ে ২০৬ ডলার হতে পারে। এটি ‘ফুটওয়্যার ডিস্ট্রিবিউটর্স অব আমেরিকার’ দেয়া হিসেব। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীন থেকে আমদানি করা জুতার ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানোর যে প্রস্তাব করেছেন, তা যদি কার্যকর হয়, তাহলে এমনটাই ঘটবে। এখন একটি মার্কিন পরিবারে যদি সবার জন্য জুতা কিনতে হয়, তাহলে খরচ কতটা বাড়বে।
হিসেব করে দেখা যাক: ধরা যাক আপনার ছোট ছেলে। তর তর করে বড় হচ্ছে। জুতার সাইজ কেবলই বদলে যাচ্ছে। তার জুতার দাম এখন ১০ ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৫ ডলারে। আপনার কিশোরী মেয়ে। মাত্র বাস্কেটবল খেলা শুরু করেছে। তার জুতার দাম ১৩০ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৭৯ ডলার। আপনার স্ত্রী তার জন্মদিনের জন্য উপহার চায় একজোড়া হান্টিং বুট। সেতো অনেক টাকা। ১৯০ ডলারের জায়গায় এখন গুনতে হবে ২৪৯ ডলার। কাজেই কেবল জুতার জন্যই একটি মার্কিন পরিবারকে অতিরিক্ত ১৬৯ ডলার খরচ করতে হবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তো কেবল জুতার ওপর শুল্ক বসাচ্ছেন না। এই শুল্ক আরোপ করছেন আরও অনেক কিছুর ওপর- গরুর মাংস, ফ্রোজেন ফল-মূল থেকে শুরু করে শাক-সব্জি পর্যন্ত। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদরা গবেষণা করে দেখেছেন, মার্কিন ভোক্তারা এখন ১২ শতাংশ বেশি দামে ওয়াশিং মেশিন কিনছেন। ড্রায়ারের দামও বেড়ে গেছে।
কাজেই গড়পড়তা মার্কিন পরিবারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের প্রভাব বেশ ভালোই পড়বে। আমেরিকান অ্যাপারেল এন্ড ফুটওয়্যার এসোসিয়েশন (এএএফএ) হিসেব করে দেখাচ্ছে চার সদস্যের একটি মার্কিন পরিবারকে কাপড়-চোপড়, জুতা, বেড়াতে যাওয়ার নানা জিনিস এবং অন্যান্য কিছু আইটেম বাবদ প্রায় পাঁচশো ডলার অতিরিক্ত খরচ করতে হবে। তবে অর্থনীতি বিষয়ক একটি কনসাল্টিং প্রতিষ্ঠান ট্রেড পার্টনারশীপ ওয়ার্ল্ডওয়াইড অনুমান করে দেখিয়েছে, আমদানি শুল্কের কারণে গড়পড়তা একটি পরিবারে আসলে খরচ বাড়বে ২ হাজার ৩ শ ডলার পর্যন্ত।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ১০ই মে চীন থেকে আরও প্রায় বিশ হাজার কোটি ডলারের আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার ঘোষণা দেন। এর পাল্টা চীন প্রায় ছয় হাজার ডলারের মার্কিন আমদানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসায়। জুন মাসের ১ তারিখ হতে এই শুল্ক কার্যকর হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তখন বলেন, তিনি চীনের বিরুদ্ধে এর পাল্টা আরও ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। যেসব পণ্যের ওপর এখনো শুল্ক বসানো হয়নি, সেগুলোর ওপরও ২৫ শতাংশ শুল্ক বসাতে পারেন। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকরা চাইলে দেশে তৈরি পণ্য কিনে শুল্ক দেয়া এড়াতে পারেন। বা তারা ইন্দোনেশিয়া বা ভিয়েতনাম থেকে পণ্য আনতে পারেন, যেসব দেশের ওপর এই শুল্ক বসানো হয়নি। তবে আমেরিকান অ্যাপারেল এন্ড ফুটওয়্যার এসোসিয়েশনের (এএএফএ) প্রধান নির্বাহী রিক হেলফেনবিয়েন বলছেন, ব্যাপারটা অত সহজ নয়। যদিও এসব দেশ থেকে আমদানি বাড়ছে, জুতা তৈরি অত সহজ নয়। এটার জন্য যে ধরনের দক্ষতা আর প্রযুক্তি দরকার, সেটাও একটা দেশ থেকে আরেক দেশে দ্রুত নিয়ে যাওয়া যায় না।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া জুতার ৭২ শতাংশ এবং কাপড়-চোপড়ের ৪১ শতাংশ আসে চীন থেকে। ব্যবসায়ীদের আরেকটি সংগঠনের মুখপাত্র অ্যান্ডি পল্ক বলছেন, চীন থেকে যে ধরনের জুতা আমদানি করা হয়, তার অনেক জুতা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরিই হয়না। আর যদি কোন জুতা তৈরি হয়, তার উৎপাদন খরচ পড়ে অনেক বেশি।
যেমন এক জোড়া হাইকিং বুটের দাম পড়বে ৩০০ ডলার। রানিং শু কিনতে খরচ হবে দেড়শো ডলার।
বাণিজ্য যুদ্ধ কেন?
চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বসালে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে কম হবে, তত্ত্বকথা তাই বলে। এর ফলে ভোক্তারাও মার্কিন পণ্য কিনতে উৎসাহিত হবেন। আর বাণিজ্য যুদ্ধে দরকষাকষির জন্য এটাকে একটা অস্ত্র হিসেবেও গণ্য করা যেতে পারে। যদিও এই আমদানি শুল্কের কারণে মার্কিন অর্থনীতির ক্ষতি হবে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আশা করছেন দীর্ঘমেয়াদে এটি আসলে চীনা অর্থনীতিকে আঘাত হানবে।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment