চোর পোষা তার কাজ
সংবাদ বাংলা: লোকে শখ করে নানা ধরনের পশুপাখি পোষে; কিন্তু তিনি পোষেণ চোর। একদল চোরকে নিয়েই তার কারবার। চুরির মালামাল কেনা, চোরদের দেখভাল, চুরি করতে না পারলে হাতখরচ দেওয়া- সবই করতেন একহাতে। এক সময় সরকার সমর্থক একটি সংগঠনের নেতা হলেও এখন আর নেই কোনো পদে। তারপরও পুরনো পরিচয়ের আড়ালেই কাজটি করে আসছিলেন অনেকদিন ধরে। অবশেষ পুলিশের জালে আটকা পড়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম নগরীতে বেশ কয়েকটি বড় চুরির ঘটনার এই ‘নাটের গুরু’ সোহেল ওরফে সাল্লুকে (৩৫) বুধবার রাতে নগরীর দিদার মার্কেট এলাকা থেকে একটি দেশি বন্দুকসহ গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। সোহেল চোরদের কাছ থেকে মালামাল সংগ্রহ করার কথা পুলিশের কাছে স্বীকারও করেছেন।
তিনি নিজেকে বাকলিয়া ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দাবি করলেও সংগঠনের স্থানীয় নেতারা বলেছেন, সোহেল ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের আগের কমিটিতে থাকলেও বর্তমান কোনো পদে নেই।
আনোয়ারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাতে দিদার মার্কেট এলাকা থেকে অস্ত্রসহ সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার বাসা থেকে তিনটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালঙ্কারসহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয় বলে জানান ওসি মহসিন। গত ২০ অগাস্ট নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আনোয়ার হোসেন ওরফে মালিঙ্গার সঙ্গে মাসুম আলী ও জিল্লুর রহমান নামের তিন যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই আনোয়ারই ২১ অগাস্ট চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সরোয়ার জাহানের আদালতে জবানবন্দি দেন।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, সম্প্রতি আমরা চোর চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। তাদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন নামের একজন আদালতে জবানবন্দিতে জানিয়েছে বাকলিয়ার সোহেল তাদের ‘বড় ভাই’। এ ‘বড় ভাইয়ের’ নির্দেশেই নগরীর বাসাবাড়িতে চুরি করে তারা। আর চোরাই মালামাল তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন ‘বড় ভাই’ সোহেল। বিনিময়ে তাদের দেওয়া হয় হাত খরচের টাকা। আর চুরি করতে না পারলেও হাত খরচ দিত সে।
পুলিশের ভাষ্য, আনোয়ার একসময় রাস্তায় কাগজ কুড়াতেন। পরে লোহা কুড়ানোর পাশাপাশি সুযোগ পেলে চুরি করে লোহা বিক্রি করতেন। বছর পাঁচেক আগে বাকলিয়ার বগার বিলের কথিত বড় ভাই সোহেল তাকে বেশি আয়ের লোভ দেখিয়ে বাসাবাড়িতে চুরির পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শেই আনোয়ার বাসাবাড়িতে চুরি শুরু করেন এবং চুরি করা মালামাল কিনে নেন সোহেল। আনোয়ার ছাড়াও সোহেলের পোষা চোর আছে আরও কয়েকজন। তাদের কাছ থেকে সোহেল প্রতিটি মোবাইল দুই হাজার, ল্যাপটপ তিন হাজার ও স্বর্ণালঙ্কারের জন্য চার হাজার টাকা করে দেয়।
টানা তিন-চারদিন চুরি করতে না পারলে সোহেল তাদের বকাঝকা, এমনকি মারধরও করত। আবার চোরদের পকেটে টাকা না থাকলে ইয়াবা সেবনের টাকাও সে দিত। চুরির মালামাল দেওয়ার পর সে টাকা কেটে রাখা হয় তাদের কাছ থেকে।
পুলিশ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান, দলের তিনজন গ্রেপ্তার হওয়ার সোহেল গা-ঢাকা দেন। আমরা তার বিষয়ে নজরদারি শুরু করেছিলাম। গতকাল সে চট্টগ্রামে আসে। আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দিদার মার্কেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বাকলিয়া শান্তিনগরে তার বাসায় অভিযান চালিয়েছি। তার বাসা থেকে তিনটি ল্যাপটপ, একটি ট্যাব, সাতটি স্বর্ণের আংটি, দুইটি গলার হার ও তিনটি কানের দুল উদ্ধার করেছি।
পুলিশ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তার আনোয়ার কাজীর দেউড়ির একটি বহুতল ভবনের চার তলায় ঈদের আগে চুরি করার তথ্য দিয়েছিলে এবং ওই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছিল। সেই চুরির মালামালও সোহেলের কাছে দেওয়ার কথা পুলিশকে দিয়েছেন আনোয়ার।
সোহেলের বাসা থেকে উদ্ধার করা স্বর্ণালঙ্কার, একটি ল্যাপটপ কাজীর দেউড়ির বাসাটি থেকে চুরি করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ওই পরিবারের সদস্যরা মালামালগুলো শনাক্ত করেছে। তবে আরও দুইটি গলার হার এবং অন্যান্য মালামাল চুরির কথা তারা জানিয়েছে, যা উদ্ধার করা যায়নি।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment