জাদুকর জ্যাক মা’র ‘আলিবাবা’
মোহাম্মদ রেদওয়ান আতিক: আলিবাবা চল্লিশ চোর; সেই আরব্য রজনীর গল্প। সবাই কম-বেশি জানে। এটা বলতেই কারো কারো চোখের পর্দায় ভেসে উঠছে আরব্য রজনী অবলস্বনে আলিফ লায়লার টেলিভিশনে দেখা পর্বগুলোতে। অনেকেই হারিয়ে গেছেন হয়তো! তবে এই আলিবাবা; ছোট পর্দার নায়ক নয়। বাস্তব জীবনের সেরাদের সেরার কাতারে থাকা এক উদ্যোগ; অনন্য এক নাম। পৃথিবীর অন্যতম বড় অনলাইনভিত্তিক কোম্পানি আলিবাবা ডটকম; যার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জ্যাক মা। ভবিষ্যত সুপার পাওয়ার চায়নার শীর্ষ ধনী ব্যাক্তি মা ইউন পেশাগত ভাবে সবাই তাকে জ্যাক মা নামে চিনে। তার নীট সম্পদ এর পরিমান ৪৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। মার্কিন যুক্তরাষ্টের মোট জিডিপির ০ দশমিক ২৪৯ শতাংশ সম্পদ এখন তাঁর।
ধনী হওয়ার দৌড়ে তার সামনে আছে পৃথিবীর শীর্ষ ধনী জেফ বেজোস (১২৫ বিলিয়ন ডলার) বিল গেটস (৯২.২ বিলিয়ন ডলার), ওয়ারেন বাফেট (৮৫.৫ বিলিয়ন ডলার) সহ আরও ১৩জন। এই সম্পদের পরিমান শেয়ার স্টকের উপর ভিত্তি করে বাড়ে কমে। পৃথিবীজুড়ে মানুষ তাকে চেনে তার অটল সংকল্পের কারণে। বারবার ব্যর্থতা আর প্রত্যাখ্যানের মুখোমুখি হয়েও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি, অসম্ভব সব প্রতিকূলতার মোকাবিলা করে পৌঁছেছেন সাফল্যের শিখরে। ২০১৭ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন জ্যাক মাকে পৃথিবীর অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যাক্তি ঘোষনা করে।এবং ফরচুন ম্যাগজিন এ পৃথিবীর ৫০ জন গ্রেট লিডারের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে তার নাম উঠে আসে। এতো যার নাম-ডাক, যশ। শুরুটা কিন্তু মোটেই ভাল নয়।
আলীবাবার সদর দপ্তর হংজু শহর এ অবস্থিত। পূর্ব চীনের ঝ্যাঝিয়াং প্রদেশের রাজধানী হংজু। সর্বাধিক জনবহুল একটি উপ-প্রাদেশিক শহর। বেইজিং থেকে প্রবাহিত প্রাচীন গ্র্যান্ড ক্যানাল জলপথের দক্ষিন দিকে হংজু শহরটি দাড়িয়ে আছে। এটি হংজু উপসাগরের মাথাতে অবস্থিত, যা সাংহাই ও নিংবোকে প্রদেশকে আলাদা করেছে।নবম শতাব্দী থেকে হংজু চীনের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সমৃদ্ধশালী শহরগুলির মধ্যে একটি। হংজু গ্র্যান্ড ক্যানালের ওয়েস্ট লেককে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষনা করেছে।
জ্যাক মা ১৯৬৪ সালে চীনের হংজু শহরে জন্মগ্রহন করেন। মা ১২ বয়স থেকে নিজের থেকে ইংরেজী ভাষা চর্চা শুরু করে এবং মার্কিন পর্যটকদের বিনা পারিশ্রমিকে গাইড হিসেবে সাহায্যে করতেন। রেডিওতে ভয়েস অফ আমেরিকার সম্প্রচার শুনতেন ইংরেজীতে পারদর্শী হতে। জ্যাক মা শৈশবে ছিলেন লিকলিকে শরীরের অধিকারী, পড়ালেখায় কখনোই খুব ভাল ছিলেন না। স্কুলে তাঁর সহপাঠীদের সাথে প্রায়ই মারামারিতে জড়িয়ে পড়তেন। কিন্তু একটি জিনিসে তার দারুণ আগ্রহ ছিলো। জ্যাক মা ১২-১৩ বছর বয়স থেকেই ইংরেজি শেখা শুরু করেন। চীনে তখন ইংরেজি শেখার সুযোগ ছিল না, ইংরেজিতে কোন বইও পাওয়া যেত না। হোটেলে বিদেশি পর্যটকরা আসতেন, তিনি সেখানে গিয়ে বিনে পয়সায় পর্যটকদের গাইডের কাজ করতেন। কৈশোরে টানা নয় বছর তিনি এই কাজ করে গেছেন। এর ফলে তার দুটো অমূল্য শিক্ষা লাভ হয়েছিল- বিদেশিদের সাথে থেকে তিনি পশ্চিমা ঢঙে চোস্ত ইংরেজি বলা রপ্ত করেছিলেন, এবং তাদের নানা অভিজ্ঞতা, তাদের সাথে ঘোরাফেরা জ্যাক মা’র মনকে অনেক বড় করে দিয়েছিল, সীমিত গণ্ডির বাইরে গিয়ে সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন দেখতে শিখেছিলেন। স্কুল আর গুরুজনদের গতানুগতিক শিক্ষার সাথে পর্যটকদের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষার বিস্তর ফারাক। তাই জ্যাক মা কৈশোরেই নিজের জন্য ভিন্ন এক অভ্যাস গড়ে তুলেন- যেটাই পড়তেন, দেখতেন, শুনতেন- সেটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতেন।
এক বার না পারিলে দেখো শতবার: জ্যাকের জীবন শুরু হয় ব্যর্থতা দিয়ে কলেজে ভর্তি হবার সময় থেকেই। চীনে জাতীয় কলেজে ভর্তির জন্য বছরে একবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু জ্যাকের সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পুরো তিন বছর লেগেছিল। হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য তিনি মোট দশবার আবেদন করেন, কিন্তু ১০ বারই প্রত্যাখ্যাত হন। চাকরির বাজারেও বারবার হোঁচট খেতে হয়েছে তাকে। ছোট-বড় প্রায় ত্রিশটি কোম্পানিতে আবেদন করেও কোনো চাকরি পাননি। আমেরিকান টিভি-হোস্ট চার্লি রোজের কাছে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জ্যাক বলেন, “আমি পুলিশের চাকরির জন্য আবেদন করেছিলাম, কিন্তু সেখান থেকেও নাকচ করে দেওয়া হয়। এমনকি আমার শহরে কেএফসি আসার পর সেখানেও আমি আবেদন জানাই। সেখানে চব্বিশ জন আবেদনকারীর মধ্যে আমি ছাড়া অন্য তেইশ জনই চাকরি পায়।” স্নাতক পাশের পর ইংরেজিতে দক্ষতার সুবাদে তিনি একটি স্থানীয় কলেজে বছর পাঁচেক ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। তখন তাঁর বেতন ছিল মাসে ১৫ ডলার। এ সময়ে তিনি স্থানীয় কেএফসি, হোটেল এবং পুলিশে চাকরির আবেদন করেন এবং সবখানে অকৃতকার্য হন! সবখানে পরাজিত হয়ে বেপরোয়া জ্যাক মা এবার সিদ্ধান্ত নিলেন ব্যবসা করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি একটি অনুবাদ প্রতিষ্ঠান চালু করেন, কিন্তু তাতে তাঁর আর্থিক অবস্থার কোন উন্নতি হলো না! সংসারের খরচ চালাতে তখনো তাকে রাস্তায় মাল টানাটানির কাজে শ্রম দিতে হলো।
কিন্তু অনুবাদক হিসেবে কাজ করার সুবাদে তিনি অসাধারণ একটি সুযোগ পেলেন, যেটি তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় চিরদিনের জন্য। ১৯৯৫ সালে একটি চীনা প্রতিষ্ঠানের অনুবাদক হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করার সুযোগ পান। সেই সফরেই তার প্রথম ইন্টারনেটের সাথে পরিচয় ঘটে। ইন্টারনেটের গতি ছিল তখন ভীষণ ধীর। জ্যাক মা’র এক বন্ধু তাকে কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দেয়। তিনি ভয়ে কম্পিউটার স্পর্শই করেননি সেদিন! কারণ চীনে তখন কম্পিউটারের দাম ছিল আকাশছোঁয়া, নষ্ট হয়ে গেলে তখন দাম দিতে পারতেন না তিনি। কিন্তু বন্ধুর উৎসাহে ভরসা পেলেন, কাঁপা কাঁপা হাতে ইন্টারনেটে প্রথম সার্চ করেন। ইতিহাস বদলে দেওয়া একটি মুহূর্তের সূচনা ঘটে এভাবেই।
ব্যবসার আইডিয়া: জ্যাক মা ইন্টারনেট চালাতে গিয়ে লক্ষ্য করলেন “China” বা “Beer” এ দুটি শব্দ কোন অনলাইন তালিকাতে নেই। ব্যাপারটি তাকে ভাবিয়ে তোলে। সফর শেষে চীনে ফিরে এসে তিনি একটি লিস্টিং সাইট চালু করলেন। পরে তিনি সেটি সরকারের কাছে বিক্রি করে দেন। এরপর কিছুদিন তিনি চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তারপর চাকরি ছেড়ে তিনি হুয়াং ঝুতে ফিরে এসে তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে নেমে পড়েন।
“আলিবাবা”র জন্ম: জ্যাক মা ইন্টারনেটভিত্তিক একটা ব্যবসা গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু করেন। তিনি পরিচিত অনেক মানুষকে জিজ্ঞেস করেন, আলিবাবাকে তারা চিনে নাকি? সবাই বললো ‘হ্যাঁ’!’ ‘আলিবাবা ও ৪০ চোর’ গল্পের কারণে সবাই আলিবাবাকে চিনে। তাই তিনি নিজের কোম্পানির জন্য এই নামই গ্রহণ করেন। নাম তো ঠিক হলো, কিন্তু ব্যবসা দাঁড় করানোর জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন জোগাড় হবে কিভাবে? তিনি ব্যবসায় অংশীদারীর জন্য তার ২৪ জন বন্ধুকে বাসায় নিমন্ত্রণ করলেন। ঝাড়া দুই ঘণ্টা তার আইডিয়া সবাইকে বোঝানোর পর তিনি আবিষ্কার করলেন তার আইডিয়ার বিন্দুবিসর্গ কিছুই বোঝেনি কেউ! ২৪ জনের মধ্যে মাত্র ১ জন জ্যাক মা’র পাশে থাকতে রাজি হলো। এতে দমে গেলেন না তিনি, বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে মানুষজন জোগাড় করলেন। ১৮ জন সহপ্রতিষ্ঠাতাকে সঙ্গে নিয়ে তার বাসায় আলিবাবার যাত্রা শুরু হলো। সেদিন তিনি সবাইকে খুব পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন, “আমরা যদি সফল হই, তার মানে হলো চীনের শতকরা ৮০ ভাগ তরুণের পক্ষেই সফল হওয়া সম্ভব!”
কারণ তারা সফল হবেন এটা কল্পনা করাও ছিল কষ্টসাধ্য। কেউ তাদের পেছনে বিনিয়োগ করেনি। না ছিল ক্ষমতা, না ছিল উপরমহলে যোগাযোগ, না কোনো সামাজিক অবস্থান। সম্বল বলতে তেমন কিছুই ছিল না। তারা ১৮ জন ৫ লাখ আরএমবি করে বিনিয়োগ করেছিলেন। সিদ্ধান্ত হয়েছিল অন্তত ১২ মাস এই টাকায় ব্যবসাটা চালিয়ে নেবে। এর মধ্যে যদি কিছু আয় হয়, তবে ব্যবসা চলবে। নতুবা অন্য কিছু ভাবতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এখানেও পিছু ছাড়লো না, আট মাসের মাথায়ই তাদের সব অর্থ ফুরিয়ে গেলো! জ্যাক মা পড়লেন অথৈ সাগরে, তাদের নিয়ে কারও কোনো আশা আর ছিল না।
আলিবাবায় ১৮ জন মানুষ শুধু এটাই ঠিক করেছিলেন, তারা আপন বিশ্বাসে অটল থাকবেন, চড়াই-উতরাইগুলো একসঙ্গে পাড়ি দেবেন। বারবার ব্যর্থতার মুখে তাদের কোন স্বপ্ন বা কল্পনা ছিল না, ছিল শুধু একবুক আশা। আলিবাবাতে তারা একটি বি-টু-বি প্ল্যাটফর্ম চালু করেন যেখানে চীনের রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্যের তালিকা দিতে পারবে। সেই তালিকা দেখে যেন বিদেশী ক্রেতারা এসব পণ্য ক্রয় করতে পারে। ২০০২ সালে আলিবাবা ডটকমের ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাড়ায় প্রায় দশ লক্ষ।জ্যাক এই সাফল্যে অনুপ্রাণীত হয়ে চীনা ভোক্তাদের জন্য একটি খুচরা পণ্য বিক্রয়কারী সাইট টাওবাও ডটকম তৈরী করে। এবং লেনদেনের সুবিধার জন্য এর মাধ্যম হিসেবে অনলাইন পেমেন্ট সিষ্টেম আলী পে চালু করে।
ব্যবসার কাজ সম্প্রসারন করার জন্য জ্যাক একটি ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন অংশীদার খুঁজছিলেন ফলে পূর্বপরিচিত ইয়াহুর সহ-প্রতিষ্ঠাতা জেরি ইয়াং মাধ্যমে তা সম্ভব হয়ে উঠে।জেরি ইয়াং ২০০৫ সালে আলীবাবা ডট কম ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন ইয়াহুর মাধ্যমে এবং আলীবাবার ৪০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেন।এর ফলে আলীবাবা নতুন একটি নতুন ব্যবসায়ীক যুগের সূচনা করে বিশ্ব বাজারে অনলাইনে পণ্য বিক্রয় সম্প্রসারিত হয়। যদিও চায়নার অভ্যন্তরীন বাজারে আলীবাবার একক আধিপত্য ছিল।
আস্তে আস্তে জ্যাক তার কোম্পানিকে গ্লোবাল ই-কমার্স সিস্টেমের আওতায় উন্নীত করার চেষ্টা করেন। সে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ২০০৩ সালে টাওবাও ডটকম, আলী পে, আলী মামা এবং লিনক্স নামের চারটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এর মধ্যে টাওবাও মার্কেটপ্লেস বেশ দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। সে সময় বর্তমান বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তর ই-কমার্স কোম্পানি হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করা ইবে (ebay) থেকে আলিবাবাকে কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু জ্যাক মা তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং ইয়াহুর সহ-প্রতিষ্ঠাতা জেরি ইয়াং থেকে পাওয়া এক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ নিয়ে তার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতে থাকেন। তার সঠিক সিদ্ধান্ত, বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ এবং হাল ছেড়ে না দেয়ার ফলাফল হিসেবে আলিবাবা বর্তমানে বিজনেস-টু-বিজনেস, বিজনেস-টু-কাস্টমার এবং কাস্টমার-টু-কাস্টমার সার্ভিস দেয়া কয়েকশ বিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।আলী পের প্রায় ৮০০ মিলিয়নেরও বেশী নিবন্ধিত ব্যবহারকারী রয়েছে এর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটির ১৯০ মিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে এবং প্রতিদিন ৪৫ মিলিয়ন লেনদেন পরিচালনা করে।
আলীবাবা ডট কম ২০১৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তার প্রাথমিক পাবলিক শেয়ার/স্টক বিক্রি করে নিউইর্য়ক স্টক এক্সচেঞ্জে এ। আলীবাবা স্টক প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার আয় করে।যা তৎকালীন সময়ে নিউইর্য়ক স্টক এক্সচেঞ্জে এর ইতিহাসে মার্কিন যুক্তরাষ্টে তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানির সব্বো্চ্চ পুঁজি উওোলন।এবং জ্যাক মার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমান দাড়ায় প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭ সালের নভেম্বর এর হিসাব অনুযায়ী
আলীবাবার বাজার মুলধন প্রায় ৪৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।যা আলীবাবাকে বিশ্বের ১০ টি বৃহত্তম কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটিতে পরিনত করেছে। জ্যাক মা এখন চায়নার শীর্ষ ধনী।জ্যাক ভবিষ্যত পরিকল্পনা হল ২০২০ সালের মধ্যে আলীবাবার প্লাটফরম ব্যবহার করে এক ট্রিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পন্য বিক্রী করার এবং ২০৩৬ সালের মধ্যে আলীবাবাকে পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্টিত করা।বর্তমানে পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিক শক্তি হচ্ছে যুক্তরাজ্য যা প্রায় ২.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করে থাকে।
আলিবাবা’র সাফল্যের রহস্য: আলিবাবার সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ জ্যাক মা এর ব্যক্তিত্ব। তিনি সবসময়ই মেধাবী ও পরিশ্রমী ব্যক্তিদের পছন্দ করেন এবং তাদের সাহায্য করে থাকেন। তাই আলিবাবার পরিবেশ এবং তাঁর আচরণ স্বভাবতই মেধাবীদেরকে দারুণ আকর্ষণ করে। তিনি তার কর্মচারীদের বলেন তাদের অর্জিত সম্পদ মানবকল্যাণে ব্যয় করার জন্য। তাদের কাজ মানুষের জীবন বদলে দেবে এমনটিই তিনি আশা করেন সবার কাছ থেকে। আলিবাবা’র সাফল্যের আরেকটি প্রধাণ কারণ প্রতিষ্ঠানটিতে বিপুল পরিমাণ নারী কর্মী কাজ করেন। শুধু আলিবাবাতেই ৪৭ শতাংশ কর্মী হচ্ছেন নারী, এছাড়া তাদের সব অফিস মিলিয়ে ৫৩ শতাংশ কর্মী নারী। আলিবাবার ম্যানেজমেন্টে ৩৩ শতাংশ হচ্ছেন নারী, আরও উচ্চপর্যায়ে নানা পদে আছেন ২৪ শতাংশ। জ্যাক মা’র দর্শন হচ্ছে, নিজে জিততে চাইলে অন্যকেও স্বাবলম্বী করতে হবে। নারী-পুরুষ সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যদি অন্যের অবস্থার উন্নতি করতে পারি তবেই সাফল্য আসবে। আরেকটি বড় কারণ রয়েছে সাফল্যের সূত্র হিসেবে, সেটি হচ্ছে বিশ্বাস। শুরু থেকেই জ্যাক মা অনলাইনে বিশ্বাসের একটি জায়গা তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছেন। স্বভাবতই আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে মানুষ একে অন্যকে কম বিশ্বাস করে। এমনই পরিস্থিতিতে আলিবাবা প্রতিদিন ৬ কোটি বার লেনদেন করে থাকে! অনলাইনে মানুষ কেউ কাউকে সামনাসামনি দেখে না, চেনে না।
জ্যাক মা বলেন, “আমি আপনাকে চিনি না, কিন্তু আপনাকে পণ্য পাঠাই। আপনিও আমাকে চিনেন না, কিন্তু টাকা ঠিকই পরিশোধ করেন। আমরা এখানে বিশ্বাসের জায়গাটা বড় করার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছি।”
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment