ডেঙ্গুতে বাড়ছে মৃত্যু
সংবাদ বাংলা: রোববার সকালে প্রথম মৃত্যুর খবরটি পাওয়া গেল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহাবুদ্দীন কোরেশীর স্ত্রী সৈয়দা আক্তার (৫৪)। এরপর খুলনায় দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন খুলনার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম আবদুর রাজ্জাক। মাগুরা সদর উপজেলার পুটিয়া গ্রামের জয়া সাহা নামে এক গৃহবধূ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সন্ধ্যায় আরও একটি করুণ মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল। রাজধানীর জাপান ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ইডেন কলেজের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ছাত্রী শান্তা তানভীর। গাজীপুরের মেয়ে শান্তা লেখাপড়ার জন্য থাকতেন ঢাকার হাজারীবাগে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত দ্বীপালী নামে এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকার বাইরেও কয়েকজন ডেঙ্গু আক্রান্তের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন আমাদের সময়ের আলোর প্রতিনিধিরা। গত এক সপ্তাহে প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের বরাত দিয়ে ডেঙ্গুতে অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যুর তথ্য এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
এই মৌসুমে রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। রোববার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৬৫ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ১৭১২ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। ডেঙ্গু আতঙ্কে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে এই রোগ পরীক্ষার হিড়িক পড়ায় ডেঙ্গুর পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিটের সংকট দেখা দিয়েছে বাজারে, দামও বেড়েছে কয়েক গুণ। কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতাল ডেঙ্গু পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই অবস্থায় রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুরোধ করা হয়েছে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডেঙ্গুর পরীক্ষা না করাতে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত মোট ২৭ হাজার ৪৩৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৯ হাজার ৭৬১ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
মোট ৭ হাজার ৬৫৮ জন এখনও চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে রাজধানীর ৩৮টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ হাজার ৯৬২ জন ডেঙ্গু রোগী। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ভর্তি আছেন ২ হাজার ৬৯৬ জন।
২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া ২০৬৫ জন নতুন রোগীর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ১৫৯ জন এবং রাজধানীর বাইরে সারা দেশে ৯০৬ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৮৭০ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন, তাদের মধ্যে, রাজধানীতে এক হাজার ৫৩ জন এবং রাজধানীর বাইরে সারা দেশে ৮২১ জন। অর্থাৎ, ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
পুরো জুলাই মাসে সারা দেশে ১৬ হাজার ২২৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আর অগাস্ট মাসের প্রথম চার দিনেই হাসপাতালে গেছেন ৯ হাজার ৬ জন ডেঙ্গু রোগী। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ১৮ জনের মৃত্যুর তথ্য এ পর্যন্ত নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যদিও গণমাধ্যমের খবরে মৃত্যুর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি।
রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এসব জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ২২১ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮০ জন, খুলনা বিভাগে ১৫০ জন, রাজশাহী বিভাগে ১১২ জন, বরিশাল বিভাগে ৯৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬১ জন, রংপুর বিভাগে ৪৭ জন এবং সিলেট বিভাগে ৩৬ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে।
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার আবহাওয়াবিদ নাজমুল হোসেনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শারমিন আক্তারের (২৫) মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোর সাড়ে ৪টায় ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি মারা যান। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শারমিন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তার বাড়ি জয়পুরহাটে। গত শুক্রবার জ্বর নিয়ে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি হলে শারমিনের ডেঙ্গু ধরা পড়ে। কিন্তু রক্তের প্লাটিলেট না বাড়ায় জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য শারমিনকে ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন। এর পর গত শনিবার রাতে শারমিনকে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন আজ ভোর সাড়ে ৪টায় তিনি মারা যান।
খুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে খাদিজা বেগম (৪০) নামে আরও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে খুলনা নগরীর সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। খাদিজা বেগম বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তর তাফালবাড়ি গ্রামের দুলু মোল্লার স্ত্রী। সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত সাড়ে ৯ টায় ‘ডেঙ্গু শকড সিন্ড্রোম’ নিয়ে খাদিজা বেগম হাসপাতালে ভর্তি হন। তার রক্তে প্লাটিলেট কাউন্ট খুবই কম ছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার সকালে তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গত দুই দিনে খুলনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুই নারী ও এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হলো।
রোববার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহাবুদ্দীন কোরেশীর স্ত্রী ৫৪ বছর বয়সি সৈয়দা আক্তার। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে পুলিশের এআইজি (গণমাধ্যম) সোহেল রানা জানান। পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা একেএম কামরুল আহছান বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৩০ জুলাই রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে শনিবার তাকে স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কোরেশী দম্পতির ৪ সন্তানের মধ্যে একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তিন ছেলের একজন মেডিকেল কলেজের ছাত্র, একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও একজন নটর ডেম কলেজে পড়ছেন। তিনি জানান, এ পর্যন্ত দেশে পুলিশ সদস্যসহ তাদের পরিবারের ১৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের অর্ধেক পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪৮ জন ও ঢাকার বাইরে দুজন। এর মধ্যে ৩০ জুলাই পুলিশ কনস্টেবল মো. দুলাল হোসেনের স্ত্রী রুপা আক্তার (২৭) ঢাকার শ্যামলী ট্রমা সেন্টার অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরদিন পুলিশের এসআই কোহিনূর বেগম নীলা (৩৩) মোহাম্মদপুর সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment