তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে তৈরি বিভিন্ন দেশ, অস্ত্রের ঝঙ্কার
সংবাদ বাংলা: সিরিয়াকে ঘিরে শক্তি প্রদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েকটি দেশকে। একদিকে আমেরিকা যার সঙ্গে রয়েছে ব্রিটেন ও ফ্রান্স। অন্যদিকে রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, তুরস্ক এবং ইরান। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে তৈরি হয়েছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা। কারণ সিরিয়ার পূর্ব গৌতায় রাসায়নিক অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে। গত ৭ এপ্রিল দামাস্কাসে রাসায়নিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মৃত্যু হয় কমপক্ষে ১০০ জনের।
এখানেই শেষ নয়। চলতি মাসের প্রথম দিকে হোমসের টি–ফোর বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইজরায়েল। প্রাণ যায় চারজন ইরানি সেনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায়— বর্বরতা এবং নৃশংসতার বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত শক্তির প্রয়োগ! তারই পাল্টা হিসাবে মস্কো রুশ সেনাকে প্রস্তুত থাকতে বলেছে। ৮ বছরের জন্য চাল, ৩–৭ বছরের জন্য ওটমিল মজুত করতে। ওষুধ এবং তেজস্ক্রিয়তা রুখতে মজুত করতে হবে আয়োডিনও। এমনকী ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দাবি করেন, ‘তাঁরা ট্রাম্পকে এটাও বুঝিয়েছিলেন যেখানে রাসায়নিক অস্ত্র ভাণ্ডার রয়েছে বলে সন্দেহ, শুধু সেখানেই হামলা সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।’ সুতরাং পরিকল্পনা করেই যে এই ক্ষেপনাস্ত্র হামলা করা হয়েছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
এই পরিকল্পিত হানা দিয়ে বাশার আল আশাদের সরকারকে নিজেদের শক্তি জাহির করে দেওয়া গিয়েছে। আবার দেখে নেওয়া গিয়েছে সিরিয়ার পাশে কারা কারা রয়েছে। সেই হিসাবেই পরবর্তী স্ট্র্যাটেজি সাজানো হবে। আমেরিকার এই ফাঁদে ইতিমধ্যেই রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, তুরস্ক এবং ইরান পা দিয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে পুতিনের হুঁশিয়ারি, ‘সিরিয়ার ওপরে এরপরে আমেরিকা আর কোনও আঘাত করলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ভয়ঙ্কর গোলমাল তৈরি হবে। সারা বিশ্বকে ভুগতে হবে তার জন্য।’ ফলে রাশিয়া এখন মরিয়া নিজেদের শক্তি জাহির করতে। সব মিলিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগতে চলেছে বলে অনেকে মনে করছেন।
শনিবারই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ সিরিয়ার উপর মিসাইল হানাকে আগ্রাসন আখ্যা দেওয়া রাশিয়ার প্রস্তাবকে সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে। রাশিয়ার আহ্বানে ডাকা নিরাপত্তা পরিষদের ওই জরুরি বৈঠকে আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেন ছাড়া রুশ প্রস্তাবের বিরোধিতায় ভোট দেয় নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, কুয়েত, পোল্যান্ড এবং আইভরি কোস্ট। ইথিওপিয়া, কাজাখস্তান, ইকোয়েটোরিয়াল গিনি এবং পেরু ভোটদানে বিরত ছিল। তাই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগার সম্ভাবনা তৈরি হতেই যে যার মত করে জল মেপে নিতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই রাশিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম দেশের মানুষকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য তৈরি থাকতে বলেছে। কিন্তু সিরিয়ায় হামলা যে সঠিক তা প্রমাণ করতে এই তিন দেশের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান ও রাশিয়াকে আমি জিজ্ঞাসা করছি কোন দেশ নির্দোষ পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের গণহত্যা করতে সাহায্য করে?’ ব্রিটিশ মুখ্যমন্ত্রী টেরেসা মে বলেন, ‘সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র যাতে না ব্যবহার করা হয়, তাই এই অপারেশনে অংশ নিয়েছেন তাঁরা৷’ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আমেরিকা ও ব্রিটেনের সঙ্গে ফ্রান্স অপারেশনে যোগ দিয়েছে তার কারণ সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারিক প্রয়োগ৷’ যুক্তি–তর্ক যাই থাক, আপাতত এই দেশগুলি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য অস্ত্রে শান দিয়ে নিচ্ছে বলেই খবর পাওয়া যাচ্ছে।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment