দেশের প্রথম এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে লালমনিরহাটে
সংবাদ বাংলা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের পরিত্যক্ত বিমানবন্দরেই হচ্ছে দেশের প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অবশেষে পূরণ হতে যাচ্ছে লালমনিরহাটের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি। একই সঙ্গে এখানে একটি বিমান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হবে, এমনকি ভবিষ্যতে এখানে একটি বিমান তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।
বৃহস্পতিবার বিকালে বিকেলে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ করতে লালমনিরহাটে আসেন লালমনিরহাট-২ আসনের সাংসদ ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন লালমনিরহাট-৩ আসনের সাংসদ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, বিমানবাহিনী প্রধান মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এয়ার ভাইস মার্শাল ফজলুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শক সালমান ডেভিডসহ বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাস লালমনিরহাটে হবে, তবে এর একটি শাখা রাজধানী ঢাকার আশকোনায় স্থাপন করা হবে। মন্ত্রী বলেন, দেশের পশ্চাৎপদ, অবহেলিত এবং উপেক্ষিত জেলা হিসেবে লালমনিরহাটের মানুষের কল্যাণে এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ উদ্যোগে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
লালমনিরহাট বিমানবন্দরকে সচল করতে দিনে তিনটি ফ্লাইট চলাচল করতে পারে চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যেই, তিনি এমনটি জানিয়ে বলেন, লালমনিরহাট বিমানবন্দরে স্থাপন করা হবে বিমান তৈরি ও মেরামত কারখানা।
বিমানবাহিনী প্রধান বলেন, লালমনিরহাটে অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটির পাশাপাশি এখানে থাকবে আধুনিক বিশ্বের সমতুল্য এম আর ও বা মেইনটেনেন্স এন্ড রিপেয়ারিং অর্গানাইজেশন অর্থাৎ বিমান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কারখানা। এমনকি এখানে একটি বিমান তৈরির কারখানাও হতে পারে। এখানে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যারা শিক্ষানবিশ থাকবেন, তাদেরকে শেখাতে গেলে সম্পূরকভাবে বিমানবন্দর এবং উড়োজাহাজ নির্মাণ এবং মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কারখানাও থাকতে হবে, বলেন তিনি।
এই বিশাল কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সময়ের প্রয়োজন। যা আজ থেকে পাঁচ-সাত বছরের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে। আর এই কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেলে শুধু বাংলাদেশ নয় নেপাল, ভুটান এবং ভারতের সাতটি অঙ্গরাজ্য তথা এখানকার পুরো অঞ্চলের যোগাযোগ এবং আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হবে, তিনি এমনটি জানিয়ে বলেন, যেহেতু আকাশ যোগাযোগের বিষয়ে বিমান বাহিনী একটি প্রভাবক শক্তি তাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শক সালমান হাসান ডেভিড সাংবাদিকদের বলেন, এয়ারক্রাফট নির্মাণ, মেরামত, স্যাটেলাইট নির্মাণ ও উৎক্ষেপণ, মহাকাশ গবেষণা প্রভৃতি প্রযুক্তিতে বিশ্বের উন্নত দেশ অনেক দূর এগিয়ে গেলেও কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের দেশে ইতিপূর্বে বড় কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং সাহসী পদক্ষেপে দেশে এই প্রথম একটি এভিয়েশন ও অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এ বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংসদে পাস করা হয় এবং ৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য, রেজিস্টার ও ট্রেজারারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান। তিনি বলেন, আশা করছি আগামী বছর জানুয়ারি মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সাতটি অনুষদ, ৩৭টি বিভাগ, চারটি ইনস্টিটিউট রাখার পরিকল্পনা রয়েছে, তিনি উল্লেখ করেন। তিনি জানান, এই অঞ্চলের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ক্যাম্পাস লালমনিরহাটে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সালমান হাসান ডেভিড বলেন, আমাদের সঙ্গে একত্রে কাজ করার লক্ষ্যে বিশ্বের কয়েকটি দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা কেন্দ্র ইতিমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই সাহসী এবং যুগোপযোগী উদ্যোগে আমরা সফলকাম হবো এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশ্বের একটি প্রথমসারির অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত হবে।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment