সোনা আমদানির জট খুলতে যাচ্ছে
সংবাদ বাংলা: ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে সরকার অবশেষে একটি সোনা নীতিমালা করছে, যার খসড়া ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশে দুটি ব্যাংক সোনা আমদানি করবে। তা কিনবেন লাইসেন্সধারী সোনা ব্যবসায়ীরা। কেউ সোনার ব্যবসা করতে চাইলে তাঁকে ১৯৮৭ সালের সোনা ক্রয়, মজুত ও বিতরণ আইনের আওতায় লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্সধারীদের বাইরে কেউ ব্যাংক থেকে সোনা কিনতে পারবে না।
খসড়া নীতিমালাটি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নীতিমালা নিয়ে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে নয়টি সভা হয়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খসড়া নীতিমালার বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষের মতামত নিয়েছে। এখন এসব মতামত সন্নিবেশিত করার কাজ চলছে।
এদিকে নীতিমালা হওয়ার আগে অর্ন্তবর্তী ব্যবস্থা হিসেবে সোনা আমদানির সুযোগ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দিলীপ কুমার আগারওয়ালা বলেন, অর্ন্তবর্তী ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেবে।
খসড়া নীতিমালায় পুরো সোনার ব্যবসাকে একটি শৃঙ্খলা ও জবাবদিহির মধ্যে আনার কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নীতিমালার যে খসড়া করা হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে অবৈধ সোনার ব্যবসা করা কঠিন হবে। কারণ কারা সোনা কিনছে, কোথায় বিক্রি করছে, কতটুকু মজুত আছে-এ সবকিছুই হিসাবের মধ্যে চলে আসবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত বছর জানুয়ারি মাসে সোনা আমদানির জট খোলার উদ্যোগ নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) একটি চিঠি দেন। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি সরকারকে এ ক্ষেত্রে তিনটি প্রস্তাব দেয়। এসবের পরিপ্রেক্ষিতেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সোনা আমদানির নীতিমালা করার উদ্যোগ নেয়। এরপর একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়। খসড়া নীতিমালাটি চূড়ান্ত হওয়ার পর এটির নাম হবে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ ’। এর প্রস্তাবনা অংশে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে বিশ্বে মোট স্বর্ণালংকার রপ্তানি হয়েছে ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি ডলারের। স্বর্ণালংকার উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় দেশ এবং ভারত ও চীন অন্যতম। প্রধান আমদানিকারক দেশ সুইজারল্যান্ড, চীন, যুক্তরাজ্য, হংকং, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলজিয়াম, জার্মানি ও সিঙ্গাপুর। শুরুতে আরও বলা হয়, হাতে নির্মিত স্বর্ণালংকারের ৮০ শতাংশ ভারত ও বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। তবে নানা কারণে বাংলাদেশ এ খাতে রপ্তানিতে ভূমিকা রাখতে পারেনি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাত থেকে বাংলাদেশ ৬৭২ মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় করেছে।
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে ২০ থেকে ৪০ টন সোনা লাগে। যার বড় অংশ বিদেশফেরত বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে, কিছুটা আমদানি করে ও পুরোনো সোনা গলিয়ে সংগ্রহ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সোনা ব্যবসায়ীরা তাঁদের মজুত সোনার কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেন না।
বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা আইন-১৯৪৭ অনুযায়ী শর্ত পালন করে সোনা ও রুপা আমদানি করা যায়। তবে আমদানির আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হয়। তবে ব্যবসায়ীরা এ প্রক্রিয়ায় সোনা আমদানি করতে পারেন না। নীতিমালায় বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকের মাধ্যমে সোনার বার আমদানির পদ্ধতি প্রচলন করা যেতে পারে। শুরুতে দুটি ব্যাংককে এডি ব্যাংক হিসেবে ঘোষণা দেওয়া যেতে পারে এবং পরে আগ্রহী অন্যান্য ব্যাংককেও অনুমতি দেওয়া যায়। এডি ব্যাংক সরাসরি আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে স্বর্ণবার আমদানি করবে এবং সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা কিনবেন।
খসড়া নীতিমালায় আরও উল্লেখ করা হয় যে ব্যবসায়ীরা এডি ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর তাঁদের চাহিদার বিষয়টি ১৫ দিন আগে জানাবেন। এ সময় তাঁরা পূর্ববর্তী বছরের মোট বিক্রির পরিমাণ, রাজস্ব প্রদানের হিসাব, সোনার মজুত ইত্যাদি যাচাই করবেন। এডি ব্যাংক সোনা আমদানি করবে বিনা শুল্কে। তবে বিক্রির সময় তারা সব কর আদায় করবে।
আমদানি করা সোনা ছাড়াও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কিনতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, গ্রাহকের কাছ থেকে কিনতে তার জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি, হালনাগাদ ছবি ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা রাখতে হবে। হিসাবের বাইরে থাকলে সেই সোনা বাজেয়াপ্ত করবে সরকার।
বর্তমান ব্যাগেজ বিধিমালা অনুযায়ী, বিদেশ থেকে ফেরার সময় একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত সোনার বার আনতে পারেন। এতে প্রতি ভরিতে ৩ হাজার টাকা কর দিতে হয়। খসড়া নীতিমালায় এ সুযোগ বছরে দুবার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ব্যাগেজ বিধির অধীনে নিবন্ধিত ব্যবসায়ীদের কর দেওয়া সাপেক্ষে দুই কেজি পর্যন্ত সোনা আনতে দেওয়ার কথাও বলা হয়। মালিকের পক্ষে এই সুযোগ অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।
এ ছাড়া খসড়া নীতিমালায় ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ ও সোনা-গয়না রপ্তানির ক্ষেত্রে নানা প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। বাজুস সভাপতি গঙ্গা চরণ মালাকার বলেন, বৈধ পথে সোনা আমদানির শুল্ক ও কর তুলনামূলক কম হওয়া উচিত, যাতে চোরাই পথে সোনা আনা উৎসাহিত না হয়।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment