নসিবের সঙ্গে পাঞ্জা কষাকষি
একটু আগে এক পচলা বৃষ্টি হলো
সঙ্গে তান্ডব বাতাস,
স’বে আকাশে সূর্য উঁকি দিয়েছে
পরক্ষণে আলোকরশ্নি ছড়াবে
তোমায় আজ বড্ড বেশি মনে পড়ছেÑ
দুই অক্ষরের শব্দ ‘কেন’
ঘুরপাক খাচ্ছে মনের ভিতর।
এভাবেই প্রতিটি ভোরে সূর্য আলোকছড়া থেকে
গোধূলি লগ্নে অন্ধকারে মিশে যাওয়া অবধি
নসিবের সঙ্গে প্রতিনিয়ত পাঞ্জা কষাকষি
আর প্রতিনিয়ত হেরু কুতকুত খেলা।
চাল আর ডালে উতরানো
আগুন গরম খাবার খাচ্ছি
ঘড়ি এইমাত্র ঘণ্টা বাজিয়ে জানান দিলো
বিকেল চারটা।
তুমি, দেখলে হয়তো রাগ করতে
এই সময় খাচ্ছি বলে,
রাধতে গিয়ে হাতটা পুড়ে গেছে
পিয়াজ কাটতে গিয়ে আঙ্গুল কেটে
খানিকটা রক্তও বেরিয়েছে।
বাড়ীভাড়াও মাস কয়েক হলো বেড়েছে
কিন্তু পেনসন বাড়েনি।
আমার ভাড়ায় আমার সঙ্গে থাকে কিছু রুমমেট
টিকটিকি, তেলাপোকা এবং মাকড়সা
এরা সবাই আমার নির্জনতার সঙ্গী।
ওরা বড্ড ভালো
আমায় ছেড়ে যেতে চায়না সহজে
এতো কিছু করলাম তবুও।
তোমার দফাদার সাহেবের কথা মনে আছে
যার সঙ্গে রাতে দাবা খেলার আসর বসাতাম
আগে তো এখানেই উনি আসতেন
এখন আমি গিয়েই তার সঙ্গে খেলি।
বরাবর আগে যেমন জয়মাল্য আমার ভাগে এসে জুটতো
এখন আর তা হয়না,
চালে বড় ভুল করি
সব তালগোল পাকিয়ে যায়।
মাথায় আর কালো চুলের বালাই নেই
চোখেও ভালো দেখিনা
সব আবছা আবছা।
আমার পৃথিবী এখন খুব ছোট হয়ে এসেছে
অজস্র্র অদৃশ্য হাত
বারবার গলা টিপতে আসে
কিভাবে যেন ফসকে বেরিয়ে যাই
কিন্তু নির্জনতা আমায় রেহাই দেয়না।
দেয়ালে ঝুলানো আমার সঙ্গে তোমার তোলা যৌবনের ছবিটায়
অনেক ধুলো জমেছে
পরিস্কার করা হয়না।
কালকে রাস্তায় হাটার সময় পড়ে গিয়ে
চশমার মাঝখানটা ভেঙ্গে গেছে,
হাতে টাকা নেই, কাচটা পাল্টে নেবো।
তোমার ছেলে মেয়েরা বেশ সুখে আছে গো
যেই পুত্রধনকে পড়াতে গিয়ে
ভিটেমাটি সব বিক্রি করেছি
নিউইর্য়কে এক মেমকে বিয়ে করে প্রবাসী হয়ে আছে।
অমবশ্যায় জো¯œার আলোর মতোই
ওর কাছ থেকে পাওয়া চিঠি দুস্পাপ্য।
ওরা আমায় করুণা করতে চায়,
করুণা শুনতে বড্ড খারাপ লাগে
তাই না?
আচ্ছা, আমার মতো নির্জনতায়
ওরা কি কখনো ভুগবে?
তাহলে হয়তো উপলব্দি করবে
আমার নির্মম নির্জনতা।
তুমি ভাবছ, আমি কেমন?
নিজের সন্তানকে অভিশাপ দেই
আমার আগে গিয়ে নিজে রক্ষা পেয়েছ
নির্মম নির্জনতা থেকে
কবে তোমার কাছে আসবো
সেই শেষ দিনটির এখন শুধু অপেক্ষা করি।
নসিবের সঙ্গে প্রতিনিয়ত পাঞ্জা কষাকষি
আর প্রতিনিয়ত হেরু কুতকুত খেলি।
দারূন সুন্দর প্রতিটা অক্ষর কথা বলে। আমার ভাল লেগেছে।