পরীমণির অভিনয়ে আমি সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি: নাছির মাহমুদ
সংবাদ বাংলা: ‘যথাযোগ্য ব্যাক্তিরা যথেষ্ট গভীর ও সঠিকভাবে তদন্ত করছেন। আমি বিশ্বাস করি, তদন্তে সঠিক বিষয়টি বের হয়ে আসবে। আমি তদন্তের উপর পূর্ণ আস্থা রাখছি। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আমার বলা ঠিক হবে না। সেলিব্রেটি নায়িকার অভিনয়ে আমি সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি।’ পরীমনির সাথে গত ৯ জুন ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে শনিবার এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া জানান ব্যবসায়ী নাছির ইউ মাহমুদ। আলোচিত চিত্রনায়িকা পরিমণিকে নিয়ে বোট ক্লাবে ঘটে যাওয়া ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় দেশজুড়ে। সম্প্রতি ব্যবসায়ী নাছির ইউ মাহমুদ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
আইনি ব্যবস্থায় যাবেন কিনা- এই প্রশ্নের জবাবে নাছির মাহমুদ বলেন, আমি রাজনীতি করি, সামাজিক কর্মকানে জড়িত। বিভিন্ন ক্লাবে জড়িত। আমি একজন ব্যবসায়ী। বর্তমানে জামিনে আছি। বিষয়টি বিচারাধীন, তাই এই মুহুর্তে আইনি পদক্ষেপ নিয়ে ভাবছি না। তিনি বলেন, এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। বোর্ড ক্লাবসহ আমার লিগ্যাল অ্যাডভাইজারের পরামর্শে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে পদক্ষেপের কথা জানান। অভিনেতারা চোখে গ্লিসারিন লাগিয়ে কাঁদতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন সেলেব্রিটির অভিনয়ে আমি সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি। সেলিব্রেটিরাই তো সব নয়। আমরাওতো ফেলে দেওয়ার মত নই। সমাজে আমাদেরও অবস্থান রয়েছে। আমরা ব্যবসায়ীরা নিয়মিত কর দেই।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ছিলাম। জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়ার ছিলাম। উত্তরা ক্লাবের মত একটি ক্লাবে তিনবার নির্বাচিত সভাপতি ছিলাম। ব্যবসা করতে গিয়েও কারো সাথে কোনদিন বিরোধ সৃষ্টি হয়নি। আমাকে আটক করার পরও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি।
নায়িকা পরীমনির মামলায় ঢাকা বোট ক্লাবের বিনোদন সম্পাদক ও ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদসহ পাঁচ জনকে উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের গ্রেপ্তারের আগে সাভার থানায় ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন পরীমণি। গত ৯ জুন রাতে পরীমণি বোট ক্লাবে গেলে হত্যা ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। এরআগে পরীমণি তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে ঘটনার বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চান। পরীমনি অভিযোগ করেন, নাসির আহমেদ ওই রাতে তাকে বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেন। তার মুখের ভেতরে মদের বোতল ঢুকিয়ে দেন। পরীমণির সংবাদ সম্মেলনের পর পরই পুলিশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
এসব প্রসঙ্গ টেনে নাছির মাহমুদ বলেন, বোট ক্লাবের ঘটনার ৫ দিন পর একঘন্টার ব্যবধানে বহু ক্যামেরা নিয়ে পরীমণি ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন করেন। প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্পর্শকাতর চিঠি দিলেন। পরীমনি অভিযোগ করলেন কোনো থানায় তিনি রেসপন্স পাননি! অথচ তিনি বনানী থানায় যখন অভিযোগ করতে যান, তখন তিনি মাতাল অবস্থায় ছিলেন। যা আপনারা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে বিভিন্ন টেলিভিশনে দেখেছেন। থানা থেকে তাকে বলা হলো আপনি সুস্থ হয়ে আগামীকাল অভিযোগ দায়ের করেন। আপনি আর গেলেন না। আপনিতো ঘটনার আশেপাশের থানা রূপনগর বা সাভার থানায়ও যেতে পারতেন। কেন যাননি? ঘটনার পাঁচদিনেও কোনো থানায় অভিযোগ কেনো জানালেন না? থানাতো বন্ধ ছিলো না। তাহলে পরিমনি কি করে বললো কোনো থানা তাকে রেসপন্স করেনি?
একটি মানসম্মত ক্লাবে কখনই কোনো অনৈতিক কাজের সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভিযোগ করেছেন, আমি নাকি তাকে হত্যার চেষ্টা করেছি! আমিতো তাকে এ ঘটনার আগে চিনতামই না। পরীমনি নিজেও বলেছে সে আমাকে আগে চিনতো না। তার সাথে আমার কোনো শত্রæতাও ছিলো না। তবে তাকে কেনো আমি হত্যা করতে যাবো?
সেদিন রাতের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি বোট ক্লাবের ডিসিপ্লিনের দায়িত্বে ছিলাম। ৯ জুন রাত সাড়ে বারটায় পরিমনি কয়েকজনকে নিয়ে আসে। এসে মদপান করতে থাকেন। এতেও কেউ বাঁধা দেননি। কিন্তু তিনি নিজ হাত দিয়ে রেক থেকে তিন লিটারের একটি বোতল (মদের ব্র্যান্ডের নাম) নিতে গেলে ক্লাবের ষ্টাফরা বাঁধা দেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন পরীমণি। যা কোনো সভ্য মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়। এই হুইস্কির দাম দেড় লক্ষ টাকা। আর এটা সদস্য ছাড়া বিক্রয়যোগ্য নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এসব নিয়ে পরীমণিকে কর্মচারী বাঁধা দিলে টেবিলে থাকা গ্লাস, প্লেট ভাংচুর করেন। বিষয়টি আমাকে জানালে আমি পরীমণিকে এটা নিতে নিষেধ করি। তাকেও প্লেট ও গøাস ছুঁড়ে আহত করেন। আমি তাদের ক্লাব থেকে বের হয়ে যেতে বলে পরিমনির সাথে আসা জিমি আমার ঘাড়ে একটি ঘুসি মেরে বসে। তখন ক্লাবের আরেক সদস্য শাহ আলম জিমিকে আটক করে। মারামারি বাঁধে জিমি ও শাহ আলমের মাঝে। তখন অন্যান্য সিকিউরিটিরা তাদের আলাদা করেন। পরীমণি যাওয়ার সময়ও দুই বোতল মদ নিয়ে যায়। পরেরদিন ৮৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন অমি। তিনি বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশসহ কোনো দেশেই বারে সিসি ক্যামেরা থাকে না। কারণ, সমাজের উচ্চবিত্ত মানুষ যখন এসব ক্লাবে আসে তখন তারা চায়, এগুলো যাতে প্রকাশিত না হয়। আমি চাই সত্য উম্মেচিত হোক। আইনের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। তারা অবশ্যই সত্য বের করবে।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment