প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফুঁসছে কাশ্মীরিরা
সংবাদ বাংলা: জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর মোবাইল নেটওয়ার্ক, টেলিফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে কাশ্মীরকে বিচ্ছন্ন করে রাখা হলেও অবশেষে শ্রীনগরের চিত্র প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। কাশ্মীরিদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কাশ্মীরে বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠার আশঙ্কা থেকেই অন্যান্য জায়গার সঙ্গে অঞ্চলটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে বুধবার ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে শ্রীনগরের রাস্তায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভে কাশ্মীরের সাধারণ নাগরিকদের শামিল হওয়ার খবর জানিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম।
বিক্ষোভকে ঘিরে সংঘর্ষ, ধরপাকড় এমনকী বিক্ষোভকারী হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে খবরে। গুলিবিদ্ধ এবং আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে অনেকে।অন্তত ১শ’ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাও রয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তবে শ্রীনগরের বাইরের বাকি অংশগুলোর চিত্র কেমন, তা এখনো স্পষ্ট জানা যায়নি। কারণ এখনো বন্ধ ল্যান্ডলাইন, মোবাইল, ইন্টারনেট, ব্রডব্যান্ড, কেবল পরিষেবা। সেগুলো চালু হলে এ প্রতিবাদ-বিক্ষোভ আরও বাড়ারই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত সোমবার ভারতের রাজ্যসভায় সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয় । পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীরকে ভেঙে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির কথাও ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবার লোকসভাও এতে সম্মতি দিয়েছে।
ভারত সরকারের এ একতরফা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার অধিকার আছে কিনা তা নিয়ে দেশের ভেতর এবং আন্তর্জাতিক মহলে নানা বিতর্ক চলছে। কিন্তু এ আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাশ্মীরী জনগণের কণ্ঠস্বর সেটিকেই চুপ করিয়ে রাখা হয়েছে। মূলত এ সিদ্ধান্তের ফল ভুগবে কাশ্মীরিরাই। অথচ তাদের মতামতই কেউ জানতে চাইছে না।
বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে থেকেই নিরাপত্তার কথা বলে জম্মু ও কাশ্মীরে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। রাজ্যের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আব্দু্ল্লাহকে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানকার জনগণকে বিচ্ছিন করে ফেলা হয়েছে।
এতকিছুর পরও রাজ্যের মর্মাহত বাসিন্দারা এখন নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছে। যদিও তাদের অনেকে এখনো কী হতে চলেছে তা বুঝেই উঠতে পারেননি। সেখানকার বসিন্দাদের বরাতে বর্তমান পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেছে বিবিসি।
জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে একটি ওষুধের দোকান চালান রশিদ আলভি। তিনি বিবিসিকে বলেন, সব জায়গায় প্রচুর সেনা কড়া পাহারা দিচ্ছে।“পুরো রাজ্য একটি খোলা কারাগারে পরিণত হয়েছে। মানুষ বেশিদিন এ অবস্থা সহ্য করবে না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক মুসলমান নেতা বলেন, কাশ্মীরের জনগণ এখনো এ ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি। ঠিক কী ঘটেছে সেটা তারা এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি। মনে হচ্ছে শিগগিরই কাশ্মীর উপত্যকায় বিস্ফোরণ ঘটবে।
বিবিসি’র একজন প্রতিনিধি সোমবার থেকে শ্রীনগরে আছেন। তিনি বলেন, “সেখাকার পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে যুদ্ধ চলছে। আমি সব জায়গায় শুধু পুলিশ দেখতে পাচ্ছি। গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোর সামনে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। স্কুল, কলেজ ও বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নগরীর বাসস্ট্যান্ডগুলোতে পর্যটকরা ভিড় করছেন। তারা চলে যেতে চাইছেন, কিন্তু বাসের অভাবে যেতে পারছেন না।
শ্রীনগরের বাইরেও জনগণের মধ্যে একই ধরনের হতাশা ও ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে বলে জানান তিনি। কাশ্মীরের বাসিন্দা আব্দুল খালি নজর বলেন, এসিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কোনো আলোচনাই হয়নি। কেউই এটা মেনে নেবে না। এটা শুনে আমরা মর্মাহত। কেন আপনারা গোপনে এরমক একটি পদক্ষেপ নিলেন? সবার সামনে আসুন এবং আমাদের বলুন এটি ভালোর জন্য করেছেন।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment