প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় পরিবর্তন আসছে
জুন ১৯
১৮:৩৫
২০১৯
- তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা থাকছে না
- এসএসসি ও এইচএসসির পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন
- জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএর বদলে সিজিপিএ
- শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সাজানো হবে পাঠ্যক্রম
- প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তায় প্রশ্নব্যাংক করা হচ্ছে
সংবাদ বাংলা: প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। শিক্ষাদান পদ্ধতি, পঠন, পাঠন, পরীক্ষা গ্রহণ এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হবে। শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী সাজানো হবে পাঠ্যক্রম। শিক্ষাগ্রহণ শেষে শিক্ষার্থীরা যেন শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে পারে সেজন্য ঢেলে সাজানো হচ্ছে পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক। বর্তমানে পুঁথিগত বিদ্যায় সার্টিফিকেটসর্বস্ব পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে কর্মমুখী কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে চাইছে সরকার। ফলাফল প্রকাশে বিদ্যমান গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজের (জিপিএ) পরিবর্তে কিউমুলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ (সিজিপিএ) চালু করা হবে। এতে করে আর জিপিএ-৫ থাকছে না। নবম ও দশম শ্রেণি দু’বছরের প্রস্তুতিতে শিক্ষার্থীরা এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা অংশ নেয়। একইভাবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শেষে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এক্ষেত্রে নবম শ্রেণির পর এবং দশম শ্রেণির পর আলাদাভাবে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হবে। এইচএসসি পরীক্ষাও আলাদাভাবে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। শ্রেণিভিত্তিক মূল্যায়নের মাধ্যমে পাবলিক পরীক্ষায় পরীক্ষা সংখ্যা এবং বিষয় কমানো হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক স্কুলে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এই তিন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি ঠিক করতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। অতিরিক্ত চাপে লেখাপড়া নিয়ে শিশুদের মধ্যে যেন ভীতি তৈরি না হয়, সেজন্য প্রাথমিকে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির সব পরীক্ষা তুলে দিতে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রাথমিকের সচিব আকরাম-আল-হোসেন সাংবাদিকদের জানান, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষার্থীদের কীভাবে মূল্যায়ন করতে পারি, সেজন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে শিগগিরই চ‚ড়ান্ত করা হবে। প্রাক-প্রাথমিকের সময়কাল এক বছর থেকে বাড়িয়ে দু’বছর করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও তিনি জানান। দেশের ৬৫ হাজার ৫৯৩টি সরকারি প্রাথমিক স্কুলে কোনো ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয় না। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সরকারি প্রাথমিকে ২০১৪ সাল থেকে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু করা হয়। পঞ্চম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দেশের সর্ববৃহৎ পাবলিক পরীক্ষা যেখানে ৩৫ লাখ শিশু অংশ নেয়।
এদিকে দেশে-বিদেশে শ্রমবাজারকে টার্গেট করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষায় পরিবর্তন আনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে মাদ্রাসা শিক্ষায়ও আমূল পরিবর্তন আনবে সরকার। শ্রমবাজারে ভবিষ্যতে কী ধরনের পরিবর্তন হবে সেটি বিবেচনায় নিয়ে পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বিশাল শিক্ষার্থী নিয়ে পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ করা খুব দুষ্কর ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এবারের মাধ্যমিকে ২১ লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী ৮০ হাজার কক্ষে পরীক্ষা দিয়েছে। ১ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষক পরীক্ষা কক্ষে দায়িত্ব পালন করেন। এর সঙ্গে আরও ২৫ হাজার শিক্ষক সহযোগী হিসেবে ছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকে প্রায় ৪ হাজার রকমের প্রশ্ন ছাপাতে হয়। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে পরীক্ষা নিতে হয়। প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা ও পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা বিবেচনা করে পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে চাইছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক সময়ের আলোকে বলেন, নবম ও দশম শ্রেণি দু’বছরের প্রস্তুতিতে শিক্ষার্থীরা এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা অংশ নেয়। একইভাবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শেষে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এক্ষেত্রে নবম শ্রেণির পর এবং দশম শ্রেণির পর আলাদাভাবে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। এইচএসসি পরীক্ষায়ও আলাদাভাবে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। শ্রেণিভিত্তিক মূল্যায়নের মাধ্যমে পাবলিক পরীক্ষায় পরীক্ষা সংখ্যা এবং বিষয় কমানো। প্রশ্নের নিরাপত্তায় প্রশ্নব্যাংক করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
অন্যদিকে জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ফলাফলে জিপিএ’র পরিবর্তে সিজিপিএ পদ্ধতি চালুর বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডগুলোর চিন্তার সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। সিজিপিএতে ফলের সর্বোচ্চ সূচক ৪, যা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চালু আছে। আর জিপিএতে ফলের সর্বোচ্চ সূচক ৫, যা পাবলিক পরীক্ষায় চালু আছে। কত নম্বরের মধ্যে সিজিপিএ হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারের মতামত নিয়ে নম্বর বণ্টন করা হবে। দেশে ২০০১ সাল থেকে পাবলিক পরীক্ষায় গ্রেড পদ্ধতি চালু হয়। সৌজন্য: দৈনিক সময়ের আলো
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment