ফোর্বসের সেরাদের মধ্যে দুই বাংলাদেশি তরুণ
সংবাদ বাংলা: মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস–এর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সেরা ৩০০ তরুণ উদ্যোক্তার তালিকায় স্থান পেয়েছেন দুই বাংলাদেশি। তাঁরা হলেন আয়মান সাদিক ও সাজিদ ইকবাল। এশিয়া মহাদেশকে নানা ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা তরুণদের নিয়ে গত সোমবার এ তালিকা প্রকাশ করে ফোর্বস।
‘৩০ আন্ডার ৩০ এশিয়া ২০১৮’ নামের এই তালিকায় ১০ শ্রেণিতে ৩০ জন করে ৩০০ তরুণের নাম রয়েছে। আয়মান ও সাজিদ দুজনই সামাজিক উদ্যোক্তা শ্রেণিতে স্থান পেয়েছেন। তালিকায় স্থান পাওয়া সবারই বয়স ৩০–এর নিচে। এদের মিলেনিয়ালস বলা হয়। এর মধ্যে আয়মান সাদিকের বয়স ২৬ ও সাজিদ ইকবালের বয়স ২৭। আয়মান সাদিক অনলাইনভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টেন মিনিটস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। শিক্ষামূলক সংগঠন হিসেবে ২০১৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। টেন মিনিটস স্কুল ইউটিউব ও ফেসবুকে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আলোচনার ভিডিও প্রকাশ করে। বাংলায় ভিডিও চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি অনলাইনে সরাসরি ক্লাসও করানো হয় এই অনলাইন স্কুলে। ফোর্বস বলছে, আয়মান সাদিকের এ অনলাইন স্কুল শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শত শত লাইভ ক্লাস, স্মার্ট বই, হাজার হাজার ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরি করে। বর্তমানে দেড় লাখের বেশি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছেছে এই স্কুল। ফোর্বস–এর স্বীকৃতি পাওয়ার আগেই টেন মিনিটস স্কুলের জন্য অনেক স্বীকৃতি পেয়েছেন আয়মান সাদিক। চলতি বছর ব্রিটেনের রানির ‘কুইনস ইয়াং লিডারস অ্যাওয়ার্ড ২০১৮’ পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া তিনি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আইসিটি জোটের (এপিকটা) সেরা ই-লার্নিং পুরস্কারও পেয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের স্বীকৃতি পেয়েছে টেন মিনিটস স্কুল। পরিবেশ রক্ষায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত চেঞ্জ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের জন্য ফোর্বস-এর তালিকায় স্থান পেয়েছেন সাজিদ ইকবাল (২৭)। তিনি ২০১২ সালে চেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন। প্ল্যাস্টিকের বোতল ব্যবহার করে পরিবেশসম্মত বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করতে উদ্যোগটি নেন সাজিদ। ‘বোতলবাতি’ নামে এই প্রকল্পটি ব্যাপক সাড়াও পেয়েছে।
সূর্যের আলো ব্যবহার করে তৈরি হয় এই বোতলবাতি। বিদ্যুৎ কেনার সামর্থ্য নেই—এমন মানুষের জন্য এই বোতলবাতির যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখন শুধু অন্ধকার ঘরেই নয়, বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পরিবেশসাশ্রয়ী বাতি পৌঁছে দিতে সোলার পাইপ লাইট নামের আরেকটি প্রকল্প নিয়েও কাজ করছে চেঞ্জ। ফোর্বস বলেছে, জার্মানির একটি সংস্থার সহায়তায় বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া অন্তত ৪ হাজার মানুষের ঘরে বোতলবাতির আলো পৌঁছে দিয়েছেন সাজিদ। তাঁর এই প্রতিষ্ঠান সৌর লণ্ঠন, সড়কবাতি, খুদে সেচপাম্প প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে। এর আগে বাংলাদেশের এই তরুণ উদ্যোক্তা মুহাম্মদ ইউনূস পদক, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর, ব্রিটেনের কুইন্স ‘ইয়াং লিডারস অ্যাওয়ার্ডস ২০১৭’ পুরস্কারও পেয়েছেন।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৪টি দেশ থেকে ২ হাজার তরুণের উদ্যোগকে ফোর্বস-এর এ তালিকার জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়। এরপর সেখান থেকে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত তালিকাটি প্রকাশ করা হয়। ফোর্বস-এর ওই তালিকায় প্রথমবারের মতো আজারবাইজান, উত্তর কোরিয়া ও ফিজির তরুণেরা স্থান পেয়েছেন। ভারত ও চীনের তরুণেরা এ তালিকায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন। ভারতের ৬৫ জন ও চীনের ৫৯ জন এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন। ভারতের তরুণেরা ১০টি শ্রেণির সবগুলোতেই জায়গা করে নিয়েছেন। আর প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন উদ্যোগে এশিয়ায় সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন চীনের তরুণেরা।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment