এগিয়েছে নারীরা
বাংলাদেশে গত দেড়-বছরে পুরুষদের তুলনায় নারীদের কর্মসংস্থান বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ বলছে, দেশে ১৪ লাখ লোকের কর্মসংস্থান বেড়েছে এবং তার মধ্যে নয়-লাখই নারী। গবেষকরা বলছেন, এবারই প্রথম কর্মক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীরা অধিক হারে এগিয়ে গেলো।
কিন্তু পুরুষদের এই পিছিয়ে পড়ার কারণ কি?
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অরণী ঢাকার অভিজাত একটি বিপণী বিতানে মোবাইল সেটের বিক্রয়-কর্মী হিসেবে কাজ করেন। তিনি জানান, বাবা মারা যাওয়ায় তার রোজগারেই নিজের লেখাপড়া এবং ময়মনসিংহে তার পরিবারের খরচ চলছে। এরকম আরও অসংখ্য নারী বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।
জরিপের প্রকল্প পরিচালক এবং পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিচালক কবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, “যে খাতগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে তার মধ্যে কৃষিকাজ বা বেতনহীন পারিবারিক শ্রম দান থেকে নারীরা বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে নারী কর্ম সংস্থানের একটি বড় অংশ যায় তৈরি পোশাক শিল্পে তার বদলে চাকরী, বিক্রয়-কাজ, ব্যবসা ইত্যাদিতে যুক্ত হয়েছে তারা। অন্যদিকে নতুন কাজে গত ২০ বছর ধরেই ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে যে পুরুষরা পিছিয়ে পড়েছে। কিন্তু এগিয়ে গেছেন নারীরা”।
বাংলাদেশে একসময় আলঙ্কারিক অনেক পদে নারীদের অংশগ্রহণের কথা বলা হলেও এখন তারা অনেক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কাজ করছে। আবার একইসঙ্গে বহু ক্ষেত্রে নারীদের কাজের সুযোগ দেয়া হচ্ছে নিচের দিকের পদগুলোতে। তেমনটাই মনে করেন,বিআইডিএস এর সাবেক গবেষক ড রুশিদান ইসলাম রহমান।
নারীদের এই সংখ্যা বৃদ্ধি তাদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কতটা ভূমিকা রাখছে? সে প্রশ্নটি থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করেন ড. রহমান। তিনি বলেন, এভাবে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। সেটা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। কিন্তু আসল কথা হল এসব ক্ষেত্রে নারীরা মূলত নিয়োগপ্রাপ্ত হচ্ছে আধা দক্ষ কিংবা অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে। ফলে তাদের বেতনও দক্ষ শ্রমিকদের থেকে অনেক কম। অন্যদিকে দক্ষ শ্রমকি বা অতি দক্ষ বা পেশাদার ম্যানেজারিয়াল এসব ক্ষেত্রে কিন্তু পুরুষদের অনুপাতটা বেশি-ই থেকে যাচ্ছে। এর ফলে এক্ষেত্রে বৈষম্য থাকছেই”।
পূর্ণকালীন কর্মজীবীরা ছাড়াও এখন অনেক মেয়েরা লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করছেন নিজের ও পরিবারের আর্থিক সংস্থানের জন্য। শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা নারীরাও যোগ্যতা অনুসারে কাজ খুঁজে নিচ্ছেন। ব্র্যাক এর প্রতিষ্ঠান আড়ং এর একটি আউটলেটে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করা অষ্টম শ্রেণী পাশ রোজিনা আক্তার যেমন মনে করেন, তার পক্ষে এটাই বা কম কি?
এই পরিবর্তন প্রসঙ্গে গবেষক ড. রহমান মনে করেন নারীদের কাজ করা নিয়ে সমাজের মানুষের মনোভাব বদল একটি বড় কারণ। কিন্তু নানা ধরনের কাজে সম্পৃক্ত হলেও নারীদের এই কাজগুলোর সামাজিক স্বীকৃতি মিলছে কতটা? শ্রমশক্তি নিয়ে জরিপে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত দেড় বছরের তথ্য এসেছে। দেখা গেছে এক দশকের ব্যবধানে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক কমেছে। আর কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় সোয়া এক কোটি। জরিপ অনুসারে শতকরা ৮৬ ভাগ নিয়োগই ইনফর্মাল নিয়োগ।
বর্তমানে মোট কর্মরত মানুষ মধ্যে পুরুষ সোয়া ৪ কোটি ১৮ লাখ, নারী ১ কোটি ৭৮ লাখ। তার মানে মোট হিসেবে পিছিয়েই থাকছে নারীরা। আর যেটুকু বা এগিয়েছে বলা হচ্ছে, সেখানে অদক্ষ ও তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ কাজই পাচ্ছে মেয়েরা। এখন বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি বেকার। নারীদের বেকারত্বের হার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং পুরুষদের ৩ শতাংশ।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment