ভারতের শীর্ষ ধনী, কে এই মুকেষ আম্বানি
মোহাম্মদ রেদওয়ান আতিক: ভারতের এই মুহুর্তে সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তিটি হচ্ছেন মুকেশ আম্বানি। তাঁর নীট সম্পদের পরিমান ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা প্রায় ৪০ দশমিক ১ মিলিয়ন ট্ররে আউন্স স্বর্ণের (১ আউন্স= ৩১ দশমিক ২১ গ্রাম ) অথবা ৯৩০ মিলিয়ন ব্যারেল (১ ব্যারেল=১৫৯ লিটার) অপরিশোধিত তেলের সমান। যুক্তরাষ্ট্রের মোট জিডিপির ০ দশমিক ২৭৫ শতাংশ সম্পদ এখন তাঁর। এই ধনী হওয়ার দৌড়ে তার উপরে রয়েছেন জেফ বেজোস (১১২ বিলিয়ন ডলার, বিল গেটস (১০৬ বিলিয়ন ডলার), ওয়ারেন বাফেট (৭৮.৩ বিলিয়ন ডলার), জিম ওয়ালটন (৫০.৬ বিলিয়ন ডলার), এলিস ওয়ালটন (৫০বিলিয়ন ডলার)। এই সম্পদের পরিমান শেয়ার স্টকের উপর ভিত্তি করে বাড়ে কমে।
কে এই আম্বানি?
এই মুহুর্ত্বে বিশ্বের ১৮তম ধনী ব্যাক্তিটি হচ্ছেন মুকেশ ধিরুভাই আম্বানি। বিশ্বের বৃহত্তম তেল পরিশোধনকারী কমপ্লেক্স রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক। এর প্রায় ৪২ শতাংশ শেয়ার নিয়ন্ত্রন করেন মি. আম্বানি।মুম্বাই ভিওিক কোম্পানিটির অন্যান্য ব্যবসাগুলির মধ্য অন্যতম সমগ্র ভারত জুড়ে একটি 4জি বেতার নেটওয়ার্ক। মি. আম্বানি ৪০০ মিলিয়ন ডলারের আবাসিক সম্পত্তির (যেমন: ভুমি, শপিং কমপ্লেক্স, গৃহায়ন) মালিক। এছাড়া ও একটি পেশাদার ক্রিকেট দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের মালিক আম্বানি।
মি. আম্বানির বেশির ভাগ সম্পদ তার কোম্পানিগুলোর শেয়ার মুল্য দ্বারা সহজেই নিরূপণ করা যায়। তিনি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের সম্পত্তি জরিপকারীদের বিশ্লেষণ অনুসারে বিলিয়নেয়ার মি. আম্বানির মুম্বাই এর ২৭ তলা বিশিষ্ট বাড়ি অ্যান্টিলিয়ার মুল্য ধরা হয়েছে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে গণমাধ্যম বলছে, মি. আম্বনি প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন বাড়িটি নির্মাণে। এ বাড়ির বাসিন্দা মাত্র ছয় জন। মুকেশ আম্বানি, তাঁর স্ত্রী, তিন সন্তান এবং তাঁর মা। ৪ লক্ষ বর্গফুটের এই ভবনে ৬০০ জন কর্মচারীর থাকার ব্যবস্থা সহ, তিনটি হেলিপ্যাড ও সাথে ৬ তলায় ১৬৮টি গাড়ি রাখার স্থান, ৫০ আসনের একটি সিনেপ্লেক্স, অত্যধুনিক সুবিধাসহ একটি দুর্দান্ত গ্রন্থাগার, ব্যাবিলনের উদ্যানের মত করে তিন তলা বিশিষ্ট ঝুলন্ত উদ্যান, রয়েছে একটি যোগ (ইয়োগা) স্টুডিও এবং একটি স্পা সেন্টার এবং ফিটনেস সেন্টার।
বাবা ধীরুভাই আম্বানির দুই ছেলের মধ্য বড় ছেলে মি. মুকেশ আম্বানি ১৯৫৭ সালের ১৯ এপ্রিল জন্মগ্রহন করেন। তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, রাসায়নিক প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, ক্যালিফোর্নিয়ার পালো অল্টোতে পাড়ি জমান ১৯৭৯ সালে পড়াশোনার জন্যে। এক বছর পর বাবা ধীরুভাই আম্বানি ভারতে ফিরে আসতে বলেন নতুন একটি পলিয়েস্টার মিল নির্মাণের তদারকির জন্য। বাবা ধীরুভাই আম্বানি তুরস্কের এডিন বন্দরে ট্রেডিং সংস্থা বেসেস এন্ড কোম্পানির ক্লার্ক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। তিনি ১৯৫৮ সালে ইয়েমেনের সাথে মশলা বাণিজ্য এবং সুতা তৈরি করতে শুরু করেছিলেন এবং অবশেষে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজকে একটি কাপড়, টেক্সটাইল এবং এনার্জি সেক্টরের সাম্রাজ্যে পরিণত করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে ভারতে বাণিজ্য শুরু করা এই সংস্থাটির প্রায়শই স্টেডিামে বার্ষিক সাধারন সভা করা হত। আম্বানীরা সরবরাহকারীদের পাশাপাশি পেট্রোকেমিক্যাল প্লান্ট এবং তেল শোধনাগার কিনতে শুরু করে। ২০০২ সালে ধীরুভাই আম্বানি স্ট্রোক করে মারা যান এবং মৃত্যকালে বাবা ধীরুভাই আম্বানি তার সম্পদের কোন প্রকার ভাগ করে যাননি তার দুই পু্ত্র মুকেশ ও অনিল এর মধ্যে।
তিন বছর পরে, তাদের মায়ের বন্দোবস্তে ভাইদের পারিবারিক ব্যবসায় বিভাজন হয়। মুকেশ শোধনাগার, পেট্রোকেমিক্যালস, তেল ও গ্যাস এবং টেক্সটাইল অপারেশনগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিলেন। এবং অনিল টেলিযোগাযোগ, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বিনোদন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবসায় গ্রহণ করেছিলেন। এই দুজনেই প্রাকৃতিক গ্যাস ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ আইনীগতভাবে নিষ্পত্তি করে ২০১০ সালে। তিন বছর পরে ভাইয়েরা একটি ফাইবার-অপটিক নেটওয়ার্ক ভাগ করে নেওয়ার জন্য ২২০ মিলিয়ন ডলার চুক্তি ঘোষণা করেছিল, এটি রিলায়েন্স ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের বিভক্ত হওয়ার পরে তাদের প্রথম চুক্তি। মুকেশ ২০১৪ সালের জুনে শেয়ারহোল্ডারদের বলেছিলেন, তাঁর সংস্থাটি (রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ) ১২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক শুরু করার পরিকল্পনা করেছে।
লক্ষ্য পূরন ও মাইলস্টোন
ক. ১৯৭৭ সালে রিলায়েন্স টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ একটি পাবলিক অফারে শেয়ার বিক্রি করে
খ.১৯৯৯ সালে আম্বানীরা তেল শোধনাগার কমপ্লেক্স নির্মাণে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে।
গ.২০০২ সালে বঙ্গোপসাগরে ভারতের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করে।
ঘ.২০০২ সালে ধিরুভাই আম্বানি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
ঙ.২০০৫ সালে ভাই অনিলের সাথে মতবিরোধ রিলায়েন্স গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়।
চ.২০১১ সালে ভারতে তেলের ও গ্যাস ব্লকের অংশিদরিত্ব ব্রিটিশ পেট্রোলিাম এর কছে ৭.২ বিলিয়ন ডলারে বিপি বিক্রি করে।
ছ.২০১৩ সালে রিলায়েন্স গ্রুপ বিভক্ত হওয়ার পরে ভাইয়ের সাথে প্রথম চুক্তি ঘোষণা করেছে।
জ.২০১৫ সালে ঘোষনা করে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ১৬ বিলিয়ন মানুষের হাতে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক পোঁছে দেয়া হবে বলে।
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যায় বহুল বিয়ে আযোজন করেন মি. আম্বানি তার মেয়ে ইশা আম্বানির বিয়েতে পাএ ভারতীয় ধনকুবের অজয় পিরামল এর ছেলে আনন্দ পিরামল।২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত এই বিয়েতে মি. আম্বানি প্রায় ১০ কোটি ডলার (৮৪০ কোটি টাকা) খরচ করেন। অতিথি হিসেবে বিয়েতে উপস্থিত হয়েছিলেন পৃথিবীর সব ধনী ও রাজনীতিক ব্যক্তিরা।যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে এসেছিলেন সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন, মার্কিন পপস্টার বিয়ন্সেসহ অনেকে।ছিলেন বলিউডের মহাতারকারাও।এটিই এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বিয়ে।অতিথিদের জন্য ২০০টি বিমান ভাড়া করা হয়েছিল। দামি বিয়ের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারতের ইস্পাতশিল্পের ধনকুবের লক্ষ্মী মিত্তালের মেয়ে বানিশা মিত্তাল ও অমিত ভাটিয়ার বিয়ে। ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত এই বিয়েতে খরচ হয়েছিল ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার (৫৫৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা)। বর অমিত ভাটিয়া সোর্ডফিশ ইনভেস্টমেন্টের মালিক। তৃতীয় স্থানে আছে ১৯৮১ সালে ডায়ানা ও ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স চার্লসের বিয়ে। সেই সময় এই বিয়েতে খরচ হয়েছিল ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার (৪০৩ কোটি ২০ লাখ টাকা)।
বিশ্বের দামি বিয়ের তালিকায় চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে ডায়ানা ও চার্লসের দুই ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারির বিয়ে। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত উইলিয়াম ও কেট মিডলটনের বিয়েতে খরচ হয়েছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার(২৮৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা)। এরপর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রিন্স হ্যারি ও সাবেক হলিউড অভিনেত্রী মেগান মার্কেলের বিয়েতে খরচ হয় ৩ কোটি ২০ লাখ ডলার (২৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা)।
৬২ বছর বয়সে মি. আম্বানি ই-কর্মাস জায়ান্ট আমাজন এবং আলীবাবা’র মত অনলাইন খুচরা ব্যবসার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষন করেন। তিনি তার সন্তানদেরকে তার সম্রাজ্যের আধুনিকায়নে ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। গত ১২ আগষ্ট এই ভারতীয় ধনকুবের ঘোষণা দেন বিশ্বের বৃহওম অপরিশোধিত তেল উৎপাদন- কারী প্রতিষ্ঠান সৌদি আরমকো, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের তেল ও রাসায়নিক ব্যবসার ২০ শতাংশ অংশীদারিত্ব কিনে নিবে। এর ফলে বিগত বছরগুলোতে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসা সম্প্রসারণের কাজে যে ঋনের বোঝা বেড়েছিল তা কমে যাবে।
ধন্যবাদ পএিকার সম্পাদককে