ভালোবাসার উপহার হোক প্রেম-দ্রোহের ‘নিজের শব বহন’
সংবাদ বাংলা: কবিতা নানারকম-এরকম বলেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। কথাটির সত্যতা স্পষ্ট। কারণ, কবিতা কি, এর যেমন সঠিক উত্তর নেই, তেমনিভাবে ভালো কবিতা, মন্দ কবিতাও ঠিকঠাক সনাক্ত করা যাবে না। আমার দৃষ্টিতে যেটি ভালো কবিতা, অন্যের কাছে তা ভালো নাও লাগতে পারে। অন্যদিকে আমার দৃষ্টিতে যেটি মন্দ কবিতা, অন্যের দৃষ্টিতে তা ভালো কবিতা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। শিল্পের ধরণই এমন। শিল্পের কাছে ভালোলাগার বাইরে অন্য কোন দাবি নেই। এম মামুন হোসেন শিল্পের সেই ভালোলাগা নিয়ে কাজ করতে চেয়েছেন। তিনি চেয়েছেন পাঠকের কাছে নিজের উপলব্ধিকে পৌঁছে দিতে। এক্ষেত্রে আশ্রয় নিয়েছেন কবিতা। ভালোবাসার উপহার হোক প্রেম ও দ্রোহের কবিতার বই ‘নিজের শব বহন’।
এবারের মেলায় গ্রন্থভুক্ত হয়েছে তার প্রথম কবিতার বই ‘নিজের শব বহন’। বইয়ের ভেতরে প্রবেশের আগেই বইয়ের শিরোনামে চোখ আটকে যাবে যে কোন পাঠকের। কারণ, একজন মানুষ কি নিজের শব নিজে বহন করতে পারে? কবির কল্পনায় পারে। আর এক্ষেত্রে আমরা প্রত্যেকটি মানুষ যেভাবে প্রতিদিন মৃত্যুর আগেই মরে যাই, আমাদের মরে যেতে হয়। সেই টুকরো টুকরো মৃত্যুর ইতিহাসকেই লিপিবদ্ধ করেছেন মামুন তার কাব্যগ্রন্থের। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বর্ণিত সেই আজকের জীবনের টুকরো টুকরো মৃত্যুকেই মামুন ধরে রাখতে চেয়েছেন তার কবিতায়। ফলে তার কবিতা জীবনের কথা বলেছে। তিনি নিজের কথা বলেছেন। সেই বলার মধ্যে রয়েছে সরলতা। তিনি কবিতাকে ভাষা দিয়ে আড়াল করতে চাননি। আর চাননি বলেই তার কবিতা সরল। তার প্রকাশের নৈপুণ্যে পাঠক মুহূর্তেই ঢুকে যেতে পারে তার কবিতার ভুবনে। এতে করে মামুন হোসেনের কবিতা উঠে উঠেছে জীবনের গান। তিনি কবিতার মধ্য দিয়ে আশার কথা বলেছেন, হতাশার কথা বলেছেন, বিদ্রোহের কথা বলেছেন, সমাজের নানা পর্যায়ের অনাচারের কথা বলেছেন। আর এই বলতে চাওয়ার ভেতর দিয়েই তিনি প্রকাশিত হয়েছেন। নিজেকে প্রকাশ করেছেন। নিজেকে প্রকাশের যে আনন্দ তিনি নিজের শব বহনের ভেতর দিয়ে উপলব্ধি করেছেন, তাই তাকে পুনঃপুনঃ প্রকশিত হবার পথে চালিত করবে।
বইটিতে প্রেমের কবিতা, আশার কবিতা, বিদ্রোহের কবিতা, আহŸানের। উল্লেখযোগ্য কবিতার মধ্যে আছে নিজের শব বহন, মহাপ্রয়ান, মেয়েরা এমন কেনো হয়, উচ্ছিষ্টের লোভে, শকুন, অট্টহাস্য, জঞ্জাল, অগোছালো, তুমি আমার ওই কবিতাটা পড়েছিলে।
এবারের একুশে গ্রন্থমেলায় প্রেম ও দ্রোহের কবিতার বইটি প্রকাশ করেছে বেহুলাবাংলা (১২৩-১২৪ নং স্টল)। বইটির মূল্য ১৫০ টাকা। অনলাইনে ভালোবাসা দিবসে বইটি প্রিয়জনকে উপহার দিতে চাইলে সহজ্কে দিতে পারেন রকমারি ডটকমের মাধ্যমে। রকমারি ডটকমে বইটির জন্য আছে বিশেষ ছাড় রয়েছে। TK. 113 TK. 150 25% Off. পেমেন্ট bKash করলে সর্বমোট ৩২% ছাড় ! + ফ্রি ডেলিভারি !!! EBL Card Payment এ পাচ্ছেন ১০% ছাড় ! প্রতিটি অর্ডারের সাথে Dano Captain Chocolate Milk একদম ফ্রি !!! ( সীমিত সময়ের জন্য ) রকমারি
নিজের শব বহন
অজান্তে আমি আমার শব বহন করছি
প্রতি মুহুর্ত, ঘণ্টা, দিন, মাস, বছর, যুগ ধরে
আমার ভিতরের রক্ত মাংস এখনো জাগ্রত
এবং সজাগ।
প্রতিনিয়ত শিরা উপশিরায় রক্ত প্রবাহমান
হৃৎপিণ্ডের ধক্ ধক্ স্পন্দন চলছে,
কেউ চাপড় মারলে এখনো অনুভব হয়
মনে আগের মতোই নগ্ন হাওয়া খেলে
তবু অজান্তে আমি আমার শব বহন করছি
শব বহনে আমি ছাড়া
আরো তিনজন থাকার কথা
কিন্তু কেউ নেই।
আশেপাশে চোখ পড়তেই
পিলে চমকে উঠলো, লোমকূপ শিউরে উঠলো
সকলেই নিজে-
নিজের জীবিত শব বহন করছে।
প্রেমের কবিতা যেমন-
তুমি আমার ওই কবিতাটা পড়েছিলে
আচ্ছা তুমি আমার ওই কবিতাটা পড়েছিলে
যেটি শুধু তোমাকে নিয়েই লেখা
যাতে আমি লিখেছিলাম-
চারিদিকে নিশংস হানাহানির ছড়াছড়ি
দেহে দেহে গৃহযুদ্ধ
তার মাঝে তুমি আর আমি।
প্রথম আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়ে গেছে
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রস্তুত সমেত
প্রতিটি পলকে একটি প্রাণ নিঃশেষ হচ্ছে
উটকো সব আপদ ঘিরে ধরছে প্রতিনিয়ত
আর তার মাঝে তুমি আর আমি।
হঠাৎ হঠাৎ বিধাতার অভিশাপ
নিতান্তই তুচ্ছ কিংবা
মধু আহরণকারী মৌমাছি
যাদের কষ্টের শ্রম কেড়ে নেয় মৌয়ালি
তার মাঝেও তুমি আর আমি।
মেয়েরা এমন কেন হয়?
মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি বড় আপন
তোমাকে না পেলেও অজস্র জন্মের পর জন্ম কাটিয়ে দিতে পারি
তোমার সঙ্গে থাকা কোন এক মুহুর্তের কথা ভেবে
কিংবা তোমাকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে আবিষ্কার করে।
তুমি বললে, এ আমার মন ভোলানো কোন কবিতার পঙক্তি।
আচ্ছা মেয়েরা এমন কেনো হয়?
তুমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়?
ওই যে বললাম-
তোমাকে না পেলেও অজস্র জন্মের পর জন্ম কাটিয়ে দিতে পারি।
তুমি একটু নাক সিটকালে
আমার মন বললো, কথাটায় তোমার বিশ্বাস হয়নি
সত্যি তাই, কথাটায় তোমার বিশ্বাস হয়না
বিশ্বাস করো, আমি তোমার স্মৃতি নিয়েই জন্মের পর জন্ম কাটিয়ে দিতে পারি
করেছিও তাই।
মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি
আমার পাশে কেউ নেই, কেবল তোমার স্মৃতি ছাড়া।
আর তুমি, অন্য একজনের বউ হয়েছ, মা হয়েছ, হয়েছ দাদী।
আর আমার, আমার কি হল
এ শেষ সময়ে আমার বড্ড জানতে ইচ্ছে করে
আচ্ছা মেয়েরা এমন কেনো হয়?
যে আমাকে
যে আমাকে ভালোবাসবে
তার কপালে দুঃখ আছে
নীল আকাশের হৃদয়ের মাঝে
কালো মেঘের ঝড় উঠাবে।
যে আমাকে কাছে টানবে
তার কপালে দুঃখ আছে
নদীর তরঙ্গের মাঝে
স্রোতসীনি বাঁধ ঠেকাবে।
যে আমাকে মন দিবে
তার কপালে দুঃখ আছে
জোসনা রাতে চাঁদের মাঝে
চন্দ্রগ্রহণ আধার নামাবে।
যে আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবে
তার কপালে দুঃখ আছে
কাল বৈশাখী তাণ্ডবে
ভাঙ্গবে সুখের ছোট্ট কুটিরটাকে।
যে আমাকে তুচ্ছ করবে
তার কপালে দুঃখ আছে
নিজের ফাঁদে নিজে পরে
অতল দরিয়ায় ডুবে যাবে।
যে আমাকে বুঝবে নারে
তার কপালে দুঃখ আছে
নয়ন তরের নোনা জলে
কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাবে।
যে আমাকে বিভাগী করবে
তার কপালে দুঃখ আছে
অনলে দগ্ধ হয়ে
অবশেষে নিঃশেষ হবে।
অট্টহাস্য
পাশাপাশি প্রাপ্ত বয়স্ক দু’জনে
এক বিছানায় এবং গভীর রাত সাক্ষী
দু’জনের মধ্যেই অন্তিম যৌবনের পিপাসা
তারপর একসময়
নগ্ন দেহে দেহে অট্টহাস্য করে লেপ্টালেপ্টি।
আকাশ ছেয়ে নেমে এলো এমন সময়
স্বপ্নিল পরশ মাখা নিবিড় এক অন্ধকার
তখন দু’জনের মধ্যেই আদিমতা
বড় বেশি বাড় বেড়ে গেছে
আবছা হয়ে উঠেছে
এক মুখ অপরের কাছে।
একইসঙ্গে আছে দ্রোহের কবিতা-
শকুন
শকুন। মৃত শিকারের খোঁজে
বারংবার এদিক থেকে ওদিক
সুতিক্ষ্ণ গৃধ্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে
এবং প্রতিবারই বিফল
একসময় অবিশ্রান্ত দৃষ্টি যখন
গিয়ে পড়লো খাবারের দিকে
ভূক্ষা শকুনের ক্ষুধা জ্বলে উঠল
অগ্নিস্ফূত জ্বলন্ত আভার মতো করে,
কিন্তু দৃষ্টি গোচরে খাবার থাকলেও
ছুতে পারলো না
কেননা শকুনরাজ তার তৃপ্তি আগে করবে
তারপর এই সামান্য শকুনটির ভাগ্যে জুটবে
ভুক্ষা মিটানোর সুযোগ।
অবশেষে উচ্ছিষ্ট খেয়েই শকুনটি
হয়তো ক্ষুধা থেকে নিস্তার পেল
কিন্তু জ্বলন্ত আক্রোশ রয়ে গেল।
কবিতায় ধরা পড়েছে চরম জীবনবোধ। এর উদাহরণ ‘মহাপ্রয়াণ’
মহাপ্রয়াণ
এই তো কিছুক্ষণ আগে মাংসপেশী হৃৎপিণ্ডটা
ধক্ ধক্ করে স্পন্দিত হচ্ছিলো
আনন্দের বহরে তনুময় লোহিত কণিকাগুলো
অম্লজান নিয়ে ছুটছিল
আবার তনু থেকে ব্যস্ত হয়ে খুব দ্রুত
গরল বের করছিল ।
কারো ফুসরত ছিলনা বিরাম নেবার
প্রতিনিয়ত খাদ্যবস্তু গলাধঃকরণ এবং
জরা নামক শত্রুর সাথে বিগ্রহে বেঁচে থাকা
সবই খুব দ্রুত তনুর ভিতর চলছিল।
হঠাৎ করে নেত্রপর্ণ শত চেষ্টায় আর খুললো না
আপনা-আপনি হৃৎপিণ্ডের ধক্ ধক্ থেমে গেলো
লোহিত কণিকাগুলো এখন আর
অম্লজান এবং শিরা উপশিরায় রক্ত প্রবাহ নিয়ে ব্যস্ত নয়
খাদ্যবস্তুর কোন দরকার নেই
মহাপ্রয়াণ তাকে অবগাহন করে নিয়ে গেছে
অন্ধকারাচ্ছন্ন নীলাভ ভূমিতে।
এম মামুন হোসেন পেশায় সাংবাদিক। পৈতিৃক ভিটে বিক্রমপুর (মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা) হলেও জন্ম ও বেড়ে উঠেছেন পুরান ঢাকায়। তাই পুরান ঢাকার প্রতিটি অলিগলিতে রয়েছে তার শেকড় পোতা। এ যেন উত্তরাধিকার সূত্রেই তার আগ্রহের বিষয় ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এম মামুন হোসেন একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও এমবিএ করেছেন।
এক যুগ ধরে সাংবাদিকতা করা এম মামুন হোসেন নানান বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য পেয়েছেন স্বীকৃতি। ২০১৭ সালে ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে ‘নামকরণের ইতিকথা’ শিরোনামে পাঁচ পর্বের ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য পেয়েছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ‘কী শিখছে শিশুরা’ শিরোনামে তিন পর্বের ধারাবাহিক শিক্ষা-বিষয়ক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য পেয়েছেন ডিআরইউ- গ্রামীণফোন রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড ২০১৪। ‘বেসরকারি ৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাস বিক্রি’ শিরোনামে অনুসন্ধানী শিক্ষাবিষয়ক প্রতিবেদনের জন্য ২০১১ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান। এছাড়া জেন্ডার আইডেনটিটি নিয়ে মানবিক প্রতিবেদনের জন্য ইউএনডিপি অ্যাওয়ার্ড-২০১৪, কুষ্ঠ রোগ নিয়ে সচেতনতামূলক প্রতিবেদনের জন্য ল্যাপ্রসি মিশন অ্যাওয়ার্ড-২০১৪, প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য পেয়েছেন দ্যা ফ্রেড হলোস ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড। সাংবাদিকতায় তার আগ্রহের বিষয় হচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য, গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ, মানবাধিকার, স্থানীয় সরকার ও সুশাসন। ভারত, দুবাই, তুরস্ক, ডেনমার্ক, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। ‘নিজের শব বহন’ তার প্রথম কবিতার বই।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment