মধ্যরাতে ২০ ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দিল ঢাবি প্রশাসন
সংবাদ বাংলা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হলের ২০ ছাত্রীকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে হল ত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর মধ্যরাত পর্যন্ত হল কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের একের পর এক বের করে দেয়। অন্তত ২০ জন অভিভাবক সুফিয়া কামাল হল থেকে তাদের সন্তানকে এসে নিয়ে যান। ছাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের (অভিভাবক) কারও সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করে দেয়া হয়। ফলে অভিভাবকরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এর আগে ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনায় গঠিত হলের ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধেও সাক্ষাৎকার গ্রহণের নামে ছাত্রীদের হয়রানির অভিযোগ ওঠে।
ছাত্রী নিপীড়নের অভিযোগে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘটনায় সম্পৃক্তদের ডেকে নিয়ে এমন হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। ছাত্রীদের ডেকে হল ত্যাগে বাধ্য করা, মুঠোফোন জব্দ, মামলায় জড়িয়ে দেয়ার হুমকি এবং অভিভাবকদের ফোন দিয়ে হয়রানি ইত্যাদি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে সাধারণ ছাত্রীদের মধ্যে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টা পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ জন অভিভাবক হল থেকে নিয়ে গেছেন তাদের সন্তানকে। এ সময় তাদের সংবাদকর্মীসহ বাইরের কারও সঙ্গে কথা না বলতে নিষেধ করে দেয়া হয়। ফলে অভিভাবকরা এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
জানা গেছে, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রিমির বাবা রাত সাড়ে ৮টায় ফোন পেয়েছেন হল কর্তৃপক্ষের। ঝড়বৃষ্টির কথা বলে তিনি রক্ষা পাননি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ রাতেই মেয়েকে নিয়ে যেতে হবে। ফলে সাভারের ধামরাই থেকে রওনা হয়ে রাত পৌনে ১টায় হলগেটে পৌঁছান। রিমির বাবা ফারুক হোসেন জানান, সুফিয়া কামাল হলে মারামারির সময় রিমি সাভারে ছিল। কারণ ওই দিন তার নানা মারা যান। মাত্র দুদিন আগে সে হলে এসেও রক্ষা পায়নি। হল ত্যাগ করতে হয়েছে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে হলের এক ভুক্তভোগী ছাত্রীর বড়ভাই আবদুল আউয়ালের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি তার বোনের নাম ও পরিচয় দিলেও তা প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন। তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করা ওই ব্যক্তি জানান, তিনি রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার বোনকে ফোন দেন। এ সময় ফোনটি রিসিভ করেন এক শিক্ষিকা। ওই শিক্ষিকা বলেন, ‘হলে সমস্যা হয়েছে। আপনার বোনকে হল থেকে নিয়ে যান, তার ফোন জব্দ করা হয়েছে।’
আবদুল আউয়াল জানান, তিনি ওই শিক্ষিকাকে অনুরোধ করেন তার বোনকে ফোনটি দেয়ার জন্য। পরে বোন ফোন রিসিভ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথা বলেন। এ সময় সে তাকে বাসায় নিয়ে যেতে অনুরোধ করে ফোনটি কেটে দেন। এর পর থেকে আর তার বোন ফোন রিসিভ করছে না। তিনি উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বোন যদি কোনো অপরাধ করে থাকে, তা হলে তার বিচার হতেই পারে কিংবা আমাদের কাছেও অভিযোগ জানাতে পারে। কিন্তু সে ফোন রিসিভ করছে না কেন? আমি আমার বোনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।’
এ ছাড়া পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রীসহ কয়েকজনকে হল থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়েছে বলেও অভিযোগ এসেছে। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের অনি্ত নামে এক ছাত্রীকে হাউস টিউটরদের কক্ষে আটকে রেখে হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরবর্তী সময়ে রাত ১০টার দিকে তার ব্যবহৃত টেলিটক নম্বরে ফোন দেয়া হলে অন্য একজন কল রিসিভ করে বলেন, এখন অনি্তকে দেয়া যাবে না। পরে ফোন করেন।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ছাত্রীদের হয়রানির অভিযোগ সত্য নয়। এগুলো গুজব। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে একটি দুষ্টচক্র গভীর ষড়যন্ত্রে নেমেছে। হয়রানির মতো কিছু হচ্ছে না।’
গভীর রাতে হল থেকে ছাত্রীদের বের করে দেয়ার সময় সংবাদকর্মীসহ বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ছাত্রীরা অভিযোগ করে জানান, বিভিন্ন বিভাগের মেয়েরা এ সময় হলের মাঠে জড়ো হন। কর্তৃপক্ষ তাদের নাম-ঠিকানা জোগাড় করে মাঠ ত্যাগ করতে নির্দেশ দেন। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়।
প্রসঙ্গত এর আগে সুফিয়া কামাল হল কর্তৃপক্ষ ছাত্রী লাঞ্ছনাসহ ১১ এপ্রিল সংঘটিত ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি ছাত্রী লাঞ্ছনার অভিযোগ থেকে ছাত্রলীগ নেত্রী এশাকে অব্যাহতি দিয়ে উল্টো ২৬ ছাত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। অথচ এশা ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি ও হয়রানি করলেও তাতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment