মায়ের পরকীয়ার নির্মম বলি
সংবাদ বাংলা: নির্মম, নৃশংস এক মায়ের কাহিনী। কতটা পাষাণ হলে মানুষ এমন করতে পারে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। যে মা দশ মাস দশ দিন শত কষ্টের মাঝে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেছেন। সেই সন্তানকে নিজেই আবার কিভাবে পুড়িয়ে হত্যা করে? গ্রামবাসী ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ওই মায়ের দিক থেকে। তাদের মন্তব্য এই মহিলা ‘মা’ নামের কলঙ্ক। পুলিশ ঘাতক মাকে আটক করে থানা হাজতে রেখেছে।
মায়ের অনৈতিক কাজের সাক্ষী হওয়ায় ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে দুই অবুঝ সন্তানের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় শেফালী আক্তার (২৮)। ঘটনাস্থলে পুড়ে কয়লা হয় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক সন্তান। দ্বিতীয় সন্তান মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। মর্মস্পর্শী ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার শেষ রাতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার উচিৎপুরা ইউনিয়নের বাড়ৈপাড়া এলাকায়। আগুনে ঝলসে যাওয়া অপর শিশু সন্তান জিহাদ হোসেন শিপন (৭)কে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত শিশু হৃদয় হোসেন (৯) উপজেলার বাড়ৈপাড়া ৩৫নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি ও জিহাদ হোসেন শিপন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত হৃদয়ের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। খবর পেয়ে গতকাল বিকালে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিউর রহমান, সিনিয়র এএসপি রশীদ ও আড়াইহাজার থানার ওসি এমএ হক ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন। ৩৫নং বাড়ৈপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বাড়ৈপাড়া এলাকার জয়নাল আবেদীন জানান, নিহত হৃদয় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল। প্রায় ১১ বছর আগে ঢাকার কেরানীগঞ্জের ইসলামপুর এলাকার সুন্দর আলীর মেয়ে শেফালীর সঙ্গে স্থানীয় বিল্লাল টেইলারের ছেলে আনোয়ার হোসেনের বিয়ে হয়। জীবিকার তাগিদে দীর্ঘদিন ধরেই আনোয়ার হোসেন বাহরাইন প্রবাসী। উচিৎপুরা ইউনিয়নের বাড়ৈপাড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়িতেই দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতেন শেফালী। এরই মধ্যে একই এলাকার জনৈক মোমেনের সঙ্গে শেফালীর পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে।
এরই জের ধরে তিন মাস আগে আনোয়ারের সঙ্গে শেফালীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কিন্তু দুই সন্তান নিয়ে শেফালী ওই বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার দিন শেষে রাতে মোমেন শেফালীর ঘরে অবস্থান করছিল। মায়ের সঙ্গে অন্যপুরুষের অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি দেখে ফেলায় দুই সন্তানকে ঘুমের ট্যাবলেট সেবন করিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় ঘটনাস্থলেই হৃদয় মারা যায়। অপর সন্তান জিহাদও ঝলসে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডাক্তার উত্তম জানান, শিশু জিহাদের এক হাত ও দু’পা ঝলসে গেছে। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। তবে, তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
স্থানীয় এক যুবক জানান, মোমেনের সঙ্গে শেফালীর দীর্ঘদিন ধরেই পরকীয়া সম্পর্কের কারণে তার প্রবাসী স্বামী বিবাহ বিচ্ছেদ করেন। কিন্তু এরপরও সে সন্তানদের নিয়ে এখানেই বসবাস করতে থাকেন।
আড়াইহাজার থানার ওসি এমএ হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে শিশু হৃদয়ের পুড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ও জিহাদকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। মা শেফালীকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment