‘মুসলিমদের জঙ্গি তকমা দিতে চায় বিজেপি’
সংবাদ বাংলা: মাদ্রাসায় শিক্ষার বদলে চলছে জঙ্গি প্রশিক্ষণ–এমন মন্তব্যে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়ালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি। বিজেপি ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব রাজনৈতিক দল এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে। তারা বলছে, মুসলিম সম্প্রদায়কে জঙ্গি তকমা দিতেই এমন মন্তব্য করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গের ২৭ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী৷ ভারতীয় সংবিধান অনুসারে সংখ্যালঘুরা স্বাধীনভাবে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারে৷ তাই ইসলাম ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেশ জুড়ে৷ পশ্চিমবঙ্গে আছে কয়েক হাজার মাদ্রাসা। এখানে মূলত দরিদ্র মুসলিম পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে।
সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি বলেন, সন্ত্রাসের নেটওয়ার্ক হিসেবে বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের কয়েকটি মাদ্রাসাকে জঙ্গিরা ব্যবহার করছে৷ তাঁর দাবি, কিছু মাদ্রাসাকে প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন৷ বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জেএমবি এই মাদ্রাসাগুলি থেকে সদস্য সংগ্রহ করছে বলে সতর্ক করে রাজ্য সরকারকে প্রতিবেদন দেয়ার কথাও জানান মন্ত্রী৷
এদিকে, সোমবার রাতে বর্ধমানে গ্রেপ্তার হয়েছে বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণে অভিযুক্ত জেএমবি সদস্য আব্দুল রহিম৷ গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে মুর্শিদাবাদের একটি মাদ্রাসায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছিল সে৷ পরের বছর বর্ধমানের শিমুলিয়া মাদ্রাসাতেও রহিম প্রশিক্ষণ নেয়৷ ২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ হলে, পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি নেটওয়ার্কের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে৷ তখন এই মাদ্রাসা নিয়ে শোরগোল পড়েছিল৷ এই গ্রেপ্তারের পরদিনই সংসদে মাদ্রাসা নিয়ে মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রেড্ডি৷
বুধবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিরোধী নেতারা বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে খাটো করতে এমন মন্তব্য করা হয়েছে৷ এর মধ্য দিয়ে বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আবারো সামনে এসেছে বলে মন্তব্য তাঁদের৷
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান বলেন, সংবিধানের শপথ নিয়ে যাঁরা ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁরা একটি সম্প্রদায়কে দেশদ্রোহী, সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিচ্ছেন। তিনি নিজেও মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন জানিয়ে প্রশ্ন ছোঁড়েন, যারা মাদ্রাসায় পড়ে, তারা সবাই জঙ্গি?
বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞার কথা প্রসঙ্গে আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘বিজেপির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগ আছে৷ তাহলে কি গোটা সাধু সমাজ, হিন্দু সম্প্রদায় সন্ত্রাসবাদী হয়ে গেল?
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, একটি সম্প্রদায় কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য৷ এজন্য পশ্চিমবঙ্গকে নিশানা করা হয়েছে। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর জানালেন, মাদ্রাসায় মুসলিম ছাড়া অন্য সম্প্রদায়ের ছেলেরা পড়ে৷ আবার অনেক মুসলিম ছাত্র সাধারণ স্কুলেও পড়ে৷ তাহলে কাদের জঙ্গি বলব?
পশ্চিমবঙ্গে মূলত তিন ধরনের মাদ্রাসা আছে৷ কিছু সরকার স্বীকৃত ও অনুদান প্রাপ্ত। কিছু মাদ্রাসায় সরকারের স্বীকৃতি থাকলেও অনুদান নেই৷ প্রায় সাত হাজার মাদ্রাসা আছে, যেগুলোর কোনো স্বীকৃতি কিংবা সরকারি সাহায্য কিছুই নেই৷ এসব খারিজি মাদ্রাসা বলে পরিচিত৷ এগুলো মুসলিমদের দানের ওপর চলে৷ দেয়া হয় ধর্মীয় শিক্ষা, নেই সরকারের নিয়ন্ত্রণ৷ দেওয়া হয়৷ খারিজি মাদ্রাসাগুলোতেই প্রশিক্ষণ নেন জেএমবি জঙ্গি আব্দুল রহিম৷ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নজরদারি প্রয়োজন।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল সন্ধি মুখোপাধ্যায় বলেন, জঙ্গি কার্যকলাপ রুখতে সর্বত্র নজর রাখতে হবে, মাদ্রাসা তার বাইরে নয়৷ তবে সেজন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দিকে আঙুল তোলা মোটেই ঠিক নয়৷ কিছু সংখ্যাক মানুষ এ সব কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment