যেকোনো বয়সেই হতে পারে পাইলস; একদম অবহেলা নয়
সংবাদ বাংলা: পাইলস? কেউ মনে করেন বংশগত কারণে এমন হচ্ছে, কারও আবার দীর্ঘ কোষ্ঠকাঠিন্যের ফল। অর্শ বা পাইলস যে কোনও বয়সেই হতে পারে, কারণ থাকতে পারে একাধিক। মলদ্বারের বাইরে বা ভিতরের চারদিকের শিরা কোনও কারণে ফুলে উঠে প্রসারিত হয়ে মটরদানার ন্যায় রূপ ধারণ করলে তাকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় অর্শ বা পাইলস। পাইলস মলদ্বারের ভিতরের দিকে হলে কষ্ট অনেক বেশি। খুব নরম চামড়ার দ্বারা আবৃত থাকে বলে সহজেই আঘাত লাগে, ক্ষত হয় এবং মলত্যাগের সময় খুব রক্তপাত হতে থাকে। এই পাইলস যত বেশি প্রসারিত হয়, তত মল ত্যাগের সময় কষ্ট হয়। কারও আবার পাইলস কিছুটা মলদ্বারের বাইরে এবং কিছু অংশ ভিতরে থাকে। তখন তাকে বলা হয় মিক্সড পাইলস। যখন তা মলদ্বারের বাইরেই পুরো বেরিয়ে থাকে তখন তাকে বলা হয় বহিরাগত বা এক্সটার্নাল পাইলস। এমন হলে ব্যথা-যন্ত্রণা অভ্যন্তরীণ পাইলসের চেয়ে একটু কম হয়। পাইলস বা অর্শ হলো মলদ্বারে এক ধরনের রোগ যেখানে রক্তনালীগুলো বড় হয়ে গিয়ে ভাসকুলার কুশন তৈরি করে। এটি অস্বস্তিকর এবং অসহনীয় একটি সমস্যা। শিশুসহ যে কোন বয়সের লোকই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এটি মলদ্বারের ভেতরে কিংবা বাইরেও হতে পারে। পাইলস হলে চুলকানি বা রক্তক্ষরণ হয়। লজ্জায় অনেকে বিষয়টিকে দীর্ঘদিন গোপন করে রাখে। ফলে ভুল চিকিৎসার শিকার হন যা স্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি করে।
কখনো কখনো মলদ্বার চুলকাতে থাকে, দপদপ করে ও জ্বালা করতে থাকে। কাঁটা ফোটার মতো ব্যথা ও যন্ত্রণা হয়। তলপেটেও ব্যথা করে। তবে পাইলস মলদ্বারের ভিতরে দিকে হলে বিশেষ কোনও লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কেবলমাত্র মলদ্বারের ভিতরে ভার বোধ ও মল ত্যাগের সময় অল্প ব্যথা অনুভব হতে পারে। মনে হয় মলদ্বারের ভিতরে একটা জিনিস আটকে আছে। রক্তস্রাব শুরু হলে লক্ষণ প্রকটভাবে প্রকাশ পায়। দুর্বলতা, রক্তহীনতা, হাত-পা চোখের পাতা ফোলাভাব, মাথাধরা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। মলদ্বারের শিরাগুলিতে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। মলদ্বারে ইনফেকশন হয়ে ঘা হয়ে যায়। সে কারণেই রক্তপাত হতে থাকে।
পাইলস কেন হয়, হলে কীভাবে বুঝবেন, কী করবেন, সংশ্লিষ্ট একাধিক চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আজ এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
পাইলস কেন হয়:
১) কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে খুব চাপ দিয়ে মল ত্যাগ।
২) উত্তেজক, উগ্র জাতীয় ওষুধ সেবন ও তীব্র রেচক ওষুধ সেবন।
৩) একটানা বসে কাজ, খুব মশলা, তেল ও ঘি মিশ্রিত খাবার বেশি খেলে এমন সমস্যা হয়।
৪) লিভারের অসুখ বা লিভার সিরোসিস রোগ-এর জন্য।
৫) অজীর্ণ রোগ ও পরিপাক তন্ত্রের সমস্যা।
৬) প্রস্টেটের সমস্যা বা মূত্রথলিতে ব্যথার জন্য অতিরিক্ত চাপ দিয়ে মূত্রত্যাগ।
৭) গর্ভাবস্থায় জরায়ুর উপর চাপ। গর্ভাবস্থার শেষের দিকে অনেকের পাইলস রোগটি দেখা দেয়। শিশুর গ্রোথের সঙ্গে মলদ্বারে চাপ পড়লে নারীর পাইলস হতে পারে।
৮) নানা কারণে শিরাতে চাপ যা থেকে রক্ত জমাট (Venous engorgement ) বেঁধে গেলে মলের সঙ্গে রক্তপাত হতে পারে।
৯) বংশগত বা বাবা-মায়ের এই রোগ থাকলে সন্তানের মধ্যেও দেখা দিতে পারে।
১০) দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া
১১) শাকসবজি ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার এবং পানি কম খাওয়া
১২) শরীরের অতিরিক্ত ওজন
১৩) অতিরিক্ত মাত্রায় লেকজেটিভ (মল নরমকারক ওষুধ)ব্যবহার করা বা এনেমা (শক্ত মল বের করার জন্য বিশেষ তরল মিশ্রণ ব্যবহার করা) গ্রহণ করা
১৪) টয়লেটে বেশী সময় ব্যয় করা
১৫) বৃদ্ধ বয়স
১৬) পায়ুপথে যৌনমিলনে অভ্যস্ততা
১৭) ফ্যাটি ও হাই প্লোটিনযুক্ত খাবার যেমন : গরুর মাংস, চিজ, মাখন, ফ্রাইড, চকোলেট, আইসক্রিম, কোমল পানীয় ইত্যাদি বেশি খেলে পাইলস হতে পারে।
পাইলসের লক্ষণসমূহ:
i) মলদ্বারের অভ্যন্তরে হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে-
১. পায়খানার সময় ব্যথাহীন রক্তপাত হওয়া
২. মলদ্বারের ফোলা বাইরে বের হয়ে আসতে পারে, নাও পারে। যদি বের হয় তবে তা নিজেই ভেতরে চলে যায় অথবা হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া যায়। কখনও কখনও এমনও হতে পারে যে, বাইরে বের হওয়ার পর তা আর ভেতরে প্রবেশ করানো যায় না বা ভেতরে প্রবেশ করানো গেলেও তা আবার বের হয়ে আসে
৩. মলদ্বারে জ্বালাপোড়া, যন্ত্রণা বা চুলকানি হওয়া
৪. কোন কোন ক্ষেত্রে মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে।
ii) মলদ্বারের বাইরে হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারেঃ
১. মলদ্বারের বাইরে ফুলে যাওয়া যা হাত দিয়ে স্পর্শ ও অনুভব করা যায়।
২. কখনও কখনও রক্তপাত বা মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে।
পাইলস রোগে করণীয়:
১. কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং নিয়মিত মলত্যাগ করা
২. পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া এবং পানি(প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস) পান করা
৩. সহনীয় মাত্রার অধিক পরিশ্রম না করা
৪. প্রতিদিন ৬-৮ ঘন্টা ঘুমানো
৫. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা
৬. টয়লেটে অধিক সময় ব্যয় না করা
৭. সহজে হজম হয় এমন খাবার গ্রহণ করা
৮. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া লেকজেটিভ বেশি গ্রহণ না করা
৯. মল ত্যাগে বেশি চাপ না দেওয়া
১০. দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া থাকলে তার চিকিৎসা নেয়া।
পাইলস রোগে গ্রহণীয় কিছু খাবার:
শাকসবজি, ফলমূল, সব ধরণের ডাল, সালাদ, দধি, পনির, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, লেবু ও এ জাতীয় টক ফল, পাকা পেপে, বেল, আপেল, কমলা, খেজুর, ডিম, মাছ, মুরগীর মাংস, ভূসিযুক্ত (ঢেঁকি ছাঁটা) চাল ও আটা ইত্যাদি।
পাইলস রোগে বর্জনীয় কিছু খাবার:
খোসাহীন শস্য, গরু, খাসি ও অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার, মসৃণ চাল, কলে ছাঁটা আটা, ময়দা, চা, কফি, চীজ, মাখন, চকোলেট, আইসক্রীম, কোমল পানীয়, সব ধরণের ভাজা খাবার যেমনঃ পরোটা, লুচি, চিপস ইত্যাদি।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment