রিয়া সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেহরক্ষীর, মোদীর দ্বারস্থ সুশান্তের পরিবার
সংবাদ বাংলা: সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যু-কাণ্ডে এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ হল তাঁর পরিবার। প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লিখলেন সুশান্তের দিদি শ্বেতা সিংহ। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর আবেদন, তিনি যেন হস্তক্ষেপ করে সুশান্তকে ন্যায়বিচার পেতে সাহায্য করেন। ভারতীয় বিচারব্যবস্থার প্রতি যে তাঁর অগাধ আস্থা রয়েছে, সে কথাও সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই চিঠিতে জানান শ্বেতা। অন্য দিকে শনিবার বিকেলে এক সাংবাদিক বৈঠকে বিহার পুলিশের ডিজি গুপ্তেশ্বর পাণ্ডে জানান, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না রিয়া চক্রবর্তীকে, তবে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে বিহার পুলিশ।
শনিবার নিজের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে শ্বেতা লেখেন, আমরা এবং আপনি (নরেন্দ্র মোদী), খুব সাধারণ পরিবার থেকে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছি। আমার ভাইয়ের কোনও গডফাদার ছিল না। এখনও নেই। আপনার কাছে আমার একান্ত অনুরোধ, আপনি নিজে এই গোটা ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুন। আমরা ন্যায়বিচার চাই।
অন্য দিকে শুক্রবারই সুশান্তের পরিবারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন অভিনেতার বন্ধু সিদ্ধার্থ পিঠানি। শুক্রবার এক ই-মেল মারফৎ সিদ্ধার্থ মুম্বই পুলিশকে জানান, রিয়ার বিরুদ্ধে বয়ান দেওয়ার জন্য তাঁকে নাকি রীতিমতো জোর করা হচ্ছে সুশান্তের আত্মীয়দের তরফে। ওই ই-মেলে সিদ্ধার্থ লেখেন, আমাকে বলা হয়েছিল, একটা ফোন কল আসবে। তার কিছুক্ষণ পরেই আমার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একটি কল আসে। ৪০ সেকেন্ডের মাথায় সেই ফোন কেটেও যায়। রিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য আমায় ক্রমাগত জোর করা হচ্ছে।
যদিও অভিনেতার পারিবারিক আইনজীবী বিকাশ সিংহের দাবি এই অভিযোগ ভুয়া, সত্যি লুকোচ্ছেন সিদ্ধার্থ। বিকাশ সিংহের বক্তব্য, কিছু দিন আগে পর্যন্ত রিয়ার বিরুদ্ধে কথা বললেও হঠাৎ করেই এখন অন্য সুর সিদ্ধার্থের গলায়। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, জুলাইয়ের ২৫ তারিখ অবধি সুশান্তের পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন সিদ্ধার্থ। এমনকি, সুশান্তের যা অবস্থা তাতে রিয়াকেই দায়ী করছিলেন তিনিও। হঠাৎই যেন ভোলবদল তাঁর। এই মামলায় সিদ্ধার্থের ভূমিকা আদপে কী, তা যেন যত দ্রুত পুলিশ অনুসন্ধান করে বার করে।
মুম্বই পুলিশকে পাঠানো ওই ইমেলে সিদ্ধার্থ আরও লেখেন, রিয়া যে সুশান্তের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি টাকা সরিয়েছেন বলে তাঁর পরিবারের অভিযোগ, সে কথাও নাকি বয়ানে সিদ্ধার্থকে উল্লেখ করার জন্য চাপ দিচ্ছে সুশান্তের পরিবার। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে সিদ্ধার্থ বলেন, আমি ওদের (সুশান্তের পরিবার) সাফ জানিয়ে দিই, পনেরো কোটি টাকার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। যা জানি, যা বিশ্বাস করি, শুধুমাত্র তাই-ই পুলিশকে বলব আমি। এর পরেই আমি মুম্বই পুলিশকে গোটা ব্যাপার জানালে তারা আমাকে ই-মেল মারফৎ লিখিত অভিযোগ জানাতে বলে।
যদিও এই প্রসঙ্গে সুশান্তের পরিবারের আইনজীবীর প্রশ্ন: পটনা থেকে মামলা মুম্বইয়ে নিয়ে আসার জন্য রিয়া শীর্ষ আদালতে যে পিটিশন জমা করেছিলেন, সেই পিটিশনে এই ই-মেলেরও বিশদে উল্লেখ ছিল। আমার প্রশ্ন, সিদ্ধার্থের ওই ই-মেল যদি শুধুমাত্র মুম্বই পুলিশকেই পাঠানো হয়ে থাকে তবে তা রিয়ার কাছে পৌঁছল কী করে? এফআইআরে রিয়াকে অভিযুক্ত বলা হয়েছে। তাই আইন অনুযায়ী রিয়ার কাছে এই ই-মেল পৌঁছনোর কথা নয়। যদি পিঠানি নিজেই রিয়াকে ই-মেল পাঠিয়ে থাকেন তবে তাঁর দিকে সন্দেহের তির আরও জোরালো হয়ে উঠছে। তাঁর আরও প্রশ্ন, সুশান্ত মারা যাওয়ার দিনেও সুশান্তের বাড়িতেই ছিলেন সিদ্ধার্থ। ওঁর কথামতো, উনি সুশান্তের ঘর ভেতর থেকে বন্ধ দেখে সুশান্তের দিদিকে খবর দেন। আমার জিজ্ঞাসা, দেড় ঘণ্টা সুশান্তের ঘর বন্ধ দেখেও সুশান্তের দিদি আসা পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করছিলেন কেন?
ইতিমধ্যে সাক্ষাৎকারে সুশান্তের দেহরক্ষী রিয়া এবং সুশান্তের ব্যাপারে এমন কিছু তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন যা রহস্য ক্রমে জটিল থেকে জটিলতর করে তুলছে। ওই দেহরক্ষী জানিয়েছেন, গত বছর সুশান্তের ফার্মহাউজে প্রথম রিয়ার সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। সুশান্তের সঙ্গে সম্পর্কে আসার পরেই সুশান্তের বাড়ির পরিচারক থেকে বাকি কর্মচারীদের বের করে দিয়েছিলেন রিয়া। যদিও তাঁকে বের করেননি। ওই ব্যক্তির কথায়: “ওষুধের ওভারডোজের কথা জানিনা। তবে ইয়োরোপ টুর থেকে এসে স্যর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সব সময়ে বিছানাতেই থাকতেন। সুশান্ত ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন। রিয়া এবং তাঁর আত্মীয়েরা পার্টি করতেন। মহেশ ভট্টর অফিসেও রিয়াকে ছাড়তে গিয়েছিলাম একবার।
এই আবহেই শুক্রবার প্রথম মুখ খুলেছেন রিয়া চক্রবর্তী। বিহার পুলিশের কাছে তাঁর নামে দায়ের হওয়া এফআইআরের পর এই প্রথম সুশান্তের অস্বাভাবিক মৃত্যু প্রসঙ্গে কথা বললেন তিনি। রিয়ার বক্তব্য, ‘‘আমার সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমে ভয়ানক সব কথাবার্তা বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমার আইনজীবী কিছু বলতে বারণ করেছেন। দেশের বিচারব্যবস্থার উপর যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। আমি বিচার পাব। সত্যিটা অবশ্যই সামনে আসবে।
শুক্রবার বিকেলে রিয়া যখন এ কথা বলছেন, তার কয়েক ঘণ্টা আগে তাঁরই একটি ব্যক্তিগত ভিডিয়ো সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে চলে আসে। সেই ভিডিয়োতে হাসতে হাসতে রিয়াকে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমি ডন। আমি ‘তাই’। ছোটখাটো গুন্ডাদের কী করে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তা আমি জানি।” কীভাবে ওই ভিডিয়োটি ভাইরাল হল তা জানা যায়নি। তবে ভিডিয়োটি ভাল করে দেখলে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়— যিনি ভিডিয়োটি তুলছিলেন, রিয়া তাঁকে বারবারই রেকর্ড করতে বারণ করছিলেন। শনিবার ভাইরাল ওই ভিডিয়ো নিয়ে মুখ খুলেছেন রিয়া। তিনি জানান, নিছকই মজার ছলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার মেজাজে একটি স্ট্যান্ডআপ কমেডি করছিলেন তিনি। ভিডিয়োতে নিজেকে বারবার ‘তাই’ বলার কারণ, তাঁর একটি ছবিতে চরিত্রের নাম ছিল ‘তাই’।
সুশান্ত মৃত্যুরহস্যের তদন্তে বিহার পুলিশ শনিবার সকাল থেকেই তৎপর। আজ বয়ান রেকর্ড করা হয় পরিচালক রুমি জাফরির। রিয়ার এবং সুশান্তকে একসঙ্গে নিয়ে একটি ছবি পরিচালনা করার কথা ছিল রুমির। যে চিকিৎসকেরা সুশান্তের ময়নাতদন্ত করেছিলেন আজ তাঁদেরও জেরা করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment