রোনালদোর গোলে সেমিতে রিয়াল
সংবাদ বাংলা: আগের দিন রোমে জন্ম হয় ঘুরে দাঁড়ানোর অসাধারণ এক গল্পের। তার আমেজ কাটতে না কাটতেই ফিরে আসার গল্পে আরেকটি অধ্যায় যোগ করার আশা জাগিয়েছিল ইউভেন্তুস। তবে যোগ করা সময়ের শেষ দিকে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর গোলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে উঠেছে রিয়াল মাদ্রিদ। শেষ আটের ফিরতি লেগে বুধবার দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দেওয়া ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নেওয়ার পথে ছিল। নির্ধারিত সময়ে ৩-০ গোলে এগিয়ে ছিল মাস্সিমিলিয়ানো আলেগ্রির শিষ্যরা। তবে যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে শেষ চারের টিকেট পাইয়ে দেন রোনালদো। ইউরোপ সেরার টুর্নামেন্টে এনিয়ে টানা ১১ ম্যাচে গোল করলেন পর্তুগিজ এই ফরোয়ার্ড।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে ৩-১ গোলে জেতে ইউভেন্তুস। কিন্তু দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলের অগ্রগামিতায় পরের ধাপে এগিয়ে যায় জিনেদিন জিদানের দল। আগের রাতে ঘুরে দাঁড়ানোর অবিশ্বাস্য কীর্তি গড়ে রোমা। নতুন ইতিহাস জন্ম দেওয়ার স্বপ্নে মাঠে নামা ইতালির আরেক দল ইউভেন্তুসও শুরুটা করে দারুণ। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে প্রথম আক্রমণেই এগিয়ে যায় তারা। সামি খেদিরার ক্রস পেয়ে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন মারিও মানজুকিচ।
ছয় মিনিট পর দ্বিতীয় গোল খেতে বসেছিল রিয়াল। হেসুস ভালেহো ও রাফায়েল ভারানের বোঝাপড়ার ভুলের সুযোগে দগলাস কস্তার নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন কেইলর নাভাস। আলগা বল পেয়ে গনসালো হিগুয়াইনের পাল্টা শট কোস্টা রিকার গোলরক্ষকের পায়ে বাধা পায়।
শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে গুছিয়ে ওঠা স্বাগতিকরা দশম মিনিটে প্রথম সুযোগ তৈরি করে। তবে গ্যারেথ বেলের ব্যাকহিল অল্পের জন্য লাগে পাশের জালে। তিন মিনিট পর দুরূহ কোণ থেকে জালে বল পাঠান ইসকো; কিন্তু অফসাইডের বাঁশি বাজে। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠা লড়াইয়ে ৩৭তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মানজুকিচ। এটা যেন আগের গোলেরই একটা পুনরাবৃত্তি। এবার সুইস ডিফেন্ডার স্টেফান লিশ্টস্টাইনারের ক্রসে হেডে বল জালে পাঠান ক্রোয়েশিয়ার এই ফরোয়ার্ড। দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন ৩-২; রোমাঞ্চকর গল্পে নতুন মোড়।
৫৮তম মিনিটে রোনালদোর শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান জানলুইজি বুফ্ফন। পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণে হিগুয়াইনের শট একইভাবে ঝাঁপিয়ে ঠেকান কেইলর নাভাস। ৬০তম মিনিটে গোলরক্ষকের ভুলে তৃতীয় গোল হজম করে রিয়াল। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার কস্তার ক্রসে তেমন কোনো বিপদের হুমকি ছিল না। কিন্তু হাতে আসা বল ধরতে গিয়ে তালগোল পাকান নাভাস। হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়া বল গোলমুখে পেয়ে জালে ঠেলে দেন ফরাসি মিডফিল্ডার ব্লেইস মাতুইদি। দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন ৩-৩; কোণঠাসা টানা দুবারের চ্যাম্পিয়নরা। নখ কামড়ানো উত্তেজনার ম্যাচে দুই দল মিলে তিন মিনিটে দারুণ তিনটি সুযোগ তৈরি করে। ৭৬তম মিনিটে ডি-বক্সে দারুণ ট্যাকলে খেদিরাকে রুখে দেন তরুণ ডিফেন্ডার ভালেহো। পরের মিনিটে ইসকোর শট ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান বুফ্ফন। এরপর ভারানের প্রচেষ্টা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
শেষ দিকে একচেটিয়া আক্রমণ করে যাওয়া রিয়াল অবশেষে যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে পায় কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা। গোলমুখে ভাসকেসকে মরক্কোর ডিফেন্ডার বেনাতিয়া ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। মেজাজ হারিয়ে রেফারির সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন ইতালিয়ান গোলরক্ষক বুফ্ফন, দেখেন লাল কার্ড। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার ক্যারিয়ারের প্রথম!
অনেক ঘটনার পর স্পট কিক নেন রোনালদো, জোরালো শটে বের্নাবেউকে ভাসান উৎসবের আমেজে। তিন মিনিটের যোগ করা সময় শেষ হয় অষ্টম মিনিটে গিয়ে। এই নিয়ে ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতার চলতি আসরে রোনালদোর গোল হলো ১৫টি। টুর্নামেন্টে সব মিলিয়ে তার গোল ১২০টি। এই নিয়ে টানা আটবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে উঠলো রেকর্ড ১২ বারের শিরোপা জয়ী রিয়াল মাদ্রিদ। একই সঙ্গে ইউরোপ সেরার মঞ্চে গোল করার ধারাবাহিকতাও ধরে রাখলো তারা। এই নিয়ে টানা ২৫ ম্যাচে গোল করলো দলটি, এই সময়ে প্রতিপক্ষের জালে তারা বল পাঠিয়েছে ৬৫ বার!
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment