শিক্ষক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা অধ্যক্ষ কাজী ফারুকের ৭৫তম জন্মদিন
সংবাদ বাংলা: দেশের শিক্ষা ও শিক্ষক আন্দোলনের প্রবীণ নেতা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদের আজ ৭৫তম জন্মদিন। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটি, শিক্ষা আইন প্রণয়ন কমিটির সদস্য, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সহকারী সাধারণ সম্পাদক, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সর্বশেষ সভাপতি হিসেবে সংগঠনটির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন, কেন্দ্রীয় শিক্ষক সংগ্রাম লিয়াজোঁ কমিটি, বাংলাদেশ শিক্ষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি, জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের পেশাগত প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন এই প্রবীন শিক্ষক নেতা।
১৯৪৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি খুলনা জেলা শহরে অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খুলনা জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বি.এঅনার্স ও এম.এ, অধ্যয়ন করেন। ১৯৮৩ সালে ক্যানাডিয়ান টিচার্স ফেডারেশন এর জনএম থম্পসন্ ফেলো নির্বাচিত হন। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল ঢাকা মহানগরের শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজ, অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে যা তিনি দেশের প্রথম বেসরকারি পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজে উনীœত করেন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈতনিক কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।
তিনি ইনিশিয়েটিভ ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (আইএইচডি) এর চেয়ারপার্সন ও এডুকেশন ওয়াচ বাংলাদেশের সদস্য। তিনি ইংরেজি ও বাংলা জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রের নিয়মিত লেখক। তার উল্লেখ্যযোগ্য প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে শিক্ষকদের যা জানা দরকার, পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার, গুণগত শিক্ষার জন্য মান সম্পন্ন শিক্ষক, শিক্ষায় অর্থায়ন, ঞযড়ঁমযঃং ড়হ ঊফঁপধঃরড়হ, বাংলাদেশের শিক্ষা। তিনি ইউনেস্কো, ইউনিসেফ, গেøাবাল ক্যাম্পেইন ফর এডুকেশন, বিশ্ব ব্যাংক, বিশ্ব শিক্ষক কনফেডারেশন এর আমন্ত্রণে দেশ বিদেশে বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ গ্রহণ করেছেন।
অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদের বর্তমান ভিত্তিভূমি রচনা করেছে বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন। ১৯৫৮ আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের পর প্রেসিডেন্ট হয়েই শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য একটি কমিশন গঠন করেন ৩০ ডিসেম্বর ১৯৫৮ সালে। কমিশনের চেয়ারম্যান পশ্চিম পাকিস্তানের শিক্ষা বিভাগের সচিব ও আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইয়ুব খানের প্রাক্তন শিক্ষক এসএম শরীফ। ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট অন্তবর্তীকালীন প্রতিবেদন হিসেবে এ কমিশন সুপারিশ পেশ করে। রিপোর্টটি প্রকাশিত হয় ১৯৬২। ছাত্রসমাজ শরীফ কমিশনের শিক্ষা সঙ্কোচনমূলক গণবিরোধী প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে কর্মসূচী ঘোষণা করে। আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ঢাকা কলেজ থেকে। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কাজী ফারুক আহমেদ। তিনি তার বক্তৃতায় উপস্থিত ছাত্রদের এ কথা বোঝাতে সক্ষম হন যে, শিক্ষার আন্দোলন ও গণতন্ত্রের আন্দোলন এক সূত্রে গাথা। ১০ আগস্টের এ সভায় ১৫ আগস্ট ছাত্র ধর্মঘট সারাদেশে ছাত্রদের ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঢাকা কলেজ থেকে শুরু আন্দোলন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার পরিণতিতে ১৭ সেপ্টেম্বর হরতালের ডাক দেয়া হয়। ১৯৬২ শিক্ষা আন্দোলন আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের ভিত নাড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন ও ঊণসত্তরের গণ অভ্যুত্থান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্র রচনা করে।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment