সম্পর্কের টানাপোড়েনে ‘হাসিন দিলরুবা’
সংবাদ বাংলা: কুল কুল করে গঙ্গা বয়ে যাচ্ছে বাড়ির সামনে দিয়ে। ছবির মেজাজটাকে ধরাতে প্রথম থেকেই খেটে চলেছেন পরিচালক। মগজে ততক্ষণে আপনি প্রস্তুত থ্রিলার দেখার প্রত্যাশা নিয়ে। দুম করে স্ক্রিন জুড়ে বিস্ফোরণ! বিস্ফোরণের ধোঁয়া সরিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ ছবির প্রোটাগনিস্ট রানি ওরফে তাপসী পান্নুর। কান্না জড়ানো গলায় ডেকে চলেছে তাঁর স্বামী রিশু ওরফে বিক্রান্ত মাসে নাম। হঠাৎই ক্যামেরার চোখ মাটির দিকে, ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে রয়েছে হাতের কবজি। আর সেই কবজিতে লেখা রানি নামের ট্যাটু! আপনি ভাবলেন, এবার জমে যাবে খেলা। ছবির শুরুতেই যদি এমন চমক থাকে, তাহলে না জানি ছবি এগোলে কী ঘটবে। কিন্তু মুহূর্তে ভাঙবে ভুল! ছবি এগোতেই দেখবেন, থ্রিলার হঠাৎ করে পালটি মেরে কাঁচা সম্পর্কের গল্পে ডুব মেরেছে। আর তারপর থেকেই ধীরে ধীরে আপনার ইন্টারেস্ট গায়েব। সঙ্গে ‘হাসিন দিলরুবা’র প্লট দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে উঠবে। ব্যাপারটা আরেকটু খোলসা করে বলা যাক।
‘হাসিন দিলরুবা’ ছবিতে তিনটে মূল চরিত্র। রানি, রিশু আর নীল। রানি সুন্দরী, স্মার্ট। হাজারটা ছেলের সঙ্গে প্রেমের ছলনা করে শেষমেশ ভদ্র রিশুর গলায় মালা দিয়ে সুখের সংসার করতে চায়। তবে সংসারের কোনও কাজই তাঁর আসে না। ভদ্র রিশু প্রেমে অন্ধ হয়ে সেসব মেনে হয়। গোল বাঁধে বিছানায়! রানির মন জিততে গিয়ে রিশু, রানির যৌবনের আগুনে বাঁরুদ ঢালতে ভুলে যায়। ঠিক এই সময়ই দুপুর ঠাকুরপো হয়ে হাজির হয় রিশুর মাসতুতো ভাই নীল ওরফে হর্ষবর্ধন কাপুর। নীলের পেশিবহুল চেহারা দেখে থেকে তো একেবারে কুপোকাত রানি বউদি। ব্যস, টুক করে শরীরী প্রেম। তবে শরীর ভুলে রানি ভালবেসেও ফেলে নীলকে। পালানোর প্ল্যানও করে ফেলে। তবে কাহিনিতে টুইস্ট, দুম করে গায়েব নীল। রানির হাত থেকে স্বামীও গেল, ঠাকুরপোও গেল ফসকে! তবে রানি খাল কেটে কুমির আনল নিজেই। গোটা নীলের সঙ্গে প্রেম প্রেম খেলার কথা সোজা জানিয়ে দিল স্বামী রিশুকে। ব্যস, প্রতিবাদের আগুন। রাগের আগুনে ঝলসে গিয়ে প্রথমে বউকেই মেরে ফেলার প্ল্যান। তারপর সেই রাগ থেকেই পূর্বরাগ। আবার নতুন করে নীলকে ভুলে রিশুর সঙ্গেই ফের প্রেম রানির! এসব ভালই চলছিল, কিন্তু পরিচালক তো থ্রিলার বানাতে চেয়েছিলেন। সেকথা যেন পরিচালকের মনে পড়ে টুক করেই। আর তাই তো পুলিশকে টেনে বার বার রানির জিজ্ঞাসাবাদ আর গল্পকে এগিয়ে নিয়ে চলা। যাতে গল্প সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে সরে গিয়ে থ্রিলারে ফিরে আসে।
পরিচালক বিনিল ম্যাথু মোটামুটি এভাবেই হাসিন দিলরুবার গল্পকে সাজিয়েছেন। আর এই সাজানোতেই করেছেন গণ্ডগোল। গল্পতে থ্রিলারের পয়েন্টকে ভুলে, পরিচালক চিত্রনাট্য থেকে অসুখী দাম্পত্যকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আর তাই ছবির বিরতির পরই আপনি বুঝে যাবেন গোটা গল্পের আসল কালপ্রিট কে!
হাসিন দিলরুবার সবচেয়ে দুর্বল জায়গাই হল এই ছবির চিত্রনাট্য। কণিকা ধিলোঁর স্ক্রিপ্ট একেবারেই থ্রিলারের নিয়ম মেনে চলে না। যার ফলে ছবি একটু এগোতেই মেজাজ হারিয়ে ফেলে। এই ছবির সবচেয়ে স্ট্রং পয়েন্ট বিক্রান্ত মাসে ও তাপসী পান্নু। দুজনেই অসম্ভব ভাল তাঁদের জায়গায়। তবে তাঁদের খাটনি পুরোটাই বৃথা। হর্ষবর্ধন রানেকে ঠিকভাবে ব্যবহারই করতে পারলেন না পরিচালক। না হলে, নীল চরিত্রটিকে দিয়েই থ্রিলারের মেজাজ টিকিয়ে রাখা যেত।
এই ছবির কয়েকটি দৃশ্য মনে রাখার মতো এবং তা একেবারেই বিক্রান্ত মাসের জন্যই। বিক্রান্তের অভিব্যক্তিই ছবিকে অল্প হলেও থমথমে চেহারা দিয়েছে। শেষমেশ বলতে গেলে ‘হাসিন দিলরুবা’ ছবি একেবারেই মধ্যমানের একটি ছবি। ভাল উপাদান থাকলেও, পরিবেশন করতে গিয়েই গন্ডগোল ঘটিয়ে ফেলেছেন ছবির পরিচালক। এ ছবি কোনও দিক থেকেই থ্রিলারের রূপ নিতে পারেনি।
হাসিন দিলরুবা
পরিচালনা: বিনিল ম্যাথিউ
অভিনয়: তাপসী, বিক্রান্ত, হর্ষবর্ধন
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment