সিলেটে এমসি কলেজে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার
সংবাদ বাংলা: সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী। ছাত্রলীগের নয়জন কর্মী এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মামলার পর তাদের খুঁজতে নেমেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে টিলাগড় এলাকার কলেজটিতে। ওই তরুণীকে ক্যাম্পাস থেকে তুলে ছাত্রাবাসে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, ওই নববধূ তার স্বামীর সঙ্গে এমসি কলেজে ঘুরতে আসেন। এক পর্যায়ে তার স্বামী সিগারেট খাওয়ার জন্য কলেজের গেইটের বাইরে বের হন। এসময় ৬/৭ জন যুবক তরুণীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে নিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস এলাকায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে।
এসময় তার স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করা হয় বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। খবর পেয়ে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই তরুণীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করছে। পুলিশ দুর্বৃত্তদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা জ্যোতির্ময় সরকার। এদিকে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের এই ঘটনায় সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা ছাত্রলীগের কর্মী। এর মধ্যে সাইফুর রহমান নামে একজনের কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার ভোর রাতে ওই ছাত্রাবাসে সাইফুরের কক্ষ থেকে একটি পাইপগান, চারটি রামদা, একটি ছুরি ও দুটি লোহার পাইপ উদ্ধার করে বলে শাহপরাণ থানার ওসি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রাতে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত সাইফুর রহমানের কক্ষ থেকে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় অস্ত্র মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
সিলেট এমসি কলেজে ধর্ষণের অভিযোগে এদের আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া কলেজের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাছুম, অর্জুন, রাজন আহমদ এবং বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মী রবিউল এবং তারেক আহমদ এই ঘটনায় জড়িত বলে নাম এসেছে পুলিশের কাছে।
তাদের মধ্যে সাইফুর রহমানের গ্রামের বাড়ি বালাগঞ্জে, রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায়, মাহফুজুর রহমান মাছুমের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়, অর্জুনের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে, রনির বাড়ি হবিগঞ্জে এবং তারেক সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা।
শনিবার সকালে ধর্ষিত গৃহবধুর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন ওসি কাইয়ুম। তিনি বলেন, মামলায় ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তরুণী আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন হাসাপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি বলেন, গাইনি বিভাগের একজন অধ্যাপকের তত্ত্বাবধানে ওই গৃহবধূর চিকিৎসা চলছে। তিনি শারীরিকভাবে এখন অনেকটা সুস্থ।
বেড়াতে যাওয়া এক তরুণীকে তুলে নিয়ে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আগে থেকেই বন্ধ ছিল এই ছাত্রাবাস। বন্ধ ছাত্রাবাসে কীভাবে এমন একটি ঘটনা ঘটল, এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে শনিবার নতুন নির্দেশ দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ছাত্রাবাসের যেসব কক্ষে আবাসিক ছাত্ররা ছিলেন, সেসব কক্ষ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ‘বন্ধ’ ছাত্রাবাস আবার বন্ধের নির্দেশ এল।
দুপুরে ছাত্রাবাসে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ কক্ষ তালাবদ্ধ। এর মধ্যে কয়েকটি কক্ষ থেকে আবাসিক শিক্ষার্থীদের মালপত্র নিয়ে চলে যেতে দেখা গেছে।
শুক্রবার রাতে গণধর্ষণের ঘটনার পর যোগাযোগ করা হলে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কলেজের পাঠদান বন্ধ। এ জন্য ছাত্রাবাসও বন্ধ।’ সে ক্ষেত্রে বন্ধ ছাত্রাবাস আবার বন্ধ ঘোষণা করে ছাত্রদের তা ছাড়ার নির্দেশ কেন এবং ছাত্রাবাসে কারা ছিলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি শনিবার বলেন, ‘এসব নিয়ে একাডেমিক সভা ডাকা হয়েছে। এই সভার পর সার্বিক পরিস্থিতি জানানো হবে।
ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. জামাল উদ্দিন ছাত্রাবাস ছাড়ার নির্দেশের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, কলেজ বন্ধ, হোস্টেলও (ছাত্রাবাস) বন্ধ আছে। তবে কিছু শিক্ষার্থী টিউশনি করানোর জন্য ছাত্রাবাসে থাকছেন। তাঁদের ছাত্রাবাস ছাড়তে বলা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে টিলাগড় এলাকার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষের সামনে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া তরুণীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। করোনা পরিস্থিতিতে ছাত্রাবাস বন্ধ থাকলেও ছাত্রাবাসের ওই কক্ষ ২০১২ সাল থেকে ছাত্রলীগের দখল করা কক্ষ হিসেবে পরিচিত। এ ঘটনায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মোট নয়জনের নামে ওই তরুণীর স্বামী শাহপরান থানায় মামলা করেন। ঘটনার পর পুলিশ ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করে। ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে অস্ত্র মামলায়ও আসামি করা হয়েছে।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment