স্বাস্থ্যখাতের এই দুর্যোগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানিকগঞ্জে না মালয়েশিয়ায়?
সংবাদ বাংলা: ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। এখন পর্যন্ত মারা যাওয়ার সংখ্যা কমপক্ষে ৪১ জন। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে এডিস মশা বৃদ্ধির তুলনা করে আলোচনায় আসেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। কিন্তু, গত কয়েকদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কেউ বলছেন মন্ত্রী মানিকগঞ্জে বন্যাপীড়িতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছেন। যদিও সংবাদকর্মীরা ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে তাকে দেখছেন না।
তিনি মালয়েশিয়ায় গেছেন। আরো জানা গেলো, তিনি সরকারি কোনো কাজে যাননি। ঢাকা বিমানবন্দর সূত্র উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করেছে, গত ২৮ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সপরিবারে মালয়েশিয়ায় গেছেন। এমন দুর্যোগকালে তার মালয়েশিয়া যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই মুহূর্তে সমস্ত হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের ঠাঁই নেই। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী চলে গেলেন মালয়েশিয়ায়। তিনি চূড়ান্ত দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তার পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়ানোর এটি সময় নয়। এই সময় তাকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা। প্রতিদিন হাসপাতালগুলো মনিটর করার কথা। মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে কী না সেটি দেখার কথা। বেসরকারি হাসপাতালগুলো অতিরিক্ত বিল নিচ্ছে কী না সেটি চেক করার কথা। তিনি সেগুলো বাদ দিয়ে চলে গেলেন বিনোদন ভ্রমণে। আমি মনে করি, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। উনি এটি করতে পারেন না। একজন মন্ত্রী হিসেবে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। শপথের সময় তার অঙ্গীকার ছিলো দেশের প্রতি সঠিক সময়ে সঠিক দায়িত্ব পালন করার।
শুনলে অবাক হয়ে যাবেন- শুধু স্বাস্থ্যমন্ত্রীই নন, মন্ত্রণালয়ের আরো কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা বিদেশে রয়েছেন। আমি জানি কয়েকটি হাসপাতালের পরিচালকও বিদেশ রয়েছেন। মুগদা হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখেন সেখানকার পরিচালক ভিয়েতনামে রয়েছেন। আমি জানি না, এগুলো দেখার কেউ আছেন কী না। আমাদের দেশে দুর্ভাগ্য যে যতোক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী না দেখেন ততোক্ষণ পর্যন্ত কিছু হয় না।”
গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবের স্ত্রী ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছেন। আজ সকালে জানলাম, পুলিশের একজন এসআই মারা গেছেন। তার মানে ডেঙ্গুর বিস্তার ও ভয়াবহতা কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী বা এলাকায় নয়, এটি সবার মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আমাদের সচেতনতা তৈরি ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্যে দরকার ছিলো একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা। এর মূল দায়িত্ব নিতে পারেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অথবা স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। সেটিতো এখন হওয়ার নয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই নেই, তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার ধারণা তিনি জরুরি ভিত্তিতে হয়তো আজ-কালকের মধ্যে চলে আসবেন। যেহেতু এ নিয়ে সমালোচনা উঠেছে সেহেতু হয়তো দুই-একদিনের মধ্যে উনাকে পাওয়া যাবে। সরকার স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঈদের ছুটি বাতিল করেছে। তবে এরই মধ্যে সপরিবারে মালয়েশিয়া সফরে গেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সর্বত্র সমালোচনার মধ্যে আজ রাতেই দেশে ফিরছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক। সফর সংক্ষিপ্ত করে রাতে দেশে ফিরবেন তিনি। বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, মন্ত্রী আজ রাতে দেশে ফিরবেন। বৃহস্পতিবার দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ ব্রিফিং করবেন। সর্বশেষ ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ জানাতেই মন্ত্রীর এ সংবাদ ব্রিফিং। প্রসঙ্গত ডেঙ্গুর কারণে রাষ্ট্রীয় দুর্যোগে ব্যক্তিগত ভ্রমণে মালয়েশিয়ায় যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে ৪ আগস্ট দেশে ফেরার কথা ছিল। গত কয়েক দিন এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে। এ কারণে বুধবার রাতেই দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন মন্ত্রী। মন্ত্রীর এ সফর নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে খবর রয়েছে, সে প্রসঙ্গে বুধবার কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, কে দেশে কে বিদেশে তা বিষয় নয়, ডেঙ্গু মোকাবেলায় কাজ হচ্ছে কিনা সেটিই মুখ্য বিষয়। এ সময় রাষ্ট্রীয় এই দুর্যোগে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মালয়েশিয়া সফর নিয়ে কাদের বলেন, কারও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment