হোয়াইট হাউস কব্জায় থাকছে না ট্রাম্পের
অক্টোবর ২৪
০০:১৩
২০২০
সংবাদ বাংলা: ১৯৮৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সবগুলো নির্বাচনের ফল আগে থেকেই সফলভাবে বলে দিতে পেরেছেন অধ্যাপক লিখটম্যান। প্রায় বলতে হলো কারণ, ২০০০ সালে করা পূর্বাভাসটি সত্য হয়নি। অবশ্য সে নির্বাচনের ফলটি ব্যালট-বাক্স থেকে নয়, বরং সুপ্রিম কোর্ট থেকে এসেছিল। আল গোরকে পরাজয় মেনে নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছিল
শিরোনাম দেখে প্রশ্ন হতেই পারে—কে এই লিখটম্যান? আরও মনে হতে পারে, লিখটম্যান বললেই কি ট্রাম্প হেরে যাবেন? প্রথম প্রশ্নের উত্তর লিখটম্যান বা অধ্যাপক অ্যালান লিখটম্যান একজন ইতিহাসবিদ।। আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলার বদলে বলা যায়, জো বাইডেন শিবির তাঁর কথায় উজ্জীবিত হতেই পারে।
ইতিহাসবিদ মাত্রই অতীত নিয়ে আগ্রহ। অতীতের কোনো বিষয় নিয়ে যেকোনো ভালো ইতিহাসবিদ চোখ বুঁজে বলে দিতে পারবেন—এমনটাই ধারণা। কিন্তু অধ্যাপক অ্যালান লিখটম্যান একটু আলাদা। ওয়াশিংটন ডিসির আমেরিকান ইউনিভার্সিটির এই ইতিহাসের অধ্যাপকের মূল বিশেষত্ব ভবিষ্যৎ দেখতে পাওয়ায়। ১৯৮৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রতিটি মার্কিন নির্বাচনের ফল আগে থেকেই বলে দিয়েছেন তিনি। কোনো এদিক-ওদিক হয়নি।
গত নির্বাচনে সবগুলো সংবাদমাধ্যম ও নির্বাচন বিশ্লেষকেরা যেখানে হিলারি ক্লিনটনের সহজ জয় দেখতে পাচ্ছিলেন, সেখানে লিখটম্যান বলেছিলেন, নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জিততে যাচ্ছেন। স্রোতের বিপরীতে করা এই ভবিষ্যদ্বাণী যে সত্য হয়েছে, তা তো এখন আর না বললেও চলে।
অধ্যাপক অ্যালান লিখটম্যান এবার কী বলছেন, তা জানতে তাই অনেকেই কান পেতে আছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। একের পর এক জনমত জরিপের ফল প্রকাশিত হচ্ছে। প্রায় প্রতিটিতেই ভালো ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। তারপরও কেউ তেমন নিশ্চিত হতে পারছেন না। কারণ, গত নির্বাচন। ২০১৬ সালেও রাজনীতির ময়দানে একেবারে অনভিজ্ঞ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহজ পরাজয় দেখেছিল সংবাদমাধ্যমগুলো। বিভিন্ন জনমত জরিপের ফল তাদের এই দেখাকে সমর্থনও দিচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফল হয়েছিল উল্টো। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলের পূর্বাভাস করায় সবচেয়ে পরীক্ষিত লোকটির দিকে না তাকিয়ে উপায় কি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচন সামনে রেখে আর চুপ থাকতে পারেননি লিখটম্যান। তিনি তাঁর পূর্বাভাসটি জানিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, এবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস ছাড়তে হতে পারে। নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয় দেখছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন এই অধ্যাপক। লিখটম্যান সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ভিডিওটি এরই মধ্যে টুইটারে বেশ ছড়িয়ে পড়েছে।
১৩টি বিষয়ের ওপর করা প্রশ্নের উত্তরই আসলে বলে দেয়, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীই বিজয়ী হবেন, নাকি বিরোধী পক্ষের প্রার্থী বিজয়ী হবেন
কথা হলো অ্যালান লিখটম্যানের পূর্বাভাস সত্য হয় কী করে? কিসের ওপর ভিত্তি করে তিনি এই ভবিষ্যদ্বাণী করেন? অন্য সব জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞকে পাশ কাটিয়ে তাঁর অনুমান এতটা মিলে যায় কী করে? সে আলোচনায় যাওয়ার আগে পূর্বাভাস সম্পর্কে লিখটম্যান নিজে কী বলেন জানা যাক।
অধ্যাপক লিখটম্যান আল-জাজিরাকে বলেন, না কোনো জরিপ, না গুরুগম্ভীর বিশ্লেষণ, বক্তব্য বা বিতর্ক নয়, এমনকি বিজ্ঞাপন বা তহবিল সংগ্রহের মতো প্রচার সম্পর্কিত কৌশলী কোনো বিষয়াদিও নয়। এগুলোর কোনো কিছুই তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।
তাহলে গুরুত্বপূর্ণ কী? লিখটম্যান বলছেন, ক্ষমতাসীন সরকারের পারফরম্যান্সটাই গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ১৩টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, যাকে ‘থার্টিন কিজ’ বলা হচ্ছে। এই ১৩টি বিষয় সরাসরি ক্ষমতাসীন সরকারের পারফরম্যান্সের সঙ্গে যুক্ত। যেমন অর্থনীতি ঠিক আছে কিনা বা কোনো সামাজিক অস্থিরতা চলছে কিনা ইত্যাদি। এ ধরনের ১৩টি বিষয়ের ওপর করা প্রশ্নের উত্তরই আসলে বলে দেয়, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীই বিজয়ী হবেন, নাকি বিরোধী পক্ষের প্রার্থী বিজয়ী হবেন। এই ১৩টি বিষয়ের ওপর করা প্রশ্নের উত্তর শুধু ‘সত্য’ ও ‘মিথ্যা’-এর মাধ্যমে দিতে হয়। ছয় বা তার বেশি প্রশ্নের উত্তর যার পক্ষে যাবে নির্বাচনে তার জয়ের সম্ভাবনা তত বেশি। এ নিয়ে তাঁর একটি বইও রয়েছে, যার নাম—দ্য কিজ টু দ্য হোয়াইট হাউস।
আসন্ন নির্বাচনের পূর্বাভাস দিয়ে লিখটম্যান জানান, ‘আমার চূড়ান্ত অনুমান হচ্ছে ১৯৯২ সালের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প হতে যাচ্ছেন প্রথম মার্কিন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট, যিনি পুনর্নির্বাচিত হবেন না। ২০১৯ সালের শেষ পর্যন্ত তাঁর বেশ আশা ছিল। কিন্তু মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা ও চলমান সামাজিক অস্থিরতার কারণে তা উল্টে গেছে।’
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালেও অধ্যাপক লিখটম্যান আগে থেকেই অনুমান করেছিলেন যে, নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট এইচ ডব্লিউ বুশ জয় পাবেন না। বলার অপেক্ষা রাখে না, বুশ হেরে গিয়েছিলেন। আর ক্ষমতায় এসেছিলেন বিল ক্লিনটন।
১৯৮০ সালে অধ্যাপক লিখটম্যান প্রথম এই মডেল উপস্থাপন করেন, যার ভিত্তিতে ১৯৮৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সবগুলো নির্বাচনের ফল তিনি আগে থেকেই সফলভাবে বলে দিতে পেরেছেন। প্রায় বলতে হলো কারণ, ২০০০ সালে করা পূর্বাভাসটি সত্য হয়নি। অবশ্য সে নির্বাচনের ফলটি ব্যালট-বাক্স থেকে নয়, বরং সুপ্রিম কোর্ট থেকে এসেছিল। আল গোরকে পরাজয় মেনে নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছিল।
There are no comments at the moment, do you want to add one?
Write a comment